ব্যস্ত ডাক্তার আর বিপন্ন রোগী। মাঝখানে তিতিবিরক্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কিংবা সুযোগসন্ধানী দালাল। এ ছাড়া আর কেউ নেই। রোগীর কোনও প্রশ্ন, কোনও সংশয় থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা মেটানোর কেউ থাকেন না। সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে এটাই চেনা ছবি। বিশেষত ক্যানসার রোগীদের পক্ষে এই ছবিটা খুবই মর্মান্তিক হয়ে ওঠে। হাসপাতালের কোন ভবনে কোন পরীক্ষার ব্যবস্থা, কোথায় রেডিওথেরাপির ঘর, কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী হতে পারে সে সম্পর্কে রোগী বা তাঁর পরিজনদের মনে হাজারো প্রশ্ন জাগলেও উত্তর দেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায় না। এই সমস্যার সমাধানেই এ বার সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার রোগীদের জন্য চালু হচ্ছে ‘রোগী সহায়তা কিয়স্ক’। প্রথম দফায় কলকাতার এসএসকেএম, আর জি কর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে।
কিয়স্কের পরিকল্পনা ব্রিটেনের ক্যানসার চিকিৎসক শঙ্খশুভ্র মিত্রের। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া প্যালিয়েটিভ কেয়ার নামে একটি সংস্থাও চালান শঙ্খশুভ্রবাবু। তিনিই স্বাস্থ্য দফতরে এই ধরনের পরিষেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, এমনিতেই সরকারি হাসপাতাল রোগীর ভিড়ে উপচে পড়ে। সেখানে রোগী পিছু খুব কম সময়ই বরাদ্দ করা সম্ভব। বহু ক্যানসার রোগীরই অসংখ্য প্রশ্ন থাকে। শুধু প্রশ্ন নয়, তাঁদের মনে রোগটা নিয়ে নানা শঙ্কাও থাকে। সেই অবস্থায় চিকিৎসার পাশাপাশি খানিকটা সহানুভূতি আর সাহস প্রয়োজন হয় তাঁদের। সময়ের অভাবে যা ডাক্তারদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। কিয়স্কের কর্মীরা সেটাই করবেন।
শঙ্খশুভ্রবাবু জানিয়েছেন, কিয়স্কের এই কর্মীরা হবেন চিকিৎসক ও রোগীর মাঝখানে একটি সেতুর মতো। কোন ওষুধ কখন খেতে হবে, কোথায় গেলে রক্ত পরীক্ষা হবে, কোন ঘরে ইসিজি হয় এই ধরনের তথ্য তো তাঁরা বুঝিয়ে দেবেনই, পাশাপাশি অন্তিম পর্যায়ের ক্যানসার রোগীদের বাড়িতেও যাবেন তাঁরা। ক্যানসারের উপশম চিকিৎসা সম্পর্কে পরিবারের লোকেদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেবেন ওই কর্মীরা।
এই কিয়স্ক গড়ার উদ্যোগ রোগীদের পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন ক্যানসার চিকিৎসকরাও। আর জি করের ক্যানসার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রোগীদের অনেক প্রশ্নের জবাব আমরা সময়াভাবে দিয়ে উঠতে পারি না। ওই প্রশিক্ষিত কর্মীরা সেটাই করবেন। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরেও যদি রোগীর কোনও সমস্যা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রেও ওই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্নের উত্তর পাবেন রোগীরা। এই সহানুভূতিটাই জরুরি।”
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, আউটডোরের অদূরে কিয়স্কের জন্য জায়গার ব্যবস্থা তাঁরা করবেন। কর্মী নিয়োগ এবং অন্যান্য দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। দফতর সূত্রে খবর, পরীক্ষামূলক ভাবে চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রকল্পটি শুরু হচ্ছে। পরে ধাপে ধাপে জেলাতেও এই পরিষেবার ব্যবস্থা করা হবে। |