কলকাতার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তবে এখনও রবিবার রাতের ঘটনা অমিত মান্নাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। লুঠপাট করতে এসে যে ভাবে দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছে তা মনে পড়তেই শিউরে উঠছেন তিনি। গুলিতে মৃত্যু হয়েছে দাদা অসিতের। ভেবেছিলেন তাঁরও বাঁচার আশা নেই। কিন্তু চিকিৎসকদের অসীম চেষ্টা তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে আতঙ্ক কাটিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন কি না তা নিয়ে গোটা মান্না পরিবারই সংশয়ে।
বস্তুত রবিবার বাসন্তীর গৌরদাসপাড়ায় মান্না পরিবারের দোকানে দুষ্কৃতীদের গুলি চালিয়ে লুঠপাটের ঘটনায় গোটা ক্যানিং মহকুমাতেই ব্যবসায়ী মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা সবর্ত্রই ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এ ভাবে আক্রমণ হলে ব্যবসা করাই দায় হয়ে দাঁড়াবে। তোলাবাজির দৌরাত্ম্য তো রয়েইছে। তার পর এ বাবে দোকানে দুষ্কৃতীরা চড়াও হয়ে গুলি চালিয়ে লুঠপাট করলে তাঁরা তো ধনেপ্রাণে মারা যাবেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ সক্রিয়তা এবং উপযুক্ত নজরদারির অভাবে দুষ্কৃতীরা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে ক্যানিংয়ের নিকারিঘাটা এলাকায় একটি সোনার দোকানে হামলা চালিয়ে দোকান মালিককে মারধর করে টাকাকড়ি, গয়নাগাটি নিয়ে পালয়ে যায়। যাওয়ার সময় গুলিও ছোড়ে বলে অভিযোগ। তারপর ফের বাসন্তীর গৌরদাসপাড়ার ঘটনা। আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে বাসন্তীতে বহু ব্যবসায়ীই আর রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতে সাহস করছেন না। অসিতবাবুর কথায়, “প্রায় কুড়ি বছরের উপর এলাকায় ব্যবসা করছি। বাসন্তী ছাড়াও ক্যানিং, গোসাবা প্রভৃতি জায়গায় নিয়মিত মালপত্র নিয়ে যাওয়া আসা রয়েছে। কখনও এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতে পারিনি। রাস্তাঘাটে ছিনতইকারীদের হাতে আক্রান্ত হলেও এতটা অবাক হতাম না। কিন্তু এ ভাবে যে আক্রমণ হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। দাদার মৃত্যুতে গোটা পরিবারই শোকে আচ্ছন্ন। দাদাই ব্যবসার অনেকটা দেখাশোনা করতেন। এখন ব্যবসাপত্র কী ভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। আবার যে এমন হামলা হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে।” এখনও পর্যন্ত অবশ্য পুলিশ ওই ঘটনায় শাহাজাদা নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
বাসন্তীর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোস্তাফা সর্দার বলেন, “মহকুমায় যে ভাবে দুষ্কৃতীরা ব্যবসায়ীদের উপরে আক্রমণ করছে তাতে আমরা আতঙ্কিত। সন্ধ্যাবেলা বাজারে পুলিশ টহল দিলেও মাঝে মাঝে তাও চোখে পড়ে না। তার উপর বেশিরভাগ দিনই সন্ধ্যার পরে লোডশেডিং হয়ে যায়। তখন আতঙ্ক আরও বাড়ে। আমরা চাই এলাকায় ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশি টহলদারি আরও জোরদার করা হোক।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী বলেন, “মাঝেমধ্যে একটা, দু’টো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে ঠিকই। তবে পুলিশি নজরদারিও রয়েছে। পুলিশ যে চুপ করে বসে নেই তার প্রমাণ, ক্যানিংয়ে পর পর দু’টি ঘটনায় জড়িত একটি দলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ওই দলটিকে আমরা গত বছর ধরেছিলাম। কিন্তু তারাই আবার জেল থেকে বেরিয়ে দুষ্কর্ম শুরু করেছে। তবে শীঘ্রই বাসন্তীর ঘটনায় জড়িত বাকিদের খুঁজে বের করা হবে।”
এদিকে সোমবার ধৃত শাহাজাদাকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। |