দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ অক্টোবর ১৯৬২ থেকে ২০ নভেম্বর ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

রবিবার, ৪ কার্তিক, ১৩৬৯ (২৯ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, OCTOBER 21, 1962
• ভারতের উপর প্রচণ্ড হামলার সময়েও চীন-দরদীদের কপটতা: কলিকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া
পশ্চিমবঙ্গে কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা শ্রীজ্যোতি বসু এখনও বিশ্বাস করেন না চীন ভারতের উপর পরিকল্পিত হামলা চালাইয়া যাইতেছে। শনিবার ফ্রী স্কুল স্ট্রীটে এক ক্ষুদ্র নির্বাচনী সবায় (চৌরঙ্গী কেন্দ্রের উপনির্বাচন উপলক্ষে) শ্রীবসু বলেন, ১৮ হাজার ফুট উপরে কতকগুলি ঘটনা ঘটিতেছে, এখানে বসিয়া তাহার সব বিবরণ জানা যায় না, সতায্ ঘটনা বুঝা যায় না— শুধু মানুষকে উত্তেজিত করা চলে। বক্তব্য আরও খোলসা করিয়া বলিতে গিয়া কম্যুনিস্ট নেতা মন্তব্য করেন, আমাদের দেশে যেরকম দেশবাসীকে বলা হইয়াছে, দেশ আক্রান্ত, সকলের সজাগ থাকা প্রয়োজন— চীনেও ঠিক সেই সব কথাই বলা হইতেছে। শ্রীবসু বার্লিন প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সমস্যার মত ভরাত-চীন সীমান্ত বিরোধেও আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ মীমাংসা দাবি করেন। পরিস্থিতি গুরুতর বলিয়াও শ্রীবসু মনে করেন না। তাঁহার প্রশ্ন, সীমান্তের পরিস্থিতি যদি এতই গুরুতর হইবে, তবে এই উপনির্বাচন হইতেছে কি করিয়া? সর্বশেষে কংগ্রেসকে এই বলিয়া সতর্ক করিয়া দেন যে, ‘‘চৌরঙ্গীর উপনির্বাচনে নীতির কথা না বলিয়া চীনেপ প্রসঙ্গ উত্থাপন করিলে আমরা বলিব ওসব হাঙগামা টাঙ্গামা বাজে।’’

সোমবার, ৫ কার্তিক, ১৩৬৯ (৩০ আশ্বিন, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, OCTOBER 22, 1962
• কলিকাতায় তৈল শোধনাগার: চতুর্থ পরিকল্পনায় স্থাপনের প্রস্তাব বিবেচনাধীন
কেন্দ্রীয় খনি ও জ্বালানী দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী কে ডি মালবা এখানে এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, চতুর্থ পরিকল্পনাকালে কলিকাতায় একটি তৈল শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাব তাঁহার দপ্তরের বিশেশজ্ঞদের বিবেচনাধীন আছে। দক্ষিণ ভারতেও আর একটি তৈল শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করা হইতেছে এবং এই সম্পর্কে পশ্চিমের কয়েকটি দেশের সহিত আলোচনা চলিতেছে। শ্রীমালবা বলেন, সরকার তৃতীয় ওচতুর্থ পরিকল্পনাকালে কতগুলি শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করিতেছেন। তিনি জোর দিয়া বলেন, তৈল দেশেই পাওয়া যাউক অথবা বিদেস হইতে আনা হউক, দেশে আরও শোধনাগার স্থাপন করিতেই হইবে।

মঙ্গলবার, ৬ কার্তিক, ১৩৬৯ (১ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, OCTOBER 23, 1962
• কলিকাতায় আর একটি মেডিক্যাল কলেজ: সোমবার ইসলামিয়া হাসপাতাল কাউন্সিলের পক্ষ হইতে আহূত এক সাংবাদিক বৈঠকে উক্ত হাসপাতালের সম্প্রসারণ এবং উহার সহিত সংশ্লিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের সংকল্প ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ঐ হাসপাতালে ১৫টি শয্যা আছে। শয্যাসংখ্যা ছয়শত করার এক সিদ্ধান্ত কাউন্সিল করিয়াছেন এবং ইতিমঝ্যে কাজও শুরু হইয়াছে। হাসপাতালের শয্যসংখ্যা বাড়াইতে মোট ১৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হইবে। একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য আরও ৫০ লক্ষ টাকা লাগিবে। কাউন্সিল নিজের চেষ্টায় প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার সংকল্প করিয়াছেন। কাউন্সিলের মুখপাত্ররূপে খানবাহাদূর জি এ দোসানী, মিঞা মোল্লা জান এবং শ্রীকরম হোসেন এই মহান প্রচেষ্টায় জনসাধারণের সাহায্য ও সহানুভুতি প্রর্থনা করেন। তাঁহারা ঠিক করিয়াছেন যে, মহল্লায় মহল্লায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সভা করিয়া হাসপাতালের জন্য অর্থ সংগ্রহ অভিযান চালাইবেন। হাসপাতালের পিছনে ৫ বিঘার উপর বস্তীর জমি আছে। উহা ইতিমধ্যেই সরকার পক্ষ হইতে দখল করা হইয়াছে। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী স্থানাভাবে হাসপাতাল হইতে ফিরিয়া যায়। এইজন্যই হাসপাতালের সম্প্রসারণ একান্ত প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে বলিয়া তাঁহারা জানান। তাঁহারা বলেন, হাসপাতালের দ্বার সকল শ্রেণীর লোকের জন্যই উন্মুক্ত। প্রাক্তন শ্রম মন্ত্রী এবং ওয়াকফ কমিশনার শ্রীআবদুস সাত্তার সমাজসেবামূলক কাজে মুসলমানদিগকে নিষ্ঠা ও একাগ্রতা লইয়া আত্মনিয়োগ করার জন্য আবেদন জানান।

শুক্রবার, ৯ কার্তিক, ১৩৬৯ (৪ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, OCTOBER 26, 1962
• কলিকাতায় সর্বজনীন কালীপূজার সংখ্যা অন্যান্য বত্সরের তুলনায় হ্রাস: এবার কলিকাতায় সর্বজনীন কালীপূজৈর সংখ্যা পূর্ব বত্সরের তুলনায় কমিয়াছে। এ বত্সর শহরে ১১৬৫টি পূজা হইবে। পূর্ব বত্সর এই সংখ্যা ছিল ১১৯৫। পুলিশ কমিশনার শ্রীশচীন্দ্রমোহন ঘোষ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকগণকে ঐ তথ্য পরিবেশ করিয়া জানান যে, পূজার সময় রাস্তায় বাজি পোড়ানো যাইবে না। এবার বেআইনি ‘কলেরা পটাশ’ (পটাশিয়াম ক্লোরেট) ধরা পড়িয়াছে প্রায় ৯ মন। ইহাতে কয়েক লক্ষ বোমা তৈয়ারী করা যাইত। ইহা ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকা হইতে ১ মন ৫ সের নিষিদ্ধ বাজি এবং ৭২ মন ৬ সের অনুমোদিত বাজি আটক করা হয়। ইহাদের মূল্য অনুমান ৮০ হাজার টাকা হইবে। এই অভিযান কালে একটি স্টেন গান, ৫টি পিস্তল এবং ২টি রিভলভারও ধরা পড়ে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে গত এক সপ্তাহে ১৭০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার কালীপূজার দিন শহরে ৬ হাজার পুলিশ ও অফিসারকে মোতায়েন রাখা হইবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সর্বজনীন পূজামণ্ডপেও পর্যাপ্ত পাহারার ব্যবস্থা হইবে।

• মহানগরীতে পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা: পলতায় দীর্ঘকালের পুরানো ও একেবারে সেকেলে বাস্পচালিত চারটি ইঞ্জিন এবং বয়লারগুলি এদূর ভবিষ্যতে বিকল হইয়া যাইতে পারে। এবং ইহার দরুণ সমগ্র মহানগরীতে পরিস্রুত পানীয় জন সরবরাহ বন্ধ হইবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। নিকৃষ্ট ধরণের কয়লার দ্বারা ঐ ইঞ্জিনগুলি চালানোর ফলেই এই গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে। রাজ্য সরকার কর্তৃক নিরুক্ত তালুকদার কমিটির রিপোর্টে ঐরূপ মন্তব্য করা হইয়াছে। কলিকাতা কর্পোরেশনের অবস্থা সম্পর্কে তদন্তের জন্য শ্রী জে এন তালুকদারের সভাপতিত্বে যে কমিটি গঠিত হইয়াছিল, রাজ্য সরকার সেই কমিটির রিপোর্ট পুরাপুরিভাবে গ্রহণ করিয়েছেন। রাজ্য সরকার উক্ত কমিটির রিপোর্ট কর্পোরেশনের বিবেচনা এবং ব্যবস্থাবলম্বনের জন্য কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাইয়া দিতেছেন। এ সম্পর্কে এক মাসের মধ্যে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের মতামত রাজ্য সরকারের নিকট পেস করিবার জন্য নির্দেস দেওয়া হইয়াছে। তালুকদার কমিটির সুপারিশসমূহ এবং কর্পোরেশন সক্রান্ত বিষয়গুলি বাস্তবে রূপান্তরিত করিবার ব্যাপারে পাঁচজন মন্ত্রীকে লইয়া মন্ত্রীসভার একটি সাব কমিটি নিরুক্ত করা হইয়াছে। ঐ পাঁচজন মন্ত্রী হইতেছেন স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী শ্রীশৈলেনকুমার মুখার্জি, অর্থমন্ত্রী শ্রীশঙ্করদাস ব্যানার্জি, শ্রমমন্তরী শ্রীবিজয় সিং নাহার, আইনমন্ত্রী শ্রীঈশ্বরদাস জালান এবং স্বরাষ্ট্র (প্রচার) মন্ত্রী শ্রীজগন্নাথ কোলে। কমিটি ঐ রিপোর্টে এইরূপ সুপারিশ করিয়াছেন যে, প্রসাশনিক এবং নীতিনির্ধারক কার্যকলাপ যতদূর সম্ভব পৃথক করিতে হইবে। ইহার জন্য প্রয়োজন হইলে আইনবলে কলিকাতা পৌরআইনও সংশোধন করা যাইতে পারে। জল সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কমিটি ১৪ দফা সুপারিশ করিয়েছেন। তন্মধ্যে এইগুলি প্রধান, ১) পলতা পাম্পিং স্টেশনের স্টীম প্ল্যাটগুলির মেরামত একান্ত প্রয়োজন, ২) পলতায় সেটলিং এবং প্রি-সেটলিং ট্যাঙ্কগুলিতে জমা পলিমাটি অবিলম্বে অপসারণ করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে, ৩) বিভিন্ন গৃহ হইতে পরিস্রুত পানীয় জলের নমুনা সংগ্রহ করিয়া উহা পীরক্ষা করিতে হইবে।

• শিয়ালদহ ডিভিসনে বৈদ্যুতিকরণের কাজে মন্থরগতি: পূর্ব রেলওয়ের শিয়ালদহ ডিভিসনে বৈদ্যুতীকরণের কাজ এনেকটা অগ্রসর হইয়াছে। এই কাজ অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথমে ৬১ সাল পরে ৬২ সালে বৈদ্যুতিক ট্রেন চলিবে বলিয়া ঘোষণা করা হয়। এখন রেল কর্তৃপক্ষ আশা করেন, ১৯৬৩ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এই বিভাগে বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচল শুরু হইবে। বৈদ্যুতীকরণের কাজ পিছাইয়া যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসি এবং ‘বিমাতৃসুলভ মনোভাব’। অভিযোগে প্রকাশ, বিদেশ হইতে রেল বৈদ্যুতীকরণের প্রয়োজনীয় ‘সাজসরঞ্জাম’ আনিবার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশী মুদ্রা অনমোদনে বিহার এলাকায় বৈদ্যুতীকরণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতেছেন। শিয়ালদহ বিভাগবৈদ্যুতীকরণের সহিত সংশ্লিষ্ট জনৈক মুখপাত্র এক সাক্ষাত্কারে অভিযোগ করেন যে, ‘ডাক ও তার বিভাগের অসহযোগিতাও বৈদ্যুতীকরণের কাজে বাধা সৃষ্টি করিয়াছে। তাঁহার মতে রেল লাইনের পাশে যে টেলিগ্রাফের স্তম্ভ আছে তাহা অপসারণ করিয়া ভূগর্ভে তার বসানোর কাজে অযথা বিলম্ব হইতেছে। ইহা ছাড়া প্রয়োজনীয় তামার তার ও থাম পাওয়া যাইতেছে না। উক্ত মুখপাত্র এক প্রশ্নের জবাবে জানান যে, দমদম হইতে রানাঘাট ও দমদম হইতে বনগাঁ পর্যন্ত বৈদ্যুতীকরণের যাবতীয় কাজের শতকরা ৮০ ভাগ কাজ শাষ হইয়াছে। জাপানে ইতিমধ্যে শিয়ালদহ বিভাগের জন্য ২৮ খানা বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের অর্ডার দেওয়া হইয়াছে। ভূপাল ও পেরাম্বুরে কোচ নির্মান করা হইতেছে। আগামী এপ্রিল-মে মাসে ঐ ইঞ্জিন ভারতবর্ষে পৌঁছিবে বলিয়া আশা করা যায়।

রবিবার, ১১ কার্তিক, ১৩৬৯ (৬ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, OCTOBER 28, 1962
• কলিকাতা ও শহরতলিকে ১৮টি চীনা গুপ্তচর ঘাটি: চীনা দরদী কম্যুনিষ্ট কর্মীদের যোগাযোগ অকস্মাত্ বৃদ্ধি
কলিকাতা ও শহরতলিতে আঠারটি চীনা গুপ্তচর ঘাটি আছে বলিয়া পুলিশের এক গোপন রিপোর্টে প্রকাশ এই সকল ঘাটি গুলির সহিত কিছু কিছু চীনা দরদীকম্যুনিষ্ট কর্মীর যোগাযোগ অকস্মাত্ বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়া উক্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হইয়াছে। হাওড়া স্টেশন ও শিয়ালদহ স্টেশনে সৈন্যবাহিনীর যাতায়াতের প্রতি লক্ষ্য রাকাই নাকি এই সকল গুপ্তচর বাহিনীর অন্যতম কাজ বলিয়া প্রকাশ। বিদেশী একটি ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য বৈদ্শিক সূত্রে গত দুই বত্সর যাবত্ এই সকল গুপ্তচর ঘাটিগুলিকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হইয়া আসিতেছে। প্রকাশ যে, ট্যারা এবং টেরিটি বাজার, বহুবাজার ও বেন্টিক স্ট্রিট সংলগ্ন চীনা টাউনেই উপরোক্ত গুপ্তচর বাহিনীর কার্যকলাপ খুব বেশী। এই বাহিনীর অঘীনে কয়েকটি মোটর এ জীপও আছে বলিয়া প্রকাশ। কলিকাতায় প্রায় ৩২ হাজার চীনা আছে, তন্মধ্যে অর্ঘেকরে কিছু বেশী কম্যুনিষ্টপন্থী এবং অবশিষ্ট চিয়াংপন্থী। গত দুই বত্সর যাবত্ একটি চীনা ব্যাঙ্ক এই রাজ্যের কোনও একটি রাজনৈতিক দল এবং চীনা গুপ্তচর বাহিনী পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে প্রচুর অর্থ প্রদান করে এবং তাহার উপযুক্ত হিসাব দাখিল করিতে না পারায় ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চীনা ব্যাঙ্কের বৈদেশিক লেনদেন ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করিয়া দেন বলিয়া প্রকাশ। এই রাজনৈতিক দলটিকে উপরোক্ত ব্যাঙ্কের অর্থ প্রদানের রহস্য ফাঁস হইয়া যাওয়ায় ঐ ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষ ‘ব্যবসা মন্দা’ পড়িয়াছে এই অজুহাতে গত আগস্ট মাসে বাছাই করিয়া ৩১ জন অকম্যনিষ্ট কর্মচারীকে কর্মচ্যুচ করেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) মন্ত্রী স্বর্গত কালীপদ মুখোপাধ্যায় এই ব্যাঙ্কের এবং কালিম্পং-এর চীনা ট্রেড এজেন্সির কার্যকলাপ স্বয়ং তদন্ত করিয়াছিলেন। এমন কি তেরজন পদস্থ চীনাকে ভারত হইতে বহিশ্কারের সুপারিশ সম্বলিত পুলিস রিপোর্টও তিনি পুরাপুরি সম৪থন করিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট উপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য প্রেরণ করিয়াছিলেন বলিয়া প্রকাশ। বর্তমানে উপরোক্ত ব্যাঙ্ক ও ট্রেড এজেন্সির কয়েকজন প্রাক্তন কর্মচারী নাকি এই সকল গুপ্তচর ঘাটিগুলি পরিচালনা করিতেছেন বলিয়া পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ আছে। গুপ্তচর বাহিনীর উপর কড়া নজর রাকা হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ।

• শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা ও দেওয়ালী উত্সব: শনিবার কলিকাতা ও শহরতলি অঞ্চলে শ্রীশ্রীশ্যামাপূজা ও দেওয়ালী উত্সব সম্পন্ন হয়। মাথার উপর চীনা হামলার খড়্গ। চাই উত্সব অনেকাংশে নিষ্প্রাণ, আলোকসজ্জা স্তিমিত। মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার মরণপণ সংগ্রামরত জওয়ানদের সাহায্যের জন্য মেতৃবৃন্দ যে আবেদন জানাইয়াছেন কলিকাতাবাসী তাহাতে সাড়া দিয়াছেন। শহরের ছোট বড় সর্বজনীন পূজামণ্ডপে রক্ষিত বাক্সে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। কোন কোন পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদিগকে পথচারীদের নিকট হইতে অর্থসংগ্রহ করিতে দেখা যায়। ইহা ছাড়া পূজার জন্য যে চাঁদা সংগৃহীত হইয়াছে, তাহার একাংশও অনেক পূজার উদ্যোক্তা এই উদ্দেশ্যে ব্যয় করিবেন। দূর্গাপূজার সময় হইতে কলিকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে শহরের মোড়ে মোড়ে যে বিশেষ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা হইয়াছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাহা বন্ধ রাখা হয়। এবার শহরে বাজি পোড়ানোর ধূমও কম। এবারও কলেজ স্কোয়ারের সর্বজনীন শ্যামাপূজা প্রতিমা দর্শণার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল। সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে স্বেচ্ছাসেবকগণ পুলিশের সহযোগিতায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন. বড় বড় কয়েকটি সর্বজনীন মণ্ডপে পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা থাকে।

• দেওয়ালীর রাতে কলিকাতায় বারটি অগ্নিকাণ্ড: শনিবার দেওয়ালীর রাতে কলিকাতা শহর এলাকায় ১২টি অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পাওয়া গিয়াছে। এইদিন ২০ জনের মত অগ্নিদগ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে ও পুলিশ নানা অভিযোগে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়াছে। অগ্নিকাণ্ড কোথাও বড়রকমের হয় নাই। অধিকাংশ স্থানেই বাজির আগুনের ফলে ইহার সূত্রপাত। দমকল বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াই আগুন নিভাইয়া ফেলে। এই অগ্নিকাণ্ডগুলি ঘটে দক্ষিণ কলিকাতার ৫টি স্থানে, উত্তর কলিকাতার ৪টি স্থানে, মধ্য কলিকাতার ১টি স্থানে ও হাওড়ার ২টি স্থানে।

• ২০ জন অগ্নিদগ্ধ: এইদিন শহর এলাকা হইতে প্রায় ২০ জন ব্যক্তিকে বাজির আগুনে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিত্সা করা হয়। আহতদের মধ্যে বিডন স্ট্রীট এলাকার গোপাল সাহার (৩৮) অবস্থা গুরুতর। তাহাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আর জি কর হাসপাতালে প্রেরণ করা হইয়াছে। এইদিন পুলিশ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।

সোমবার, ১২ কার্তিক, ১৩৬৯ (৭ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, OCTOBER 29, 1962
• কালী প্রতিমা নিরঞ্জন: রবিবার কলিকাতা-হাওড়ায় প্রায় দুই হাজারের অধিক কালী প্রতিমার নিরঞ্জন উত্সব সম্পন্ন হয়। এইদিন শহরের প্রায় ১৫টি স্থানে ছোট-খাট অগ্নিকাণ্ড ও প্রতিমা লইয়া শোভাযাত্রা করিবার সময় পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া নিরঞ্জন উত্সব শান্তিপঊর্ণ ভাবে প্রতিপালিত হইয়াছে। এইদিন বাজির আগুনে প্রায় একশত নরৃনারী অগ্নিদগ্ধ হয়। তাহাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাহারও অবস্থা গুরুতর নহে। সমাজবিরোধীকাজ ও বেআইনী বাজি ব্যবহারের অভিযোগে প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাজির আগুন লাগিয়া দক্ষিণ কলিকাতার ৪টি স্থানে, মধ্য কলকাতার ২টি স্থানে ও বারাকপুরের ২টি স্থানে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। দমকল বাহিনী গিয়া আগুন নেবায়। কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই। বৈদ্যুতিক তারে গোলযোগের পলে ৬টি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

বুধবার, ১৪ কার্তিক, ১৩৬৯ (৯ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, OCTOBER 31, 1962
• কলিকাতায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া: মঙ্গলবার সারাদিন কলিকাতা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। বিকালের দিকে ডায়মন্ডহারবার শহরের নিকট গঙ্গায় ঝড়ে পড়িয়া একটি নৌকা ডুবিয়া যায়। উহার ১৩ জন যাত্রীর মধ্যে ৩ জন ডুবিয়া গিয়াছে বলিয়া আশঙ্কা করা হইতেছে। বাকি সকলকে স্থানীয় লোক এবং পুলিশ উদ্ধার করে। কৈলো স্লেটের মত লেপাপোঁছা মেঘলা আকাশ অবিরাম বর্ষণ, সঙ্গে সঙ্গে জড়ো দমকা হাওয়া, এই ছিল কলিকাতার চেহারা। দৈনন্দিন নাগরিক জীবন এনেকাংশে বিঘ্নিত হয়। বিকালের দিকে একটু একটু করিয়া বৃষ্টি ছাড়ে। কিন্তু আকাশের গোমড়া ভাব কাটে না। এইদিন সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বারিপাতের পরিমাণ ৩.৫১ ইঞ্চি। সোমবার ৫০০ মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে যে ঝঞ্ঝাবাত্যা দেখা দেয়, তাহা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলিকাতার আরও নিকটে ১৭০ মাইলের মধ্যে আসিয়া পড়ে। ইহা উত্তর-পূর্ব অথবা পূর্ব-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে ইহা রাত্রে বরিশালের নিকট সুন্দরবন উপকূল অতিক্রম করিবে। বরাবর যেমন হয়, মঙ্গলবারও নগরীর নানা এলাকায় হাটুজল হাঁটুজল জমিয়াছে, ট্রাম চলাচলে বাধা পড়িয়াছে। অফিসযাত্রী ও পথচারীরা কষ্টে পড়িয়াছেন, হাঁটুজল ভাঙ্গিয়া বাড়ী ফিরিয়াছেন। কলিকাতা ও হাওড়ার দুই-একটি রুট ছাড়া সমস্ত রুটে ট্রাম চলাচল সকাল নয়টা হইতে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কতকগুলি রুটে বাস নির্দিষ্ট পথে চলিতে পারে নাই, অন্য পথে ঘুরাইয়া দেওয়া হয়।

শুক্রবার, ১৬ কার্তিক, ১৩৬৯ (১১ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, NOVEMBER 2, 1962
• ট্যাংরা ও ধাপা অঞ্চলে চীনারা গৃহে অন্তরীণ: কলিকাতার দশহাজার চীনাবাসিন্দার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণকল্পে নোটিশ জারি
রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্স জারীর সঙ্গে সঙ্গে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত্রে ধাপা এবং ট্যাংরা অঞ্চলে হাজার হাজার চীনা অধিবাসীদের নিজ নিজ গৃহ অভ্যন্তরে অন্তরীণ রাখা হয়। এবং এই দিন ঘভীর রাত্রি পর্যন্ত তাহাদের বাসগৃহে তল্যাসী চালানো হয়। রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্স জারীর সঙ্গে সঙ্গে কলিকাতা পুলিশ শহরের বাসিন্দা প্রায় দশহাজার চীনার উপর নোটিশ জারি করিয়াছেন। এই নোটিশ জারি করিয়া এখন হইতে চীনাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করা হইয়াছে। এই নোটিশে বলা হইয়াছে, এখন হইতে অনুমতিপত্র বাতিরেকে কোন চীনা কলিকাতার বাহিরে যাইতে পারিবেন না। বাড়ীর বাহিরে তাঁহারা ২৪ ঘণ্টার বেশী কোথাও কাটাইতে পারিবেন না। অনুমতি বাতীত তাঁহারা ঠিকানাও বদল করিতে পারিবেন না। শুধু চায়না টাউনই নয়, এইদিন রাত্রি একটার সময় ট্যাংরা অঞ্চলে চীনা পট্টিতে গিয়া দেখি প্রায় প্রতিটি মোড়ে এবং অলিতে গলিতে সশস্ত্র পুলিস দাঁড়াইয়া আছে। সমস্ত এলাকা ঘুরিয়া রাস্তার ধারে কাছে কোন চীনারই দর্শন পাইলাম না। ইতঃস্তত দুই একজন লোক চলাফেরা করিতেছে। ধাপা এলাকার একজন শাকসব্জি ব্যবসায়ী আমাকে বলেন যে, গতরাত্রি পর্যন্তও রাত্রি দুই তিনটা পর্যন্ত চীনাদের রাস্তায় দেখা গিয়াছে। আজ এমন হইল কেন বাবু? চারিদিকে একটা থমথমে ভাব। চীনাদের চামড়ার কারখানাগুলি গভীর রাত্রিতেও অনেক সময় চালু থাকে। কিন্তু তাও বন্ধ।

• কলিকাতার বস্তী: সি এম পি ও-র তথ্যমূলক প্রদর্শনী
কলিকাতার ২৯ লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে ৭ লক্ষ অধিবাসী বস্তীতে ১৭৪৯ একর পরিমিত জমিত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘিঞ্জির মধ্যে বাস করেন। বস্তী বহির্ভূত এলাকা হইতেছে ২২,৭০৯ একর এবং ঐ স্থানে বসবাস করেন প্রায় ২২ লক্ষ নাগরিক। কলিকাতার নাগরিকদের পরিবারগুলির গড়পড়তা মাসিক আয় ১০৭ টাকা এবং প্রতি লোকের গড়পড়তা মাসিক আয় ৩০ টাকার মত। বস্তীতে বাস করেন এইরূপ শতকরা ৫০ টি পরিবারের মাসিক আয় ৫১ টাকা হইতে ১০০ টাকার মধ্যে। শতকরা ৫০ টি পরিবার মাসে ৫০ টাকারও কম আয় করে। কলিকাতার বস্তী অধিবাসীরা গড়ে মাসিক ১১ টাকা করিয়া বাসা ভাড়া দেন। বৃহস্পতিবার কলিকাতা তথ্য সরবরাহ কেন্দ্রে সি এম পি ও কর্তৃক আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে এই সমীক্ষা তথ্য পাওয়া যায়। চারেট, চিত্রের মাধ্যমে এই তথ্য ও শিক্ষামূলক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হইয়াছে। ৩রা নভেম্বর পর্যন্ত উহা অপরাহ্ন ২টা হইতে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকিবে।

শনিবার, ১৭ কার্তিক, ১৩৬৯ (১২ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, NOVEMBER 3, 1962
• আজ মার্কিণ সমরোপকরণের প্রথম কিস্তি কলিকাতায় পৌঁছিবার সম্ভাবনা: ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক জে কে গলব্রেথ আজ অপরাহ্নে এখানে ঘোষণা করেন, চীনা আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতকে সাহায্য করার জন্য মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র শনিবার হইতে কলিকাতায় পৌঁছিতে সুরু করিবে। ভারতে দ্রুত সাহায্য প্রেরণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৮ খানি আধুনিকতম ও দ্রুততম জেট বিমানের ব্যবস্থা করিয়াছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহেরু যে সমস্ত অস্ত্রশস্ত্রের জন্য অনুরোধ জানাইয়াছেন এই বিমানগুলিতে ক্রমাগত তাহাই লইয়া আসা হইবে। এক সাংবাদিক বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন, কাহারও এরূপ ধারণা হওয়া উচিত নয় যে, “এই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্রে যাদু খেলিয়া যাইবে।” তিনি বলেন, পাছে জনসাধারণের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় তাহার জন্যই এই শতর্কবাণী উচ্চারণ করা হইতেছে। শ্রীগলব্রেথ বলেন, তুরস্ক পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবহারের উপযোগী কিছু বন্দুক দিতে চাহিয়াছে এবং এগুলি আনিবার জন্য মার্কিন বিমান পাওয়া যাইবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আইন অনুযায়ী অপর কোন দেশকে সামরিক সাহায্য দেওয়া হয়, সেই আইন অনুযায়ীই সেই সাহায্য ঠিক জায়গায় পৌঁছিল কিনা এবং যে উদ্দেশ্যে উহা আনা হইয়াছে সেই উদ্দেশ্যেই উহা ব্যবহৃত হইল কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাহার প্রতিও লক্ষ্য রাখিতে হইবে। অধ্যাপক গলব্রেথ বলেন, হালকা অস্ত্রশস্ত্র ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি আসিবে। এইসব সরঞ্জামের দাম টাকা. কিভাবে পরিশোধ করা হইবে শীঘ্রই ওয়াশিংটনে তাহার ভিত্তি স্থির করা হইবে। দীর্ঘমোয়াদী ঋণের ভিত্তিতেই ইহা পরিশোধিত হইবে।

রবিবার, ১৮ কার্তিক, ১৩৬৯ (১৩ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, NOVEMBER 4, 1962
• কলিকাতায় চীনা দূতাবাসের সম্মুখে বিক্ষোভ: আক্রমণকারী দেশের সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক অবসানের দাবি
চীন কর্তৃক ভারত আক্রমণের প্রতিবাদে শনিবার সন্ধায় বহুসংখ্যক নর-নারীর এক জনসভা লোয়ার সার্কুলার রোডে চীনা দূতাবাসের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সম্পর্কে অনুষ্ঠিত এক সভায় আক্রমণকারী দেশ চীনের সহিত কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটানোর দাবি জানানো হয়। প্রজা সোসালিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ঐ বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের মুখে “চীনা দস্যু ভারত ছাড়”, “কম্যুনিস্ট সম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক, ধ্বংস হোক”, “কম্যুনিস্ট চীনের সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন কর”, “রাতারাতি দেশভক্ত সাজল কারা?— ভারতের দেশদ্রোহী যারা” প্রভৃতি ধ্বনি উচ্চারিত হয়। এইদিন বিকালে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার হইতে ঐ মিছিলটি বাহির হয়।পুলিস লোয়ার সার্কুলার রোডে চীনা দূতাবাসের প্রায় একশত গজ দূরে বিক্ষোভকারীদের গতিরোধ করে। বাধাপ্রাপ্ত হইয়া বিক্ষোভকারীগণ অনেকে পথে বসিয়া পড়ে। সকলে কম্যুনিস্ট চীন এবং ভারতীয় কম্যুনিস্ট দলের বিরুদ্ধে নানারূপ ধ্বনি করিতে থাকে। পথে প্রায় ত্রিশ মিনিটকাল অবস্থানের পর বিক্ষোভকারীগণ শান্তিপূর্ণভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পথসভার বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রজা সোসালিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার চেয়ারম্যান শ্রীসুনীল দাস বলেন যে, চীনা আক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে ভারতের দুইটি শিবিরের সৃষ্টি হইয়াছে। ইহার একটিতে আছেন দেশপ্রেমিকগণ আর অপরটিতে আছে শত্রু এবং শত্রুর বন্ধুবর্গ। তৃতীয় কোন শিবির ভারতে নাই। শ্রী দাস কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা হইতে শ্রীকৃষ্ণ মেননের সম্পূর্ণ অপসারণের দাবি জানান। চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অবিলম্বে বিচ্ছিন্ন করার দাবিও তিনি জানান। কারণ হিসাবে তিনি বলেন যে, ভারতের চীনা দূতাবাসগুলির গুপ্তচরদের ঘাটিতে পরিণত হইয়াছে। কলিকাতায় যে সকল অস্ত্রশস্ত্র আসিতেছে তাহার সংবাদ এই দূতাবাসগুলির গুপ্তচরদের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে পিকিংয়ে প্রধানমন্ত্রী চু এন লাইয়ের নিকট পৌঁছিতেছে।

• সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট রবিবার কলিকাতায় আসিতেছেন: প্রজাতন্ত্রী সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট আর্চবিশপ ম্যাকারিওস আজ, রবিবার দ্বিপ্রহরে বিমানযোগে কলিকাতায় পৌঁছিতেছেন। তিনি রাজভবনে অবস্থান করিবেন। রবিবার তিনি জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীতে গিয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাইবেন। অপরাহ্নে তিনি যাদুঘর পরিদর্শণ করিবেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ হইতে এইদিন তাঁহাকে নৈশ ভোজসভায় আপ্যায়িত করা হইবে। সোমবার সকালে তিনি জাতীয় গ্রন্থাগার পরিদর্শনের পর বিমানযোগে মাদ্রাজ অভিমুখে যাত্রা করিবেন কথা আছে।

সোমবার, ১৯ কার্তিক, ১৩৬৯ (১৪ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, NOVEMBER 5, 1962
• ডিগবাজি!: পশ্চিমবঙ্গের কম্যুনিস্ট পার্টির নেতা শ্রীজ্যোতি বসু এম এল এ জনসাধারণের প্রবল ঘৃণা এবং ধিক্কারে অতিষ্ঠ হইয়া অবশেষে স্বীকার করিতে বাধ্য হইয়াছেন যে ভারত ভূমিতে “চীনা আক্রমণ” ঘটিয়াছে এবং “আমাদের দেশের একাংশ”—বেদখল হইয়াছে। রবিবার তিনি এই মর্মে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন এবং বিধান মণ্ডলীর “কম্যুনিস্ট ব্লকের” সদস্যগণের নিকট প্রধানমন্ত্রীর দেশরক্ষা তহবিলে সর্বক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া অর্থ সংগ্রহ করিবার ফতোয়া জারী করেন। শ্রীবসুর এই ডিগবাজি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে কৌতুকের সঞ্চার করিয়াছে, কেহ কেহ এমন কথাও বলিয়াছেন, “সেই তো মল খসালি তবে কেন....।” শ্রীবসুর বিবৃতি: চীনা আক্রমণ এবং আমাদের দেশের একাংশ বেদখল হইবার ফলে গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ জনগণের ঐক্য এবং আমাদের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করিয়া গড়িয়া তোলার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করিতে সমস্ত পার্টির নিকট আহ্বান জানাইয়াছেন। “কম্যুনিস্ট পার্টির রাজ্য পরিষদ এই ব্যাপারে এক ব্যাপক কর্মসূচি প্রস্তুত করিবেন। ইতিমধ্যে আমি বিধানমণ্ডলীর কম্যুনিস্ট ব্লকের সকল সদস্যের নিকট আবেদন করি তাঁহারা যেন সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করিয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা তহবিলে অর্থ সংগ্রহ করেন। আমি আশা করি জেলা পরিষদের সদস্যরা এই ব্যাপারে বিধানমণ্ডলীর সদস্যগণকে সাহায্য করিবেন এবং আমার নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করিবেন।”

মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক, ১৩৬৯ (১৫ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, NOVEMBER 6, 1962
• কলিকাতায় নিখিল বঙ্গ যুবছাত্র প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়া সম্প্রতি কলিকাতায় নিখিল বঙ্গ যুবছাত্র প্রতিরক্ষা কমিটি নামে একটি নূতন যুব সংস্থা গঠন করা হয়। এই রাজ্যের প্রায় সব কয়টি যুব ও ছাত্র সংস্থা এই কমিটির অন্তর্ভূক্ত হইয়াছে। কম্যুনিস্ট ছাত্র সংগঠন, ছাত্র ফেডারেশনকে ইহার সদস্য করা হয় নাই। এই সংস্থার জনৈক মুখপাত্র সোমবার এক বিবৃতিতে জানান যে, আগামী ১০ই নভেম্বর কম্যুনিস্ট চীনা দস্যুদের হটাইবার সংকল্প ও ১৭ই নভেম্বর জাতীয় প্রতিরক্ষা অর্থ সংগ্রহ দিবস পালন করা হইবে।
(১) সমাজবাদী যুবকসভা,
(২) ছাত্র পরিষদ,
(৩) স্টুডেন্ট ব্লক,
(৪) এস এস ও,
(৫) যুব কংগ্রেস,
(৬) যুব কাউন্সিল,
(৭) বিদ্যার্থী পরিষদ,
(৮) এন এস এফ,
(৯) একটি নেপালি সংস্থা ও
(১০) এ্যাংলো ইন্ডিয়ান যুব সংস্থা প্রভৃতি সংগঠনগুলি কমিটির অন্তর্ভূক্ত করা হইয়াছে।
সর্বশ্রী পরিমল ভট্টাচার্য সভাপতি, অরুণ মিত্র ও শ্যামল ভট্টাচার্যকে কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত করা হইয়াছে।

বুধবার, ২১ কার্তিক, ১৩৬৯ (১৬ কার্তিক, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, NOVEMBER 7, 1962
• চাউলের দরের উর্ধ্বগতি: কলিকাতা এবং মফস্বলে চাউলের দর বাড়িয়া চলিয়াছে। ইতিমধ্যে কলিকাতায় চাউলের পাইকারী দর মণপ্রতি পঁচাত্তর নয়া পয়সা হইতে এক টাকা বৃদ্ধি পাইয়াছে। মফস্বলের দর কলিকাতার তুলনায় অন্তত এক টাকা বেশী। খুচরা দর যে যেমন পারিতেছে খরিদ্দারের নিকট হইতে আদায় করিতেছে। মঙ্গলবার কলিকাতার বাজারে মোটা চাউল প্রতিমণ সাতাশ টাকা এবং মাঝারি ত্রিশ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হইয়াছে। সরু চাউল বত্রিশ হইতে তেত্রিশ টাকা মণ। জরুরী অবস্থায় চাউলের দর বাড়িয়া যাওয়ায় সকলেই উদ্বিগ্ন হইয়াছেন। কলিকাতা এবং হাওড়ার পাইকারী চাউল বিক্রেতারা আপাতত মফস্বল হইতে চাউল কেনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। উদ্দেশ্য কলিকাতা পাইকারী চাউল বিক্রেতা সমিতির সভাপতি শ্রীঊষাকান্ত দাসের মতে দরবৃদ্ধি প্রতিরোধ। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে চলতি সপ্তাহে চাউল ক্রয়ের প্রথম দিন গত সোমবার তাঁহারা মফস্বল হইতে চাউল কেনেন নাই। দরবৃদ্ধি বন্ধ না হইলে শুক্রবারও তাঁহারা চাউল কিনিবেন না। এ সম্পর্কে চাউল ও ধান্য ব্যবসায়ীদের এক প্রতিনিধি দল শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেনের সহিত সাক্ষাত্ করিবেন বলিয়া জানা যায়।

মঙ্গলবার, ২৭ কার্তিক ১৩৬৯ (২২ কার্তিক, ১৮৮৪ শক) TUESDAY, NOVEMBER 13, 1962
• উত্তর কলিকাতার কম্যুনিস্ট পার্টির অফিসে জনতার হানা আসবাব ও কাগজপত্র ভস্মীভূত: সোমবার বিক্ষুব্ধ জনতা কলিকাতার কম্যুনিস্ট পার্টির দুইটি অফিসে হানা দেয়। তাহারা অফিসের সমস্ত কাগজ, ফাইল এবং আসবাবপত্রে অগ্নিসংযোগ করে। উহাদের মধ্যে একটি অফিস কম্যুনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন ইউনিয়নের দপ্তর।
চীন কর্তৃক ভারত আক্রমণের ব্যাপারে কম্যুনিস্টদের ধোঁয়াটে নীতিতে বিক্ষুব্ধ হইয়াই জনতা এইরূপ করে বলিয়া প্রকাশ। ঐ অফিস দুইটির একটি ৬৬নং শোভাবাজার স্ট্রীট এবং অপরটি ২৪নং বৃন্দাবন বসাক স্ট্রীটে অবস্ছিত। উত্তেজিত জনতা নাকি ঐ অফিস দুইটি যে দুই ভবনে অবস্থিত সেখানে আরও অনেক ভাড়াটিয়া আছেন বলিয়া অফিসের সমস্ত নথীপত্র ও টেবিল, চেয়ার, আলমারী প্রভৃতি রাস্তায় নামাইয়া তাহাতে অগ্নিসংযোগ করে। প্রায় একই সময়ে দুই দল লোক দুইটি অফিসে হানা দেয়। পুলিশ জানায় ঘটনার কিছু পরে উভয় স্থানেই অবস্থা শান্তিপূর্ণ। রাত ১১টা পর্যন্ত ঐ ব্যাপারে কোন গ্রেপ্তার ছিল না। পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায় যে, অফিস দুইটিতে একজন করিয়া লোক ছিল। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, এক উত্তেজিত জনতা সন্ধ্যার কিছু পর কম্যুনিস্ট পার্টি ধ্বংস হোক, চীনের দালাল নিপাত যাক, পঞ্চমবাহিনীর উত্খাত চাই প্রভৃতি ধ্বনি দিতে দিতে প্রথমে ৬৬নং শোভাবাজার স্ট্রীটে কম্যুনিস্ট পার্টির সহিত সংশ্লিষ্ট একটি ইউনিয়ন অফিসে গিয়া উপস্থিত হয়। জনতা ঐ অফিসের কাগজপত্র রাস্তায় টানিয়া বাহির করে এবং উহাতে আগুন লাগায়। জনতার একাংশ নাকি ১২ নং বৃন্দাবন বসাক স্ট্রীটের কম্যুনিস্ট পার্টি অফিসে গিয়া হাজির হয়। সেখানেও তাহারা ঐ অফিসের কাগজপত্র ও আসবাবাদি রাস্তায় নামাইয়া উহাতে আগুন ধরায়। আগুনের সংবাদ পাইয়া দমকল ছুটিয়া যায়। অল্পক্ষণের মধ্যে ঐ আগুন নিভিয়া যায়।

বুধবার, ২৮ কার্তিক, ১৩৬৯ নভেম্বর ১৪, ১৯৬২ WEDNESDAY, NOVEMBER 14, 1962
• কম্যুনিস্টরা বার বার জাতীয় স্বার্থ বলি দিয়াছে: কলিকাতায় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা শ্রীহাদুলকারের মন্তব্য
কম্যুনিস্ট পার্টি ছাড়া আর সকলের সঙ্গেই ফরওয়ার্ড ব্লক জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য যুক্ত ফ্রন্ট গঠনে প্রস্তুত। কম্যুনিস্টরা অতীতে বারবার তাহাদের বৈদেশিক আনুগত্যের পায়ে জাতীয় স্বার্থ বলি দিয়াছে। আজ জাতীয় পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও তাহাদের সেই একই সুর। মঙ্গলবার কলিকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাব বিশ্লেশণকালে সাধারণ সম্পাদক ....কে শ্রীহাদুলকার উপরে ঘোষণা করেন ১০ই হইতে ১২ই নবেম্বর পর্যন্ত কলিকাতার কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভা হয়। শ্রীহেমন্তকুমার বসু এম-এল-এ ঐ সভার সভাপতিত্ব করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে ভারতের উপর চীনা আক্রমণের তীব্র নিন্দা করিয়া বলা হইয়াছে এই নগ্ন আক্রমণ মার্কসবাদ ও আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। আক্রমণকারী কম্যুনিস্ট চীন ভারতেরই মাটি সম্পূর্ণ ভাবে ছাড়িয়া না পাওয়া পর্যন্ত তাহাদের সহিত কোন আলাপ-আলোচনা না করিবার জন্য ভারত সরকারের নিকট ঐ প্রস্তাবে দাবি জানান হন। আরও গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা কমিটিগুলি গঠন, আজাদ হিন্দ ফৌজের লোকেদের সাহায্য নেওয়া, গণতান্ত্রিক বাহিনী গঠন প্রভৃতির জন্যও সরকারকে অনুরোধ করা হইয়াছে। সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের এক প্রতিনিধি দল ১৯শে নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর সহিত সাক্ষাত্ করিয়া জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁহাকে দলের বক্তব্য জানাইবেন। সাংবাদিক বৈঠকে এক প্রশ্নের উত্তরে শ্রীহাদুলকর জানান সরকারী উদ্যোগে গঠিত প্রতিরক্ষা কমিটিগুলিতে তাঁহারা কম্যুনিস্টদের নেওয়ার পক্ষপাতী নন।
দেশাত্ববোধক একাঙ্ক নাটিকা কলিকাতার বিভিন্ন পার্কে অভিনয়ের আয়োজন: কম্যুনিস্ট চীনের ভারত আক্রমণের বিরুদ্ধে জাতীয় চেতনা জাগাইয়া তুলিবার উদ্দেশ্যে কলিকাতার বিভিন্ন পার্কে দেশাত্ববোধক একাঙ্ক নাটিকা অভিনয়ের আয়োজন করা হইয়াছে। সপ্তাহে দুইদিন করিয়া বারটি নাটিকা অভিনীত হইবে। বুধবার কলিকাতা নাগরিক প্রতিরক্ষা কমিটির সভাপতি মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার জানান যে, অভিনেতৃ সঙ্ঘ ঐ একাঙ্ক নাটিকা অভিনয়ের ব্যবস্থা করিয়াছেন। অভিনেতৃ সঙ্ঘের পক্ষে শ্রীবিকাশ রায় বলেন যে, এই নাটিকা অভিনয়ের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বহু গায়ক-গায়িকা এবং সঙ্গীত পরিচালকের নিকট হইতে যাবতীয় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়াছে। তিনি আরও বলেন, আগামী শুক্রবার রাত্রি সাড়ে সাতটায় দেশপ্রিয় পার্কে প্রথম নাটিকা অভিনীত হইবে। ঐ নাটিকায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সর্বশ্রী বিকাশ রায়, পাহাড়ী সান্যাল, রাধামোহন ভট্টাচার্য এবং অভিনেতৃ সঙ্ঘের অভিনেত্রী শ্রীমতী সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নাটিকার যাবতীয় ব্যয় তাহারা নিজেরাই বহন করিবেন। প্রথম নাটিকার নাম ‘ডাক’— রচনা করিয়াছেন শ্রীপ্রণব রায়। শ্রীরবীন চ্যাটার্জি সঙ্গীত পরিচালনা করিবেন।

• মুখ্যমন্ত্রী সকাশে শ্রীজ্যোতি বসু:‘‘চীন-ভারত বিরোধ’’ সম্পর্কে কম্যুনিস্ট পার্টির নীতি বিশ্লেষণ
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শ্রীজ্যোতি বসু মঙ্গলবার সকালে রাইটার্স বিল্ডিং-এ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেনের সহিত সাক্ষাত্ করেন। শ্রী বসু মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সেনের নিকট ‘‘চীন-ভারত বিরোধ’’ সম্পর্কে কম্যুনিস্ট পার্টির নীতি বিশ্লেষণ করেন। সম্প্রতি কম্যুনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ শাখার কাউন্সিলের বৈঠকে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় শ্রী বসু তাহার একটি অনুলিপি তাঁহার হাতে দেন। প্রতিরক্ষা সাহায্য সংগ্রহের জন্য যে নাগরিক কমিটি গঠিত হইয়াছে, শ্রী বসু তাহাতে কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিত্ব গ্রহণের অনুরোধও জানান বলিয়া প্রকাশ। মুখ্যমন্ত্রী নাকি শ্রী বসুকে বলেন যে, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের লইয়া একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হইয়াছে উহাতে রাজনৈতিক দলের কথা বিবেচনা করা হয় নাই। কেন্দ্রে যে নাগরিক কমিটি গঠিত হইয়াছে, তাহাতে অনুরূপ কোন ব্যবস্থা না হইলে এখানকার রাজ্য কমিটিতে কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি গ্রহণের প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করিতে পারিবেন না— শ্রী সেন নাকি ইহা সুস্পষ্টভাবে জানাইয়া দেন। প্রকাশ, শ্রী বসু এই মর্মে অভিযোগ করেন যে, কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের উপর হামলা হইতেছে এবং এইভাবে তাঁহারা বিপন্ন বোধ করেন। এই ব্যাপারে তিনি সরকারী হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন। উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানান যে, কম্যুনিস্ট পার্টির বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সভ্যদের উপর আক্রমণ রাজ্য সরকার মোটেই সমর্তন করেন না। তিনি তাঁহাকে নাকি এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, যাহারা এই সব কাজ করিবে, সরকার তাহাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করিবেন। বিধানসভার কম্যুনিস্ট দলের চীফ হুইপ শ্রীগণেশ ঘোষও আলোচনাকালে উপস্থিত ছিলেন।

• শ্রীবসুর বিবৃতিতে শ্রীশাস্ত্রীর বিষ্ময়: শ্রী শাস্ত্রী আজ রাজ্যসভায় চীনা আক্রমণ সংক্রান্ত প্রস্তাবের চারিদিনব্যাপী বিতর্কের শেষে বলেন যে, শ্রীজ্যোতি বসুর একটি বিবৃতি সম্বন্ধে তেজপুরে তিনি যাহা বলিয়াছেন, সেই সম্পর্কে শ্রী বসু তাঁহার নিকট তাঁহার বক্তব্য লিখিয়া পাঠাইছেন। শ্রী বসুর বক্তব্য পড়িয়া তিনি মর্মাহত হইয়াছেন। পরে তিনি লক্ষ্য করিয়াছেন যে, শ্রী বসু নিজেই তাঁহার পূর্বের বিবৃতির বিরুদ্ধে কথা বলিয়াছেন। কিন্তু পরে এই বিবৃতিটিতেও এমন কিছু ইতরবিশেষ হয় নাই। ইহাতে শ্রী বসু বলিয়াছেনঃ আমরা বরাবরই সীমান্তের প্রতিরক্ষা তথা দেশের প্রতিরক্ষার কথা বলিয়া আসিয়াছি। শ্রী শাস্ত্রী ইহার পর শ্রী বসুর এই বিবৃতির অন্যান্য অংশ তুলিয়া ধরিয়া দেখান যে, ‘ভারত ও চীনকে একই পর্যায়ভুক্ত করা হইয়াছে।’

• জ্যোতি বসুর বিবৃতিতে শাস্ত্রীর বিষ্ময়: চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের কম্যুনিস্ট নেতা শ্রীজ্যোতি বসু যে বিবৃতি দিয়াছিলেন, আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীলালবাহাদুর শাস্ত্রী তাহার তীব্র সমালোচনা করেন। শ্রীজ্যোতি বসুর বিবৃতিতে বহু অংশ উদ্ধৃত করিয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন যে, এই বিবৃতিতে চীন ও ভারতকে একই পর্যায়ভুক্ত করা হইয়াছে। শ্রী বসু তাঁহার বিবৃতিতে বলিয়াছিলেনঃ আমাদের সরকারের এবং চীনা সরকারেরও বন্ধুস্থানীয় কোন সালিশের সাহায্য গ্রহণে সম্মত হওয়া কেন সম্ভর নয়? কেন উভয় সরকারই নিজের নিজের মত আঁকড়াইয়া থাকিবেন? — শ্রী শাস্ত্রী বিষ্ময়ে অবাক হইয়া যান যে, একজন ভারতীয়র পক্ষে এভাবে চিন্তা করা কি করিয়া সম্ভব হয়।

বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক, ১৩৬৯ নভেম্বব ১৫, ১৯৬২ THURSDAY, NOVEMBER 15, 1962
• আগামী দুর্গাপূজায় দুই দফা ছুটির সম্ভাবনা নাই: আগামী বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২৪শে, ২৫শে, ২৬শে এবং ২৭শে (রবিবার) অক্টোবর সরকারী ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। অর্থাত্ রাজ্য সরকার যথারীতি গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার নির্দেশ অনুযায়ীই পূজার ছুটি দিতে মনস্থির করিয়াছেন। আমার এক প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার সরকারী মুখপাত্র বলেন যে, ‘এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকাংশ অধিবাসীর ইচ্ছাই সরকার মানিয়া লইতে চান। কারণ দেকা গেছে যে, এখনও পূজার ব্যাপারে বেশীর ভাগ লোকই পুরাতনপন্থী। তাহারা পঞ্জিকারদের মতবিরোধ লইয়া মাথা ঘামাইতে চাহেন না।’ তিনি বলেন, এই বছর দুই একটি ছুটির দিন নূতন মতে ঘোষণা করিয়া মুশকিল হইয়াছিল। আগামী দুর্গাপূজা উপলক্ষে দুই দফায় ছুটির কোনই সম্ভাবনা নাই। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে আগামী বছর দুর্গাপূজা ২৫শে সেপ্টেম্বর (সপ্তমী)— ২৮শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ভারত সরকারও আগামীবার তাঁহাদের ‘দশেরা’র ছুটি ঘোষণা করিয়াছেন ২৬শে, ২৭শে, এবং ২৮শে সেপ্টেম্বর। পূজার ছুটি লইয়া পশ্চিমবঙ্গে কোন গন্ডগোলের সম্ভাবনা আছে কি না— এই প্রশ্নের উত্তরে উক্ত মুখপাত্র আরও বলেন, এইরূপ ছুটির ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসগুলি সাধারণত স্থানীয় নিয়মেই চলে। এবারও তাহার ব্যতিক্রম হইবে না বলিয়া আশা করা যায়।

রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ, ১৩৬৯ SUNDAY, NOVEMBER 18, 1962
• পরলোকে মনোরঞ্জন ঘোষ: পূর্বাঞ্চল চলচ্চিত্র-সংস্থার সভাপতির লোকান্তর
ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রীমনোরঞ্জন ঘোষ হৃদরোগে আক্রান্ত হইয়া শনিবার সকালে কলিকাতায় পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁহার প্রায় ৬৮ বছর হইয়াছিল। বিধবা স্ত্রী, এক পুত্র, এক কন্যা এবং আরও বহু আত্মীয়স্বজন তিনি রাখিয়া গিয়াছেন। ১৮৯৫ সনের ১৬ই জানুয়ারী ফরিদপুর জেলার মদনপুর গ্রামে শ্রীমনোরঞ্জন ঘোষের জন্ম। আদি নিবাস বিক্রমপুর (ঢাকা)। শিক্ষা ও কর্মজীবন কলিকাতায়। এম বি ও বি এল পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হইয়া তিনি ব্যবসায়ে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩২ সনে ‘রূপবাণী’ চিত্রগৃহ প্রতিষ্ঠা তাঁহার উল্লেখযোগ্য কীর্তি। পরে আরও দুইটি চিত্রগৃহ— ‘ভারতী’ ও ‘অরুনা’, প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তিনটি সিনেমার অন্যতম অংশীদার ছিলেন শ্রী ঘোষ। কলিকাতার চলচ্চিত্র শিল্প মহলে শ্রী ঘোষের জনপ্রিয়তা সুবিদিত। ১৯৬২ সনে তিনি ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।

সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৩৬৯ MONDAY, NOVEMBER 19, 1962
• দেশের নারী সমাজ বিরাট অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন: সারা পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সম্মেলনে কর্তব্যের নির্দেশ
রবিবার ক্যাথেড্রেল রোডে একাডেমী অব ফাইন আটর্স ভবনে চীন আক্রমণ প্রতিরোধে সারা পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লেডী রাণু মুখার্জি উহাতে সভানেত্রীত্ব করেন এবং উদ্বোধন করেন রাজ্যের কারা ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী শ্রীমতী পূরবী মুখার্জি। জাতির এই চরম সঙ্কটক্ষণে সর্বতোভাবে জাতীয় সরকার এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সাহায্য করার আহ্বান জানাইয়া শ্রীমতী মুখার্জি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কর্মী দরকার, অর্থ দরকার, সোনা দরকার। তিনি বলেন, একটা বিরাট অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখে তাঁহারা দাঁড়াইয়া আছেন। আজিকার দিনে তাঁহাদিগকে সঙ্কল্প লইতে হইবেঃ বিদেশী জিনিস ব্যবহার না করিয়া তাঁহারা সঞ্চিত মুদ্রায় অস্ত্র ক্রয়ে সাহায়্য করিবেন। কালোবাজারী কোন জিনিস তাঁহারা ব্যবহার করিবেন না। প্রতিরক্ষা ও স্বর্ণ বন্ড যে যত পারেন ক্রয় কতিবেন এই প্রতিজ্ঞাও তাঁহাদের করিতে হইবে। শ্রীমতী বাসন্তী দেবী সম্মেলনের অন্যতম আহ্বায়িকা। তিনি অসুস্থতাবশত সম্মেলনে যোগদান না করিতে পারিয়া এক আশীর্বাণী পাঠাইছেন। তিনি বলেনঃ ভারতের নারী কোনদিন ভীরুতা প্রকাশ করে নাই। যুদ্ধ প্রচেষ্টায় নারী সমাজ সেবাকে তাঁহাদের কার্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন শুনিয়াও তিনি খুশী হইয়াছেন এবং উহার সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন। সভানেত্রী লেডী রাণু মুখার্জি জাতীয় প্রতিরক্ষার কার্যে মহিলাদের গুরু দায়িত্বের কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া বলেন যে, জাতির সঙ্কটকালে সমগ্র দেশের অধিবাসীদের সহিত মহিলাদেরও কাজ করার সময় আসিয়াছে। তিনি কতকগুলি সঙ্কল্প বাক্য পাঠ করেন। সঙ্কল্পগুলি এইঃ জনসাধারণ এবং মনোবল রক্ষা, অপপ্রচার ও ভিত্তিহীন গুজব প্রচার এবং কালোবাজারী ও মুনাফাবাজারী বন্ধ করার ব্যপারে সাহায্য করিতে হইবে। জনসাধারণ যাহাতে প্রতিরক্ষা তহবিলে মুক্ত হস্তে সাহায্য করিতে পারে তাহার জন্য উদ্বুদ্ধ করিতে এবং সাংসারিক খরচ যথাসম্ভব সংযত করিয়া প্রতি মাসে এক দিনের সংসার খরচ ঐ তহবিলে দিতে উত্সাহিত করিতে হইবে।

• শ্রীজ্যোতি বসুর পদত্যাগ দাবি: তাঁহার নির্বাচন কেন্দ্রের জনগণের বিধানসভা অভিযান
কম্যুনিস্ট নেতা শ্রীজ্যোতি বসুর পদত্যাগের দাবিতে আগামী মঙ্গলবার তাঁহার নির্বাচনী কেন্দ্রের জনগণ বিধানসভা অভিযান করিবেন সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। দক্ষিণেশ্বর, বেলঘরিয়া ও বরাহনগরের নাগরিকবৃন্দ এইদিন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে সমবেত হইবেন ও সেখান হইতে মিছিল করিয়া বিধানসভা অভিমুখে রওয়ানা হইবেন। প্রস্তাবটি রবিবার দক্ষিণেশ্বরে এক জনসভায় গৃহীত হয়।

• বর্বর চীনা আক্রমণের বিরুদ্ধে মহিলা সভা: চীনা আক্রমণের বিরুদ্ধে জনমত ও মা বোনদের কর্তব্য নির্ধারণের জন্য ১৭ই নবেম্বর মধ্যাহ্নে মধ্য কলিকাতা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এক সভা আহ্বান করেন। এই সভায় সভানেতৃত্ব করেন শ্রীযুক্তা বিভাবতী ঘোষ। উদ্বোধনী ভাষণ প্রসঙ্গে শ্রীহাজারীলাল প্রামণিক দেশের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য জনসাধারণকে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকিবার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন যে, আমাদের সংগ্রাম শুধুমাত্র আক্রমণকারী চীনাদের বিরুদ্ধে নয়, দেশের আভ্যন্তরীণ মুনাফাখোর কালোবাজারী ও পঞ্চমবাহিনীর বিরুদ্ধেও। কারামন্ত্রী শ্রীমতী পূরবী মুখার্জি বলেন, মা বোনদের দেশ রক্ষার কাজে আগাইয়া আসিতে হইবে। দেশের প্রয়োজনে তাঁহারা যেন স্বর্ণালঙ্কার দান করেন বা স্বর্ণবন্ড ক্রয় করিয়া দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় করেন। শ্রীমতী শান্তি দাস বলেন যে, দেশের প্রত্যেকটি জননীকে রাণাপ্রতাপ ও শিবাজীর ন্যায় সন্তানের জননী হইতে হইবে ও মাতৃশক্তিকে দেশরক্ষায় নিয়োজিত করিতে হইবে। কাউন্সিলার শিবকুমার শর্মা বলেন যে, যে সকল পঞ্চমবাহিনী দেশের শত্রুদের সহায়তা করিবার অপচেষ্ঠা করিবে, জনসাধারণ যেন তাহাদের উপযুক্ত প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেন।


এ বারের বিশেষ সংযোজন:
প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ীর কিছু ব্যাঙ্গচিত্র

তির্যক
 
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.