নাবিধসা-বৃষ্টিতে জেলা জুড়ে ক্ষতি আলু চাষে
ক দিকে নাবি ধসা, অন্য দিকে তিন দিনের অকাল বৃষ্টি- দুইয়ের জাঁতাকলে আলু চাষে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে জেলা জুড়ে। কৃষি দফতরের হিসেবে এখনও পর্যন্ত ১০৪ কোটি টাকার আলু নষ্ট হয়েছে।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে জেলায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত বছর ভাল দাম মেলায় চাষিরা আলু চাষের উপযোগী নয়, এমন অনেক জমিতেও চাষ করেছিলেন। ফলে লক্ষ্যমাত্রার থেকেও বেশি জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। কৃষি দফতরের হিসেবে গোটা জেলায় অন্তত ২২ লক্ষ ১৮ হাজার ২২ মেট্রিক টন ফলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্গাপুজোর আগে ও পরের বৃষ্টি হওয়ায় রবি মরসুমের জমি তৈরি করতেই দেরি হয়ে যায়। ফলে মাসখানেক পিছিয়ে পড়ে আলু চাষ। চাষিরা জানান, চাষের শুরু থেকে মাঝপথ পর্যন্ত ভাল ঠান্ডা ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় বেশিরভাগ জমিতেই ভাল আলু হয়েছিল। কিন্তু আলু চাষের গড় বয়স ৫০ দিন পেরোতেই বিপত্তি দেখা দেয় বলে চাষিদের দাবি। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ও দিনে মেঘলা হওয়ায় নাবিধসার সংক্রমণ দেখা যায়। থমকে যায় আলু বৃদ্ধি। অনেক জমিতে গাছের কাণ্ড পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। ধসার হাত থেকে বাঁচতে জমিতে প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় চাষিদের। তাতেও পুরোটা বাঁচানো যায়নি বলে চাষিদের দাবি।
বাঁ দিকে, নাবিধসার সংক্রমণে শুকিয়ে গিয়েছে গাছ। ডান দিকে, জমিতে পড়ে পচা আলু। —নিজস্ব চিত্র।
নাবিধসার সংক্রমণ সামলানোর আগেই শুরু হয় দিনকয়েকের বৃষ্টি। অনেক জমিতে জলও জমে যায়। চাষিদের দাবি, রোদ উঠতেই জমা জলে ব্যাপক ভাবে আলু পচতে শুরু করে। বিপর্যয়ের আঁচ পায় কৃষি দফতরও। কালনা-সহ বিভিন্ন কৃষি দফতরে বহু চাষিরাই বিপর্যয়ের কথা জানিয়ে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেন। বুধবার জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ২০টি ব্লক ক্ষতির মুখে পড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১২৬২টি মৌজা। এর মধ্যে ২১২টি মৌজায় আলুর ক্ষতি হয়েছে পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লক্ষ ২২ হাজার চাষি।
কালনা মহকুমাতেও ক্ষতির বহর প্রচুর। ৩৯০টি মৌজার প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর আলুর জমিতে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ২৬ হাজার ২৭৫ জন। ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে চার কোটি টাকারও বেশি। পাঁচটি ব্লকের মধ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে কালনা ১ ব্লকে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “ব্লক কৃষি দফতরগুলি থেকে যে তথ্য মিলেছে তা জেলায় পাঠানো হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণে কালনা ১ ব্লকের পরেই পূর্বস্থলী ১ ব্লক রয়েছে।” পার্থবাবুর দাবি, নাবিধসার থেকেও বেশি ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টিতে। জমিতে জমা জলে প্রচুর আলু নষ্ট হয়েছে।
কালনা ১ ব্লকের আলু চাষিদের ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ব্লক কৃষি আধিকারিক আশিস দত্ত এলাকায় গিয়েছিলেন। সুলতানপুর, বেগপুর, কাঁকুড়িয়ার মতো বেশ কিছু পঞ্চায়েত এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। আশিসবাবু জানান, এখনও বহু জমিতে জল জমে রয়েছে। বেশ কিছু জমিতে কাদা থাকায় অনেক আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দিন জমি থেকে পচা আলু তুলে আধিকারিকের সামনে কান্নাকাটিও করেন অনেকে। সুলতানপুরের হৃদয়পুরের মতো বেশ কিছু জায়গায় একশো শতাংশ আলুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেও আধিকারিক জানান। আশিসবাবু বলেন, “জমিতে নামলেই আলু পচার গন্ধ নাকে আসছে। ৫০ শতাংশেরও বেশি আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” চাষের শেষ পর্যায়ে এসে এমন বিপর্যয়ে হতবাক কৃষকেরাও। সিমলন পঞ্চায়েতের মছলন্দপুর গ্রামের চাষি প্রশান্ত তাঁ বলেন, “১২ বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। বৃষ্টি ছাড়ার পরে জমির কাছে গেলেই পচা গন্ধে কান্না আসছে। যা পরিস্থিতি তাতে আলু চাষের খরচটাও উঠবে না।” মেমারির আলু চাষি সদানন্দ ঘোষ বলেন, “চাষের আগে মহাজন বীজ, সার দেয়। বিনিময়ে আলু তুলে মহাজনকে দিই। নিজের টাকা কেটে বাড়তি টাকা ফেরত দেয় মহাজন। মাঠের যা অবস্থা তাতে এ বার মহাজনের কাছে কোনও আলুই পৌঁছবে না।” ক্ষতিপূরণ ও সরকারি সাহায্য চেয়ে মহকুমা কৃষি দফতর ও পঞ্চায়েতগুলোতে চিঠিও দিয়েছেন অনেক চাষি। তাঁদের আর্জি, সরকারি সাহায্য না পেলে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল হয়ে পড়বে। কালনা ১ ব্লকের সিমলন পঞ্চায়েতের প্রধান মহিবুল্লা শেখ বলেন, “চাষিদেব আবেদনের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” সুলতানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুর আলি শেখ বলেন, “যা পরিস্থিতি তাতে হিমঘরও ভর্তি হবে না। আমি নিজে চাষির ছেলে, তাই পরিস্থিতি ভালই বুঝতে পারছি।” জেলার এক কৃষিকর্তা জানান, বুধবার সমস্ত রিপোর্ট একত্র করে রাজ্য কৃষি দফতরে পাঠানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.