পান চাষিদের আন্দোলন থামাতে কড়া হল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে জেলাশাসকের অফিস চত্বর থেকে ছ’জন পানচাষিকে গ্রেফতার করে বাকিদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এই ঘটনাকে ঘিরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি আসরে নেমেছে।
এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ মুরগি খামার বন্ধের দাবিতে শুক্রবার থেকে বেলিয়াতোড়ের ঢেঙাকেন্দ গ্রামের ৫০ জন পানচাষি জেলাশাসকের অফিস চত্বরে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। সে দিন সন্ধ্যায় কয়েকজন গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল। পুলিশ তাঁদের থামালেও অবস্থান বন্ধ হয়নি। সোমবার জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও করারও চেষ্টাও চালান আন্দোলনকারীরা। এ দিন প্রশাসন কড়া হাতে সেই আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করে। পুলিশ জানায়, ধৃতেরা হলেন কালীপদ রায়, অনিল রায়, মিলন রায়, ষষ্ঠী রায়, সুধাময় রায় ও রবি রায়। |
আন্দোলনকারীদের মধ্যে ফকির রায়, সন্ধ্যা রায়, অসি রায়দের অভিযোগ, “ভোরবেলায় জেলাশাসকের অফিস চত্বরে আমরা ঘুমোচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে আমাদের ছ’জনকে গাড়িতে তুলে নিল। বাকিদের ধাক্কা দিতে দিতে সতীঘাটে নিয়ে চলে এল।” আন্দোলনকারীদের এই ভাবে হটানোর প্রতিবাদে এবং ধৃতদের মুক্তির দাবিতে সামিল হয়েছে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। ঘটনাটির প্রতিবাদ জানিয়ে এসইউসি পানচাষিদের নিয়ে সতীঘাটে পথ অবরোধ করে। যদিও পুলিশি হস্তক্ষেপে কিছুক্ষণের মধ্যেই অবরোধ উঠে যায়। বড়জোড়া ব্লক এলাকায় লিফলেট ছড়িয়ে এই ঘটনার এই প্রতিবাদ করে সিপিএমের কৃষকসভাও। ঘটনার বিরোধিতা করে বিজেপিও।
ওই মুরগি খামার থেকে দূষণের জেরে পানের বরজের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করে প্রায় এক বছর ধরে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই পান চাষিরা। কিন্তু, জেলা প্রশাসন ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ তুলে এ বার তাঁরা আক্রমণাত্মক বয়ে উঠেছিলেন। যদিও প্রশাসনের দাবি, ওই খামার নির্মাণই হয়নি। এখন থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করে ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার যুক্তি নেই। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “এখনও ওই জায়গায় পোলট্রি গড়ার জন্য আমরা এনওসি (নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট) দিইনি। যে কোনও শিল্প গড়ার আগে এলাকায় জনশুনানি হয়। সে-সবও কিছুই হয়নি। শুধু একটি সংস্থা ওখানে জায়গা কিনে নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এখন থেকেই কেন এলাকার পান চাষিরা আন্দোলন করছেন, বুঝতে পারছি না। ওঁদের বারবার বোঝানো হচ্ছে, চাইলেই কেউ কোথাও পোলট্রি খামার গড়তে পারে না। অনেক কাগজপত্র দরকার। গ্রামবাসীরা অমূলক আশঙ্কায় আন্দোলন করছেন।”
যে সংস্থা এলাকায় জমি কিনেছে, সেটির ডিরেক্টর কলকাতার বাসিন্দা অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “ইতিমধ্যেই আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছ থেকে ওখানে পোলট্রি গড়ার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছি। খামার গড়ার আগে অবশ্যই জেলা প্রশাসনের কাছে এনওসি-র জন্য আবেদন করা হবে।” পোলট্রি গড়লে পান বরজে দূষণ ছড়ানোর যে অভিযোগ বিক্ষোভকারীরা করছেন, সে প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আমাদের খামার থেকে বরজের দূরত্ব ৮০০ মিটারেরও বেশি। এ ছাড়া, খুবই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমাদের খামার গড়া হবে। ফলে, সেখান থেকে কোনও ভাবেই দূষণ ছড়াবে না।” |