মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়
বিশেষ নিরাপত্তা না নেওয়াতেই কি বাড়ছে ভোগান্তি, উঠছে প্রশ্ন
মজনতার ভোগান্তি এড়াতে নিজের জন্য বিশেষ পুলিশি নিরাপত্তা নিতে চাননি। বরং সাধারণ শহরবাসীর মতো ট্রাফিক সিগন্যাল মেনেই যাতায়াত করবেন, তাঁর যাতায়াতের পথ ‘মসৃণ’ করতে অন্য কারও গাড়ি আটকানো যাবে না, এমনটাই নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার খাতিরে তাঁর যাতায়াতের সময়ে কিছুক্ষণের জন্য রাস্তা আটকে দিতে বাধ্য হচ্ছে পুলিশ। ফলে ভুগছেন সেই আমজনতাই। অফিস-টাইমে এ ভাবে যান নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বাড়তি জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। বরং অনেকের বক্তব্য, এর চেয়ে মমতা যদি নিয়ম মাফিক পাইলট ও নিরাপত্তা নিয়ে যাতায়াত করতেন, তা হলে হয়তো পরিস্থিতি এমন হত না।
নেই নিরাপত্তা-বলয়। রাজপথে আর পাঁচটা গাড়ির সঙ্গেই ছুটছে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

মহাকরণে যাওয়ার জন্য সাধারণত বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বার হন মমতা। অফিস-টাইমে তখন বাস-ট্রাম-ট্যাক্সির তুমুল ভিড় হাজরা রোডে। মুখ্যমন্ত্রী হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাড়ি থেকে বেরোতেই হাজরা রোডের একাংশে অন্য বাস-গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। মমতার গাড়ি হাজরার দিকে গেলে, গোপালনগরের থেকে হাজরার দিকে যাওয়া যানবাহন কালীঘাট সেতুর মুখে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কালীঘাট সেতুর দিকে ঘুরলে, হাজরার থেকে গোপালনগরমুখী গাড়িগুলি আটকে দেওয়া হচ্ছে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মোড়ে। ছাড় পাচ্ছে না সংবাদমাধ্যমের গাড়িও। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি বেরিয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ আটকে রাখা হচ্ছে অন্য গাড়িগুলিকে। অফিস-টাইমে এতে বিপত্তি বাড়ছে নিত্যযাত্রীদের।
পুলিশের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বুলেটপ্রুফ গাড়িতে যাতায়াত করেন না। তাঁর স্যান্ট্রো গাড়ির আশপাশে পুলিশের ‘পাইলট’ বা ‘এসকর্ট’ গাড়িও থাকছে না। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য কোনও গাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে ধাক্কা মারতে পারে। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা। এ সব কারণেই এ ভাবে রাস্তা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে মহাকরণ যাওয়ার পথে ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে রেড রোডের সিগন্যালে উল্টো দিকের অর্থাৎ দক্ষিণমুখী গাড়িও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মমতা কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের এক অফিসারের কাছে জানতে চান, কী কারণে ওই সিগন্যাল বন্ধ করা রয়েছে। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, ওই অফিসার মুখ্যমন্ত্রীকে জানান খিদিরপুর রোড থেকে যে সব গাড়ি ডাফরিন রোড বা পার্ক স্ট্রিটের দিকে যাবে, সেগুলিকে নিরাপদে পার করাতে হলে রেড রোড থেকে দক্ষিণমুখী গাড়িগুলিকে সিগন্যালে আটকে রাখাই নিয়ম। নচেৎ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অফিসারের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণের দিকে ফের রওনা হন।
অন্য দিকে অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ‘প্রহরা’য় আটকে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের গাড়িও। ক’দিন আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে অথবা কালীঘাট সেতুতে ‘পার্ক’ করতে দেওয়া হত সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলি। এখন দু’জায়গার কোথাওই তাঁদের গাড়ি রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের সমান্তরাল একটি রাস্তায় (কালীঘাট পটুয়াপাড়া) গাড়ি রেখে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যাচ্ছেন সাংবাদিকেরা। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার পরেই পটুয়াপাড়ার লাগোয়া ওই রাস্তার দু’টি মুখে আড়াআড়ি ভাবে পুলিশের গাড়ি রেখে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি বেরোনোর পথ আটকানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লালবাজারের এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি থেকে বেরোলেই পিছনে গাড়ি, মোটরবাইকে বিপজ্জনক ভাবে ধাওয়া করছেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সে জন্যই সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলিকে কিছুক্ষণের জন্য আটকানো হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “দিন পাঁচেক আগে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি বেরোতেই সংবাদমাধ্যমের কয়েকটি মোটরবাইক ও গাড়ি প্রচণ্ড গতিতে তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করে। একটু এ দিক-ও দিক হলেই দুর্ঘটনা ঘটত।”

Previous Story Calcutta Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.