বহিরাগতের ভিড়ে রোগীর নাভিশ্বাস
কোনও কিছুই নেই পর্যাপ্ত। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী ঘাটতি সব জায়গায়। তবে, স্বাস্থ্য পরিষেবার চেয়েও নিরাপত্তারক্ষীর অভাবটাই সবচেয়ে বেশি নজরে আসে কান্দি মহকুমা হাসপাতালে। মুর্শিদাবাদ জেলার ২৬৮ শয্যার ওই হাসপাতালে কান্দি ছাড়াও পড়শি জেলা বীরভূম ও বর্ধমান থেকে অনেক রোগী আসেন। কিন্তু হাসপাতালের ভিতর রোগীর চেয়েও পরিজনদের ভিড়টাই যেন বেশি। কে রোগী, কে তাঁর আত্মীয় বোঝার উপায় নেই। নিরাপত্তারক্ষীর অভাবে বহিরাগত লোকজন অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসপাতালের ভিতর। মূল ফটকে রক্ষী থাকলেও বহিরাগতদের আটকানো হয় না। হাসপাতালের সুপার ভাস্কর বৈষ্ণবের জবাব, “অন্তর্বিভাগের ভিতরে রয়েছে ব্লাড ব্যাঙ্ক, রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি করার ব্যবস্থা। বাইরের গেটে প্রত্যেককে ধরে ধরে জিজ্ঞাসা করা সম্ভব নয়, কে কোথায় যাচ্ছে।”
বহিরাগত অনেক সময় কুকুর-বিড়ালও। জঙ্গিপুর হাসপাতালে অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতে ২৩ জন নিরাপত্তারক্ষীর জায়গায় মাত্র ১০ জন আছেন। ৭টা ওয়ার্ড, মূল ফটক, মর্গ-সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পাহারা দিতে হয় এই ক’জনকেই। সব সময় সব জায়গায় পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না তাই। রোগীদের অবশ্য বক্তব্য, পাহারার কড়াকড়ি নেই কোথাও। হাসপাতালে ভর্তি এক প্রসূতির স্বামী কাঞ্চন মণ্ডল বলেন, “এখানে দেখছি নিয়মের বালাই নেই। এক-এক জন রোগীর সঙ্গে দুই থেকে তিন এমনকী চার জন করেও আত্মীয় আছেন। খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে, গল্পগুজব। কে বলবে হাসপাতাল।” পেটের রোগে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সাবিনা খাতুন। তিনি বলেন, “দিনভর বাইরের লোকজন গিজগিজ করছে। হই-হট্টগোলে দু’দণ্ড নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই। এমনকী রোগীর খালি শয্যাতেও মাঝে-মধ্যে জিরিয়ে নিচ্ছে বহিরাগতেরা। রাতে অবশ্য বাইরের লোকজন থাকে না। তখনই যা শান্তিতে ঘুমোতে পারি।”
যদিও রাতেও নিরাপত্তা নেই বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। সম্প্রতি পিসেমশাইকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন বীরভূম জেলার কলেশ্বরের বাসিন্দা বিকাশ পাল। তিন দিন ধরে হাসপাতালের বাইরে বসে রাত কাটিয়েছেন বিকাশ। তিনি বলেন, “রাতভর অচেনা লোকজন সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করে। তাদের গতিবিধি নজরদারির জন্য কোনও নিরাপত্তাকর্মীর দেখা মেলে না। আতঙ্কে রাত কাটাতে হয়।” হাসপাতালের বহির্বিভাগের পাশে রয়েছে মহকুমা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কার্যালয়। রাতে ওই কার্যালয় তালাবন্ধ থাকে শুধু। মাস দু’য়েক আগে বহির্বিভাগের যে ঘরে কম্পিউটার থাকে, সেই ঘরের তালা ভেঙেছিল দুষ্কৃতীরা।
দেখার কেউ নেই বলেই হাসপাতালের সামনে অবৈধ ভাবে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সাইকেল, মোটর বাইক, রিকশা, লছিমন মায় ছোট চার চাকার গাড়ি। ফলে নিত্য যানজট লেগেই আছে। এই যানজটের কারণে অনেক সময় জরুরি বিভাগের সামনে যেতে পারে না অ্যাম্বুল্যান্স। অসুস্থ রোগীকে হেঁটে হাসপাতালে ঢুকতে হয়। প্রতিবাদ করলেই রিকশা, গাড়ি চালকদের কাছে শুনতে হয় অশ্রাব্য গালাগাল, সঙ্গে চোখরাঙানি। রোগীর আত্মীয় জহিরুল শেখ ও মানব দাস বলেন, “এভাবে হাসপাতালের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় জরুরি বিভাগে রোগী নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। বাইরে কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকে না, যে এগুলো দেখবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এই সব বিষয়ে এত উদাসীন বুঝতে পারছি না।”
দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে হাসপাতাল সুপার ভাস্কর বৈষ্ণব বলেন, “জরুরি বিভাগের সামনে কোনও রকমের যানবাহন রাখা যাবে না এই মর্মে নোটিস ঝোলানো হয়েছিল। বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছি। এ বার মনে হচ্ছে আমাদের কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।” কান্দির আইসি কৌশিক ঘোষের আশ্বাস, “জরুরি বিভাগের সামনে অবাঞ্ছিত কোনও যানবাহন যাতে দাঁড়াতে না পারে সে ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।”
প্রতিশ্রুতিই সার। হাসপাতালের সামনে যানবাহনের ভিড় আগের মতোই। জরুরি বিভাগের সামনে ‘গাড়ি দাঁড় না করানোর’ বিজ্ঞপ্তিটা হাস্যকর দেখায়।
নিরাপত্তার ছয়-কাহন
কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতাল দু’টি ক্যাম্পাসেই নিরাপত্তারক্ষী নেই। প্রসূতি ও শিশু
বিভাগে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী দিয়ে নজরদারি।
তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল এক জনও নিরাপত্তারক্ষী নেই।
যে-যখন পারে ঢোকে-বেরোয়।
বহরমপুর মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতাল
৩৪ জন নিরাপত্তারক্ষী। দু’-একজন
ঢুকে পড়লেও অবাধ প্রবেশ নয়।
ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল ১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী আছে।
নজরদারিও আছে মোটামুটি।
জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল ১৯ জন নিরাপত্তারক্ষী। বাইরের
লোক সহজে ঢুকতে পারে না।
রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল ৮ জন নিরাপত্তারক্ষী। মাঝে-মধ্যেই
অবাঞ্ছিত লোকজন ঢুকে পড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.