ডুয়ার্সের জঙ্গল তাকে হাতছানি দেয়। তোর্সা তাকে টানে, আর তাই মনের তাগিদে বার বার ছুটে যাওয়া। এখানেই তো পান তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস, যা প্রাণ, মন সব কিছুকে ভরিয়ে দেয়। আপাতদৃষ্টিতে একেবারে মূল্যহীন যে সব জিনিস, কোচবিহারের উৎপল চক্রবর্তীর কাছে তা সম্পদ। গাছের ডাল, গুঁড়ি, জলে ভেসে আসা গাছের শেকড় দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব জগৎঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কুটুম কাটামে’র আদলে কাটুম কুটুম। তবে কুটুম কাটামের মতো কোনও জোড়া নেই এতে। একেবারে কুড়িয়ে পাওয়া গাছের ডালগুলোকেই ঘষে মেজে নিজের মনের মতো রূপ দেওয়া হয়।
প্রথাগত কোনও ট্রেনিং ছাড়া নেহাতই শখের বশে ২০ বছর আগে যাত্রা শুরু হয় ‘কুটুম কাটামে’র। পেশা শিক্ষাকতা হলেও নিজেকে শিল্পী ভাবতেই বেশি ভালবাসেন তিনি। চান কোচবিহার উত্তরবঙ্গ ছাড়িয়ে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ুক তাঁর শিল্পকলা। বিভিন্ন সময়ে তিনি কাটুম কুটুমের প্রদর্শনী করলেও কলাপ্রেমী বা সমঝদারের অভাবে তা তেমন ভাবে প্রচারের আলো পায়নি। তবে মাস সাতেক আগে কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এ তাঁর ‘কাটুম কুটুমে’র একক প্রদর্শনীর পরে কলাপ্রেমীদের মনে তাঁর শিল্পকর্ম দাগ কেটেছে দেখে অভিভূত উৎপলবাবু। তাঁর কথায়, কলকাতা শিল্পী মহলের প্রায় কাউকেই চিনি না। অথচ আমার প্রদর্শনীতে এসে কাজ দেখেছেন এবং উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ওয়াসিম কপূর থেকে শুরু করে অলকেন্দু পত্রী, সমীর আইচের উৎসাহে তারুণ্য এসেছে তাঁর মনে আরও কাজ করতে হবে, তৈরি করতে হবে আরও শিল্পকর্ম। এ বারের লক্ষ্য ইন্ডিয়া একাডেমি অব ফাইন আর্টস।
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস, কোচবিহার।
|
তিনি প্রশিক্ষিত নন, স্বশিক্ষিত শিল্পী। কাঠ কিংবা বাঁশ গাছের গুঁড়ি দিয়ে একের পর এক বানিয়ে
চলেছেন দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। কাঠ খোদাই করে গড়ে তুলেছেন রকমারি পুতুল, মুখোশ। ময়নাগুড়ি
ব্লকের পূর্ব বড়গিলার বাসিন্দা শিল্পী সুরেন্দ্রচন্দ্র রায় দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে এই শিল্পকর্মে নিবিষ্ট।
কচ্ছপ, হাতি, স্তনদানরত মা, ক্রিকেট বল-সহ বোলারের হাত, হাতি বা বাঘের মাথা তৈরি
করতে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গাছের গুঁড়ি। তাঁর হাতে তৈরি দোতারা বা জ্যামা-র
চাহিদা রয়েছে লোকসংগীত শিল্পীদের কাছে। পেশা কৃষিজীবী হলেও পরিচিতি
হস্তশিল্পী হিসেবে। ছবি: অনিতা দত্ত। |
ওরা খেতে চায়নি। শৈশব থেকে কৈশোর। সেই সময় জুড়ে সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষিকা আর সেই বিদ্যালয়। সেই শ্রেণিকক্ষ, খেলার মাঠ। ঘণ্টায় টিফিন-বেলা। দুপুর শেষে বিকেল। ছুটি হলে দল বেঁধে বাড়ি ফেরা। সেই বিদ্যালয় আছে। আছে খেলার মাঠ। আছে টিফিন-বেলা। শুধু ওরা নেই। শ্রেণিকক্ষে ওদের জায়গায় এখন অন্য কেউ বসে। বিদ্যালয়ে কোনও উৎসবে ওরা এখন আর আসে না। মৃত্যুর সঙ্গে অসম যুদ্ধে কৈশোরেই মুছে গেছে ভীম, বুলবুল, সুমন্তী, জয়ন্তী, দীপঙ্কর আর ছন্দার জীবনের যত আঁকিবুকি। তবে এ বছর সরস্বতী পুজোর দিনে ওরা দলবেঁধে এসেছিল। ওদের সেই বিদ্যালয়ে, অর্থাৎ জলপাইগুড়ি মাল ব্লকের রাজাডাঙ্গা পি এম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা। ওদের জন্য তৈরি হয়েছিল বেদি। বেদিতে ওদের ছবি। চন্দনের ফোঁটা, ফুলের মালা, বাতাসে ধূপের গন্ধ। ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা অনেক চোখ। কেউ আনমনে বলেন, ‘ছন্দা ছড়া লিখত, ভীমের এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। ’ অস্ফূট স্বরে কেউ বলে, ‘তোমাদের ভুলিনি, তোমরাও আমাদের সঙ্গে আছ।’ ওরা উত্তর দেয় না। শুধু নীরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। সেই ধূসর নীরবতা, নীরবে বলে যায় অসমাপ্ত কত কৈশোরের কথা......।
সুদীপ দত্ত, জলপাইগুড়ি।
|
বালুরঘাটের আবির নত্যালয়। ২৫টি বছর পরেও অক্লান্ত। উদয়শঙ্কর ডান্স ফেস্টিভাল, আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে রবীন্দ্রসদনে অথবা কবি পক্ষে কিংবা দিল্লিতে নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে যে ধারা বহমান ছিল সম্প্রতি কলকাতায় জ্ঞান মঞ্চে ২ দিনের কত্থক উৎসব ঘুঙরু কি আওয়াজ’ বা শিল্পী মঞ্চের ‘অন্বেষণ’-এ সে ধারাই বজায় থাকল। কত্থক প্রেমী সুধাদেবীর স্মৃতিতে গঠিত বেলঘরিয়া, কলকাতা সুধা আর্ট সেন্টারের উদ্যোগে জ্ঞানমঞ্চে যে ভাবে প্রথম বার কত্থক যুগলবন্দি পরিবেশন করলেন বিখ্যাত কত্থক নৃত্যশিল্পী শাশ্বতী সেন-ভাস্বতী মিশ্র, সেই মঞ্চে আবিরের অংশগ্রহণ, কর্ণধার রিনা সিংহরায়ের মতে গৌরবই বটে। দ্রুত বোল প্রকরণে ‘তিলানা’-র ভাবনা ছিল অনবদ্য। রিনা সিংহ রায়ের পরিচালনায় আবিরের তনুশ্রী ইমাশ্রী দীপা দেবোপমা শ্রেয়া দীপশিখা আর তুতুল প্রশংসিত তাদের উপস্থাপনায়। পরে ৩০ জনের কত্থক কর্মশালাতেও আবিরের উজ্জ্বল অংশগ্রহণ ছিল। ভাবনা রেকর্ডস-এর পদ থেকে সিডি প্রকাশ অথবা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রকৃতির আবহে নাচের চিত্রায়ণ বরাবরই ছকভাঙা আবির।
তুহিনশুভ্র মণ্ডল, বালুরঘাট। |