ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে পাঁচ দিন। শিক্ষিকার মুখে অ্যাসিড ঢালায় অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়া দূরে থাক, উল্টে তাঁর বাবার মোবাইলে ঘন ঘন হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ‘মামলা তুলে না নিলে আপনাদেরও মেয়ের দশা হবে!’ মঙ্গলবার, মালদহের বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা ওই শিক্ষিকার বাবা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন।
ক্ষতবিক্ষত মুখ নিয়ে তাঁর মেয়ে এখন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি। ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রবিবার রাতে বৈষ্ণবনগরের বাড়িতে ফিরেছেন তিনি। মাঝবয়সী ওই ভদ্রলোক বলেন, “গত কয়েক দিন ধরেই মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসছে, অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে ক্রমাগত। রবিবার রাতে বাড়ি ফেরার পরেই ফোন এল, ‘মামলা না তুললে আপনাদের মুখেও অ্যাসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ এ দিন পুলিশ সুপারের ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি জানান, বিভিন্ন নম্বর থেকে মাঝে মধ্যেই ফোন আসছে। কখনও অ্যাসিডে পুড়িয়ে দেওয়া হুমকি। কখনও বা প্রাণে মেরে ফেলার শাসানি। তিনি বলেন, “বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপারকে জানাতে এসেছিলাম।”
জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব ছুটিতে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, “ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ পেয়েছি। ওঁদের বলেছি, ভয় পাবেন না। অভিযুক্তদের ধরতে জেলা পুলিশ একটি বিশেষ দল গড়েছে। কারা হুমকি দিচ্ছে তা চিহ্নিত করার কাজও এগিয়েছে। দ্রুত ধরা পড়বে অভিযুক্তরা।” আশ্বাস মিলেছে ডিআইজি (মালদহ) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশ কর্তাদের প্রতিশ্রুতিতে আস্বস্ত হচ্ছেন না। বৈষ্ণবনগরে ওই শিক্ষিকার পড়শিদের অনেকেরই দাবি, “পুলিশের উচিত ওঁদের সকলেরই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।”
বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই শিক্ষিকার বাড়িতে আচমকা চড়াও হয় উজ্জ্বল মণ্ডল নামে প্রতিবেশী এক যুবক। তার পর তরুণীর চুলের মুঠি ধরে তাঁর মুখ হাঁ করিয়ে ঢেলে দেয় অ্যাসিড। তাঁর গালে-গলায় গড়িয়ে পড়ে সেই অ্যাসিড। চিকিৎসকেরা জানান, মুখের ভিতরে অ্যাসিড ঢালায় ওই তরুণীর মুখের ভিতরে গাল এমনকী শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর কিছুটা অংশও পুড়ে গিয়েছে। ওই ঘটনার পরে উজ্জ্বল, তার দুই দাদা এবং বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে অভিযুক্তের বাবা বিশ্বনাথ মণ্ডল ছাড়া পুলিশ কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। |