অস্বস্তি বাড়ল ডিএমকে-র। কংগ্রেসেরও।
এ রাজা-কানিমোজির পরে এ বার স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াল দয়ানিধি মারানের।
একটি সংবাদপত্রের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৬ সালে কেন্দ্রে টেলিকম মন্ত্রী থাকাকালীন মোবাইল পরিষেবা সংস্থা এয়ারসেল তথা তার প্রমোটার সংস্থা ম্যাক্সিসকে স্পেকট্রাম বণ্টনে সুবিধা করে দিয়েছিলেন করুণানিধির সম্পর্কিত নাতি দয়ানিধি। ওই প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে যে, মারান ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছিলেন। বড় কথা হল, মারান পরিবার যে সান টিভির মালিক, তাতে ম্যাক্সিসের বিনিয়োগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা
এই অভিযোগ আজ অস্বীকার করার
পাশাপাশি সংবাদপত্রটির দফতরে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন দয়ানিধি।
কিন্তু তাতে কী? মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভার আর এক সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ স্বাভাবিক ভাবেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। লখনউতে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আগে এই অভিযোগকে মূলধন করে ইউপিএ-র বিরুদ্ধে নতুন উদ্যমে আঘাত হানার কৌশল নিচ্ছে বিজেপি।
স্পেকট্রাম-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়ানোর পর আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করেন দয়ানিধি মারান। স্পেকট্রাম প্রসঙ্গেই দু’জনের মধ্যে কথা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কৌশলে গোটা বিষয়টি থেকে দূরত্ব রাখতে চাইছে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, “প্রশ্নটি দয়ানিধি মারানকে উদ্দেশ করে করা হচ্ছে। সুতরাং তিনিই এর ভাল জবাব দিতে পারবেন। তবে স্পেকট্রাম-সহ গত দশ বছরের টেলিকম নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে যৌথ সংসদীয় কমিটি। কোনও দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়ে থাকলে জেপিসি তদন্তেও তা বেরিয়ে
আসা উচিত। তাই আপাতত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই ভাল।”
কংগ্রেস যা-ই বলুক, মারান-বিতর্ককে অস্ত্র করেই সরকার তথা কংগ্রেসকে আক্রমণের কৌশল নিচ্ছে রক্তের স্বাদ পাওয়া বিজেপি। তবে এখনই মারানের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না তোলারই কৌশল নিয়েছে দল। বিজেপির দাবি, তাদের হাতে অনেক ‘প্রয়োজনীয় নথি’ রয়েছে। কিন্তু দলীয় নেতৃত্ব চাইছেন, বিষয়টি নিয়ে ধীরে এগোতে। তাদের মূল লক্ষ্য, মারানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে মূলধন করে মনমোহনকে নিশানা করা।
আর সেই কৌশলেই এই বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি দয়ানিধি মারানের উদ্দেশে চারটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ বলেন, “প্রথমত, দয়ানিধি মারান টেলিকম মন্ত্রী থাকার সময়েই কি তাঁদের পরিবার নিয়ন্ত্রিত ‘সান ডিটিএইচ ডিরেক্ট’ সংস্থায়বিনিয়োগ করেছে মালয়েশিয়ার ম্যাক্সিস কমিউনিকেশন সংস্থা? দুই, সেই ম্যাক্সিস কি তার অনুসারী গোষ্ঠীর মাধ্যমে এয়ারসেল টেলিকম সংস্থাতেও বিনিয়োগ করেছে? তিন, এয়ারসেলে বিনিয়োগ কি মারানের সংস্থায় বিনিয়োগের আগে হয়েছে? চার, টেলিকম মন্ত্রী থাকার সময় মারান যদি কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেন, তা হলে কি সেটি স্বার্থের সংঘাত (কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট) নয়?”
রবিশঙ্করের অভিযোগ, মারান টেলিকম মন্ত্রী হওয়ার আগে স্পেকট্রামের মূল্য নির্ধারণ করত মন্ত্রিগোষ্ঠী। তাঁর সময় থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই সিদ্ধান্ত নিতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা এখন কারাবন্দি। অথচ এই রাজাকেই সার্টিফিকেট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ! আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এখন আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। মারান যদি মন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে থাকেন, তা হলে দুর্নীতি রোধ আইনের আওতায় সেটিকে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে।
তা-ই প্রধানমন্ত্রী এ বারে জবাব দিন, তিনি কী অবস্থান নিচ্ছেন।”
তবে বিজেপি-র প্ররোচনায় পা দিতে নারাজ কংগ্রেস। বরং দলের শীর্ষ নেতৃত্বের স্পষ্ট অবস্থান, টেলিকম মন্ত্রকে সব রকম দুর্নীতি খতিয়ে দেখার কারণেই বিজেপি যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবিতে সংসদ অচল পর্যন্ত করেছিল। তাই এখন তাদের উচিত, জেপিসি তদন্তের ওপর ভরসা রাখা। কারণ ওই কমিটিতে তাদেরও প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। |