লোকপালে ঐকমত্যের চেষ্টা
রামদেবের অনশন ঠেকাতে অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

ন্না হাজারের সমর্থকদের ‘প্রায় সামলে নিয়েছেন’ কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু রামদেবকে ঠেকাতে পারবেন কি? বিদেশের ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার এবং দুর্নীতি দমনের প্রশ্নে ৪ জুন থেকে অনশন-সত্যাগ্রহের হুমকি দিয়েছেন রামদেব। সেটাই এখন নতুন মাথাব্যথার কারণ মনমোহন সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়স্বনামধন্য এই যোগগুরুকে বোঝাতে আজ সর্বশক্তি দিয়ে নেমে পড়েছেন সরকারের শীর্ষ নেতারা। লক্ষ্য একটাই, দুর্নীতি দমন ও কালো টাকা উদ্ধারের প্রশ্নে আশ্বস্ত করে রামদেবকে কোনও রকমে বিরত করা। খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এ দিন বলেন, “দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগের যে যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সে ব্যাপারে রামদেবের সঙ্গে আমরা একমত। এই দুর্নীতি মোকাবিলায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।” এ ব্যাপারে রামদেবের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনা, প্রণববাবু যোগগুরুর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। সরকার বা দলের নেতাদের তরফে সেই সম্ভাবনা উড়িয়েও দেওয়া হচ্ছে না।
সরকারের পক্ষে একটাই আশার কথা, লোকপাল বিল প্রশ্নে আজ কিছুটা হলেও সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন রামদেব। আন্না হাজারের সমর্থকরা যখন প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন, তখন রামদেব বলেছেন, এটা স্পর্শকাতর বিষয়। গণতন্ত্রে সাংবিধানিক উচ্চ পদে যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। 
রামদেবের ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি আন্না হাজারে সমর্থকদের কৌশল মোকাবিলায় নামেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। গতকাল সরকারের ‘প্রকৃত উদ্দেশ্য’ নিয়ে সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন আন্না সমর্থকরা। এমনকী লোকপাল বিল নিয়ে যৌথ খসড়া কমিটি ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিয়ে তাঁরা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ ও বিচারব্যবস্থার শীর্ষ স্তরকে লোকপালের আওতায় আনতে রাজি নয় সরকার। তা থেকেই লোকপাল বিল নিয়ে সরকারের সদিচ্ছার ব্যাপারে সংশয় তৈরি হচ্ছে।
আজ পাল্টা আগ্রাসী ভূমিকায় নেমে পি চিদম্বরম-কপিল সিব্বলরা বুঝিয়ে দেন, লোকপাল বিল নিয়ে নাগরিক সমাজের পাঁচ জন সদস্যের কথাই শেষ কথা হতে পারে না। বরং এ ব্যাপারে সর্বজনগ্রাহ্য অবস্থানে পৌঁছতেই আজ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে চিঠি লিখে মত জানতে চেয়েছেন যৌথ কমিটির চেয়ারম্যান তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ লোকপালের আওতায় রাখা হবে না এমনটা কখনও সরকার বলেনি। আবার এ-ও বলেনি রাখা হবে। বরং এই মতও রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখা হলে, তাঁর সম্পর্কে অভিযোগ তদন্তের আগে দেখে নিতে হবে তার আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না। শেষ পর্যন্ত কোন মতটি গৃহীত হবে, তা সর্বভারতীয় স্তরে রাজনৈতিক সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই স্থির হবে।
আন্না-সমর্থকদের নাম না করলেও চিদম্বরম বলেন, সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অপপ্রচার করা ঠিক হচ্ছে না। সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে লোকপাল বিল পেশ করতে সরকার বদ্ধপরিকর। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের আগ্রাসী অবস্থানের পর আজ কিছুটা নরম আন্না সমর্থকরা। যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল গতকাল কমিটি ভেঙে বেরনোর হুমকি দিয়েছিলেন, আজ তিনিই বলেন, এমনটা তাঁরা আর ভাবছেন না।
তবে রামদেবের অনশন-সত্যাগ্রহের হুমকি ইউপিএ সরকারের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাজনীতি বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনার পর সরকারের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, আন্না হাজারে অনশনে বসার পর ক্রমশ তাঁর সমর্থকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর রামদেবের অনুগামীর সংখ্যা গোটা দেশে এমনিতেই কম নয়। রামদেব অনশনে বসলেই তাঁরাও আন্দোলনে সামিল হয়ে যাবেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগও রিপোর্ট দিয়েছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্য থেকে রামদেবের সমর্থকরা দিল্লি আসার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ফলে রামদেব এক বার অনশনে বসলে হাজারের অনশনের থেকেও বড় বিপত্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সরকারের সামনে।
সেই কারণেই দু’সপ্তাহ আগে সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস-এর চেয়ারম্যান সুধীর চন্দ্রকে রামদেবের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কমলনাথ ও অর্থ মন্ত্রকের আরও দুই কর্তাকে রামদেবের কাছে সরকার এই বার্তা দিয়ে পাঠায় যে, কালো টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে সরকার সক্রিয়। দুর্নীতি দমনেও বদ্ধপরিকর। তার পরেও আজ রামদেব বলেন যে, তিনি এখনও অনশন সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার করেননি। তাঁর সঙ্গে সরকারের আলোচনা সদর্থক পথে এগোলে তবেই অনশন প্রত্যাহার নিয়ে ভাববেন তিনি। তবে চিদম্বরম ও কপিল সিব্বল আজ জানান, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রকের কর্তারা রামদেবের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন। কপিল এ-ও বলেন, “এখনও চার দিন বাকি রয়েছে। দেখুন, কী হয়?”

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এই যোগগুরুর আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি। দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ী রামদেবকে সমর্থন জানিয়ে আজ চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এমনকী উমা ভারতীকে এখনও দলে না ফেরালেও গঙ্গা দূষণ রোধে তাঁর অনশন আন্দোলনেও এ দিন গড়কড়ী সমর্থন জানিয়েছেন। তবে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের চিন্তা, শেষ পর্যন্ত রামদেব না তাঁর আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

First Page Desh Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.