কম্পিউটারে গণ্ডগোল হওয়ায় সারাই করতে লোক ডেকেছিলেন অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু সেই মিস্ত্রি যে তাঁর কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক নিয়ে অন্যকে দেবেন, তা ভাবতেও পারেননি রূপা। তার পর থেকেই অভিনেত্রীর ই-মেল অ্যাকাউন্ট হ্যাক্ হওয়া শুরু হল। শেষে পুলিশ অবশ্য সেই হ্যাকারকে গ্রেফতার করে। ওই হ্যাকিং-এর জেরে অভিনেত্রীর গোপনীয়তা খর্ব হলেও তাঁর অর্থদণ্ড হয়নি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই গোয়েন্দারা দেখেছেন, কোনও ই-মেলের পাসওয়ার্ড বার করে ফেলে হ্যাকারেরা সেই ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দিয়েছে। কারণ, সেই ব্যক্তি নেট ব্যাঙ্কিং করতেন।
বিভিন্ন ধরনের সাইবার-অপরাধ নিয়েই আগামী দিনে পুলিশকে অনেক বেশি মাথা ঘামাতে হবে বলে জানান কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। সেই মতো নিজেদের প্রস্তুত হতে হবে বলেও পুলিশ বাহিনীকে এ দিন নির্দেশ দেন তিনি। লালবাজার সূত্রের খবর, বুধবার ক্রাইম কনফারেন্সে সিপি জানিয়েছেন, সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ ক্রমশ বাড়বে। কারণ, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের চল বাড়ছে। আর সে কথা মাথায় রেখে তৈরি হচ্ছে প্রতারকেরাও।
পুলিশি সূত্রের খবর, এই প্রসঙ্গে সুরজিৎবাবুর বক্তব্য, সাইবার অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে বাহিনী থেকে বাছাই করা মেধাবী, চটপটে, ঝকঝকে অফিসারদের সামিল করতে হবে। এই বিশেষ অপরাধ দমনের জন্য অফিসারদের আরও দক্ষ করে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন সিপি। চুরি-ছিনতাই দমনের মানসিকতা, অভিজ্ঞতা নিয়ে সাইবার অপরাধ দমন ও এই ধরনের অভিযোগের তদন্তে নামলে যে কাজের কাজ হবে না, সেটা গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা স্বীকার করছেন।
সাইবার অপরাধের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১০-এর অগস্টে পৃথক সাইবার ক্রাইম থানা লালবাজারে তৈরি করা হয়েছে। ২০১১-এ সেখানে রুজু হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ৬, পরের বছরই সংখ্যাটা প্রায় বারো গুণ বেড়ে হয় ৬৮। আর ২০১৩ সালে সাইবার অপরাধ জনিত মামলার সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর। লালবাজারের কর্তারা চেষ্টা করছেন, যাতে অদূর ভবিষ্যতে সাইবার ক্রাইম থানায় প্রশিক্ষিত অফিসারের সংখ্যা বাড়ানো যায়।
আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বাহিনীকে প্রস্তুত হতেও এ দিন নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করা ও বিভিন্ন এলাকার সমাজবিরোধী ও গুন্ডা-মস্তানদের দমন করার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করে দিতে বলেছেন সুরজিৎবাবু। প্রসঙ্গত, ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে কলকাতায় ৪৫ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১-র সেপ্টেম্বরে কলকাতা পুলিশের এলাকা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। সেই অনুপাতে অতটা বেশি আধা সামরিক বাহিনী পাওয়া যাবে না বলে পুলিশকতার্দের আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশকেই বাড়তি দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে হবে। |