ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরে ব্রিটেন-আমেরিকাও জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের নবনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজকর্ম চালাতে তাদের কোনও সমস্যা নেই। আর্থিক সহযোগিতাও অব্যাহত থাকবে। তার পরেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশ দফতর নিজের হাতে রাখার প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে মনে করেছেন তিনি। আর তাই গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রকের দায়িত্ব তিনি তুলে দিলেন এএইচ মাহমুদ আলির হাতে।
আগের পাঁচটা বছর বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক সামলেছেন দীপু মণি। মহিলা প্রধানমন্ত্রীর মহিলা প্রতিনিধি হিসেবে বলিয়ে-কইয়ে দীপু বিদেশে নজর কাড়লেও কয়েকটি কারণে দেশের কূটনীতিকদের বিরাগভাজন হয়ে পড়েছিলেন।
|
এএইচ মাহমুদ আলি। |
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের সঙ্গেও তাঁর অনক সময়ে মতে মেলেনি। দ্রুতগতিতে কাজ করতে ভালবাসতেন দীপু। কিন্তু তাঁর মন্ত্রকের অনেকে সেটাকেই তাঁর প্রধান দুর্বলতা বলে মনে করতেন। তাঁদের মতে, কূটনীতিতে অনেক ধৈর্য প্রয়োজন। হাতুড়ি মারার আগে নজর রাখতে হয়, লোহা কখন গরম হয়ে রক্তবর্ণ ধারণ করছে। অভিযোগ, দীপু মণি অনেক সময়ে সেই ধৈর্য দেখাতে পারেননি। তিস্তা চুক্তি না-হওয়া নিয়েও তাঁর অকারণ তাড়াহুড়োকে অনেকে দায়ী করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তিস্তা চুক্তি নিয়ে বিরোধিতায় সরব হন, দিল্লি সেই আপত্তি দূর করতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজে জানান, আপত্তির যুক্তি রয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় গাফিলতি দেখিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসারেরা। নতুন করে আলোচনা শুরুর জন্য অফিসারদের নির্দেশ দেন মনমোহন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে যাবতীয় প্রটোকল ভেঙে দীপু মণি মহাকরণে গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকের পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আরও অনড় হয়ে যান মমতা। রেলমন্ত্রী হিসেবে যে মমতা বাংলাদেশে রেল-পরিকাঠামো নির্মাণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই মমতাই বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট যে কোনও বিষয়ে একেবারে উদাসীন হয়ে যান। বাংলাদেশের অনেক কূটনীতিকই বলে থাকেন, দীপু মণি সে দিন একটু ধৈর্য দেখালে তিস্তা চুক্তি নিয়ে এত জলঘোলা হয়তো হত না।
নির্বাচনী সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের সময়েই শেখ হাসিনা দীপুকে বাদ দিয়ে বার্তা দিয়েছিলেন। মাহমুদ আলিকেই তিনি বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সঁপেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো প্রভাবশালী শক্তি বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সুর মিলিয়ে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিদেশ মন্ত্রক নিজের হাতেই রাখেন হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা নতুন সরকার সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহলের বিরোধিতা দূর করতে তৎপর হন। পাশে দাঁড়িয়ে তৎপর হয় নয়াদিল্লিও। যৌথ প্রয়াসে সাফল্য মেলে। একে একে সব মহলই জানিয়ে দিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নবনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে লেনদেনে কারও কোনও সমস্যা নেই। এমনকী আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার যে আশঙ্কা ঢাকা করছিল, তা-ও অমূলক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আজ তাই শপথের পরে সেই এএইচ মাহমুদ আলির হাতেই বিদেশ মন্ত্রক তুলে দিলেন হাসিনা। |