ভাবনায় ‘সংস্কৃতি-অঙ্গন’ও
‘লন্ডন’ মডেল গড়তে কাজ শুরু মমতার
লকাতাকে লন্ডন বানানোর প্রতিশ্রুতি তাঁর আগেই ছিল। এ বার সেই কাজের প্রস্তুতিতে নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মহাকরণে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ, রেল, নগরোন্নয়ন দফতর, মেট্রো রেল এবং কলকাতা পুরসভার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন। সেখানেই এ ব্যাপারে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি, কলকাতার অন্যতম সাংস্কৃতিক ঠিকানা নন্দন, রবীন্দ্র সদন, ও তার আশপাশে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, শিশির মঞ্চ ইত্যাদিকে এক ছাদের তলায় এনে একটি ‘সংস্কৃতি অঙ্গন’ গড়ার কথাও ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব জহর সরকারের সঙ্গে তাঁর এক দফা কথা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মহাকরণ থেকে ফেরার পথে মমতা রবীন্দ্র সদন থেকে শিশির মঞ্চ পর্যন্ত ঘুরে দেখেন। তথ্যকেন্দ্রের প্রদর্শনী কক্ষ এবং নন্দন ১ ও ২-এর সিলিং, এসি প্রভৃতি দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেন। পিছনের পুকুরটিও সংস্কার করতে বলেন মেয়রকে। মুখ্যমন্ত্রী যখন যান, নাট্য অ্যাকাডেমিতে তখন রিহার্সাল চলছিল। সেখানেও একটু উঁকি মারেন তিনি। এর পর রবীন্দ্র সদন। ভিতরে অনুষ্ঠান চলছিল বলে বাইরে ঘুরে চারপাশের অবস্থা দেখে ফিরে যান মমতা।
এলেম নতুন দেশে। ছবি: দেবাশিস রায়

এ দিন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলকাতা কেন লন্ডনের ‘থিম’-এ হবে না। ওখানে টেমস নদী আছে আমাদেরও গঙ্গা আছে। সেই নিয়ে ওই কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘রাইটস’ এই কাজের অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছে। আজ তারা আমাদের প্রাথমিক একটি রূপরেখা দেখিয়েছে। তাতে আমরা কিছু পরিবর্তন করতে বলেছি। আগামী ৩০ জুন ওই কমিটি ফের বৈঠকে বসবে।” বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “এই কাজের জন্য গঙ্গার ধারকে বেছে নেওয়া হয়েছে।”
মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় গঙ্গার ধারকে সাজাতে দৈঘাট থেকে কাশী মিত্র ঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার জুড়ে এই কাজ হবে। এর জন্য আপাতত ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। এই কাজে পরামর্শ দিচ্ছে রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক সার্ভিসেস (রাইটস)। টাকার জোগান দেবে রেল, মেট্রো রেল ও কলকাতা বন্দর। কেএমডিএ হবে এর নোডাল এজেন্সি । এই কাজ করা হবে লন্ডনের টেমস নদী বা মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভের ধাঁচে।
সৌন্দর্যায়নের মধ্যে কী কী থাকবে তারও একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল:
l ফেরি সার্ভিস ঢেলে সাজা হবে।
l গঙ্গায় জলক্রীড়ার ব্যবস্থা হবে।
l লঞ্চের ব্যবস্থা হবে।
l পাঁচ একর জমিতে গড়ে উঠবে ‘লন্ডন আই’-এর ধাঁচে ‘কলকাতা আই’। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এটি বেসরকারি কোনও সংস্থাকে দিয়ে তৈরি করা হবে।
l কলকাতা বন্দর একটি উঁচু টাওয়ার তৈরি করবে। এটি মূলত বাণিজ্যিক কাজে লাগানো হবে।
l প্রিন্সেপ ঘাট থেকে গঙ্গার পাড় ধরে নিচু দিয়ে হাওড়া সেতু পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হবে। চলাচলের জন্য এই রাস্তা মানুষ ব্যবহার করতে পারবেন।
ওই বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এই কাজ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। শেষ করতে হবে এক বছরের মধ্যে। এই কাজের জন্য গঙ্গার ধারের চক্ররেলকে মাটি থেকে উঁচুতে তুলে দেওয়া হবে। প্রতিশ্রুতি মেনেই যে এই কাজ করা হচ্ছে তা জানাতে গিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “এটা আমরা ইস্তাহারে বলেছিলাম। সেই মতো কাজ করতে চাইছি।” তবে এই কাজের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা বাবুঘাটের বাস টার্মিনাস।
কলকাতার যানজট কমাতে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, টালা পার্ক থেকে বিটি রোড পর্যন্ত একটি উড়ালপুল। সিঁথি থেকে ডানলপ পর্যন্ত একটি আন্ডারপাস। ইতিমধ্যে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে এই বিষয়টি দেখতে বলেছেন তিনি। টালিগঞ্জ ফাঁড়ি, জেমস লং সরণি এবং শেক্সপিয়র সরণি এলাকায় যানজট কমাতে ব্যবস্থা নিতেও তিনি বলেছেন। দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, এখনই এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে অনুযায়ী বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, এই কাজগুলি করবে কেএমডিএ।
এত দিন এই কাজ করত পূর্ত দফতর। মহাকরণের একটি সূত্র বলছে, কেন্দ্র থেকে পূর্ত দফতর কোনও অর্থ পায় না। কিন্তু কেএমডিএ কেন্দ্রীয় সাহায্য পেয়ে থাকে। সে দিক থেকে এই সংস্থার মাধ্যমে কাজ করা সহজ হবে।

First Page Calcutta Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.