রাজ্য সরকার ১০ হাজার সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘আন-এডেড’ বা ‘অনুদানহীন মাদ্রাসা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। লিখিত প্রতিশ্রুতি ছিল, ওই সব স্বীকৃত মাদ্রাসার পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হবে। তার পরে দু’-দু’টো বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার কথা রাখেনি বলে অভিযোগ বিভিন্ন সংখালঘু সংগঠনের। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন উৎসবে দেদার টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ মাদ্রাসার পড়ুয়াদের জন্য প্রতিশ্রুতি আটকে থাকছে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতেই!
অভিযোগের সত্যতা কার্যত মেনে নিয়েছেন রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ওই দফতরের পূর্ণমন্ত্রী। তবু এই অবস্থা কেন? গিয়াসুদ্দিন মঙ্গলবার বলেন, “কয়েকটি জেলায় নতুন স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসায় মিড-ডে মিল ও বই যাচ্ছে না বলে আমিও খবর পেয়েছি। এ বার যা করণীয়, তা করা হচ্ছে।”
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের হালহকিকত নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার তারাপদ মেমোরিয়াল হলে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রায় সব বক্তাই এই অভিযোগ তোলেন। কেন তাঁরা এমন অভিযোগ করছেন, তা-ও জানান বক্তারা। সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান অভিযোগ করেন, রাজ্যের ১০ হাজার সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনুদানহীন মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে ক্ষমতায় এসেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু গত দু’বছরে এমন স্বীকৃতি পেয়েছে মাত্র ২১২টি (দুই শতাংশের সামান্য বেশি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান! অথচ বহু আবেদনপত্র দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দফতরে পড়ে রয়েছে। সেগুলোর হাল কী, সরকার তা জানাচ্ছে না।
২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের তৎকালীন সচিবের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসাগুলির পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল এবং বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পাবে। মাদ্রাসাগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক সাহায্যও দেবে সরকার। কিন্তু এখনও তার কিছুই পাওয়া যায়নি। কামরুজ্জামানের অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার যে-টাকা দেয়, রাজ্য তার সবটা খরচ করতে পারছে না। তবু মাদ্রাসার পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা দেওয়া হচ্ছে না। মোট সাত দফা দাবির উল্লেখ করে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছে ওই সংগঠন।
সভায় মাদ্রাসার দুই প্রতিনিধি মৌলানা মিরাজুল ইসলাম, হারুন অল রশিদ-সহ একাধিক বক্তার অভিযোগ, ‘যুবশ্রী’ প্রকল্পে বেকার যুবকদের ভাতা দিচ্ছে সরকার। ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পে ছাত্রীরা টাকা পাচ্ছেন। ভাতা পাচ্ছেন ইমাম ও মুয়াজ্জিনেরা। অথচ অনুদানহীন মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে বলা হচ্ছে! কেন এই বৈষম্য, প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
মন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার মাত্র তিন বছর এসেছে। এর মধ্যেই সব দিয়ে দিতে হবে? স্বীকৃতি পাওয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের এখনই বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা হবে না। সময়মতো সব দেওয়া হবে।”
মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে বামফ্রন্ট সরকার কী দিয়েছে? এত দিন সে-সব নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়নি কেন? তাঁর কথায়, “সবটা করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই সময়টা দিতে হবে।” |