এ প্রশ্নের শেষ নেই।
হত্যাকারী কে? উও কওন থি? হুডানিট?
আসছে সে আসছে... কে সে, কে?
শহরের রাস্তায় অতিকায় হোর্ডিং হলুদ চশমার উপরে জ্বলজ্বল করছে অবধারিত লাল হরফ ‘কে?’ রামগোপাল বর্মার ছবি নয়, ব্রাত্য বসুর নাটক।
সারা পৃথিবীর তাবৎ রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ হন্যে হয়ে যায় এই একটা শব্দকে ঘিরে। ওই একটি শব্দ যেন নিজের শরীরে ধরে রেখেছে রক্তের ফোঁটা, মাকড়সার জাল, নিকষ অন্ধকার, অশরীরী ছায়া, কুহকী ফিসফিস আর চাপা আর্তনাদ। সাসপেন্স মিউজিক। নিশীথের আকাশ চিরে ফিরে ফিরে আসে--- ও কে, ও কে, ও কে গো? এ মর্ত্যের যাবতীয় জিঘাংসার কুহেলি শেষ অঙ্ক পর্যন্ত ছুটে বেড়ায় সেই গুমনাম-এর তালাশে। কে সে, কে?
এই ‘কে’-র অদম্য টানেই বাঙালি চিরকাল থ্রিলার-মেনুতে ‘সবারে করি আহ্বান’-এর নীতি মেনে এসেছে। দেশ-বিদেশের শ্রেষ্ঠ থ্রিলার-সাহিত্যের পাশাপাশি রগরগে রঙিন মলাটের চটি সিরিজও গোগ্রাসে গিলেছে। অজস্র ভুল ধরিয়েও ফেলুদা কোনও দিন প্রখর রুদ্রর কাটতি কমাতে পারেনি। |
কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, বাংলা মঞ্চে থ্রিলারের সংখ্যা হাতে গোনা। পেশাদার মঞ্চ এবং গ্রুপ থিয়েটার, দু’জায়গাতেই ছবিটা মোটামুটি এক। ১৯৩৯ সালে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় যোগেশ চৌধুরীর মাকড়সার জাল খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু এক নিমেষে মনে করতে হলে পেশাদার মঞ্চে ইতিহাস তৈরি করা নাটকের মধ্যে পৌরাণিক-ঐতিহাসিক কাহিনির যুগ শেষ হওয়ার পরে সামাজিক-পারিবারিক আখ্যানেরই রমরমা।
অথচ রহস্য-রোমাঞ্চের গল্প কিন্তু বাঁধা ছিল রেডিও নাটকের আসরে। কখনও পুরোদস্তুর নাটক, কখনও পাঠাভিনয়। সেই আকাশবাণীর যুগ থেকে শুরু করে এই এফএম জমানা পর্যন্ত বেতারে রহস্য গল্পের আকর্ষণ এতটুকু ম্লান হয়নি। এক সময় শনি-রবির দুপুর আর রাত মানেই ছিল রেডিও কানে দিয়ে রুদ্ধশ্বাস নাটক শোনা। কলকাতা ‘ক’-এর নিজস্ব প্রযোজনা আর বিবিধভারতীর বিজ্ঞাপনী নাটক, দুয়েরই জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। সেই ধারা আজও জারি নানা এফএম চ্যানেলের কল্যাণে।
গ্রুপ থিয়েটারের ক্ষেত্রে অবশ্য বরাবরই রাজনৈতিক নাটক এবং দেশি-বিদেশি ক্লাসিকের প্রাধান্য বেশি। উৎপল দত্তর ‘মেঘ’, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘টিকটিকি’ বা শৌভনিকের ‘ইঁদুরকল’ বাদ দিলে বাংলায় জনপ্রিয় থ্রিলার-নাটক চট করে মনে পড়ে না। মনোজ মিত্র ‘পাহাড়ী বিছে’ লিখেছেন, কিন্তু নিজের দলে অভিনয় করেননি। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কুহেলি’র মতো ছবিতে হাড় হিম করা অভিনয় করেছেন। কিন্তু মঞ্চে বিদেশি থ্রিলারের রূপান্তরে সে ভাবে হাত দেননি। বিভাস চক্রবর্তী নাট্যস্বপ্নকল্পের মঞ্চে বারবার ভূত আর গোয়েন্দা গল্পকে উৎসাহ দিয়েছেন। দূরদর্শনে ফেলুদার গল্প পরিচালনা করেছেন। সম্প্রতি একটি থ্রিলার গল্পও লিখেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিজে থ্রিলার-নাটক করেননি।
বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দারাই বা মঞ্চে তেমন এসেছেন কই? ব্রাত্য নিজে এর আগে ব্যোমকেশ নিয়ে নাটক করেছিলেন। ‘অপ্সরা থিয়েটারের মামলা’ মঞ্চস্থ করেছিল চার্বাক। ঠিক হোমস-কাহিনি না হলেও ‘২২১ বি বেকার স্ট্রিট’ নামে একটা নাটকে অল্প ক’টি শো করেছিলেন দেবশঙ্কর হালদার ও সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইদানীং সুরজিৎ ‘বিষ’ নামে একটি থ্রিলারে অভিনয় করছেন। আগাথা ক্রিস্টির গল্প নিয়েও একটি নাটক হচ্ছে শহরে।
তবু সামগ্রিক বিচারে সে আর ক’টাই বা! ব্রাত্যর অনুমান, থ্রিলার মূলত বিনোদনধর্মী বলে হয়তো সেটাকে অপেক্ষাকৃত লঘু বলে ভাবা হয়। “আমি কিন্তু মনে করি, থ্রিলারের মধ্য দিয়েও অনেক সিরিয়াস কথা বলা যেতে পারে।” আবার বিভাসবাবুর অনুমানে, জোরদার প্লট নির্মাণের এলেমের অভাবেই সম্ভবত মৌলিক থ্রিলার-নাটক বাংলায় সে ভাবে লিখে ওঠা যায়নি। “ইচ্ছে আছে, যদি আবার পরিচালনা করি, একটা কমেডি-থ্রিলার করব। স্ক্রিপ্ট করা আছে।”
কিন্তু নাটকের জন্যই তৈরি আদ্যন্ত নতুন গোয়েন্দা চরিত্র? সেটা উপহার দিচ্ছে কে?
‘কে’ আবার কে? আজ তার প্রথম অভিনয়।
মঞ্চে হাজির টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়দের ঢঙে জার্সি পরা এক ক্রিকেট-পাগল গোয়েন্দা। নাম, চটক চট্টরাজ। যিনি বিশ্বাস করেন, “আমি এলোমেলো ঘাঁটা নড়বড়ে ডিটেকটিভ হতে পারি। কিন্তু আমি প্রধানত একজন দার্শনিক। ব্যর্থ দার্শনিক, কিন্তু দার্শনিক।” মোট তিনটি নাটকের সিরিজ লেখার ইচ্ছে শিক্ষামন্ত্রীর। ‘কে’র পর আসবে ‘কী’ এবং ‘কেন’।
সে তো হল। কিন্তু হত্যাকারী কে?
ব্যোমকেশ বলত, পাঁচকড়ি দে।
ব্রাত্য বললেন, “আমিই সে।” |
দেশ জুড়ে তাঁর অগণিত ভক্ত। কিন্তু তিনি রণবীর কপূরের ফ্যান অমিতাভ বচ্চন অকপটেই জানালেন সে কথা। বলিউডের এই প্রবীণ অভিনেতার কথায়, “ছোটদের সঙ্গে কাজ করতে আমার সব সময়ই ভাল লাগে। আর রণবীর তো ভীষণ জনপ্রিয়, এমনকী আমার থেকেও।” রণবীর কপূরের সঙ্গে ছোট্ট কোনও রোলে অভিনয় করতেও রাজি তিনি।
|
নতুন ছবির প্রচারে অমিতাভ। মুম্বইয়ে। ছবি: পি টি আই। |