কোন বহুতলে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কেমন, কটাই বা প্রবেশপথ, কোন দিক দিয়ে সহজে পৌঁছনো যাবে বাড়ির ভিতরে, আগুন নেভাতে সেখানে জলের ব্যবস্থা রয়েছে কি না যে কোনও সমস্যার সময়ে এক জায়গায় সব তথ্য এ বার পাবে দমকল। ‘নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’-র উদ্যোগে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে চালু হল এমনই ব্যবস্থা। যার পোশাকি নাম ‘ফায়ার অডিট রিপোর্ট’। মঙ্গলবার বিকেলে সল্টলেকের উন্নয়ন ভবনে এই রিপোর্ট প্রকাশ করলেন পুরমন্ত্রী তথা নবদিগন্তের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা শহরে এমন উদ্যোগ এই প্রথম।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী জানান, পাঁচ নম্বর সেক্টরের সব বাড়ির বিষয়ে নানা রকম তথ্য রয়েছে এই রিপোর্টে। কোথায় অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা কেমন, কী কী সমস্যা রয়েছে, তার সমাধানে কী করণীয় এখান থেকে জানা যাবে সবই। পাশাপাশি, বাড়িগুলির নকশা সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য থাকবে এই রিপোর্টে। অর্থাৎ শুধু দমকলের কাজই নয়, প্রশাসনিক নানা ঝঞ্ঝাট মেটানো এবং পরিকল্পনার সময়েও কাজে আসবে এই তথ্য-ভাণ্ডার।
পাঁচ খণ্ডের এই রিপোর্ট দমকল, মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতর-সহ একাধিক জায়গায় পাঠানো হবে। পাশাপাশি, সেই সব তথ্য রাখা থাকবে নবদিগন্তের ওয়েবসাইটেও। মন্ত্রী জানান, অনেক ক্ষেত্রেই কোনও বহুতল বা বাড়িতে আগুন লাগার পরে দেখা গিয়েছে ঘটনাস্থল সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই দমকলের কাছে। এ বার সে সমস্যা কিছুটা মিটবে।
মন্ত্রীর বক্তব্য, যে ভাবে নিউ টাউন, পাঁচ নম্বর সেক্টর, বানতলা লেদার কমপ্লেক্সে পরপর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র গড়ে উঠছে, দমকলকর্মীদের কাছে সে সব জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। মন্ত্রী জানান, নবদিগন্তের পরে এ বার নিজের এলাকায় এ বার একই কাজ শুরু করেছেন হিডকো কর্তৃপক্ষও।
এ দিকে, স্রেফ ফায়ার অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করেই অবশ্য থেমে যাচ্ছেন না নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, রিপোর্টে দেখিয়ে দেওয়া সমস্যাগুলির বিষয়ে কোন বহুতলে কেমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে দিকেও নিয়মিত নজর রাখা হবে।
সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাস থেকে একটি পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু করা হয়েছিল। সাত মাসে সমীক্ষা শেষের পরে তথ্য যাচাই করে রিপোর্টটি তৈরি হয়। ৪৩২ একর আয়তনের পাঁচ নম্বর সেক্টরে কমবেশি ৩০০টি বাড়ি রয়েছে। যার অধিকাংশই বহুতল। পাঁচটি ভাগে প্রতিটি বাড়ি সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে এই ফায়ার অডিটে। বাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য, প্লট নম্বর, নিরাপত্তার দায়িত্বে কারা, ক’টা প্রবেশপথ, অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা কী কী, ইলেকট্রিক্যাল এবং ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা-সহ একাধিক বিষয়ে তথ্য রয়েছে এই রিপোর্টে।
নবদিগন্তের এক কর্তা জানান, সমীক্ষা করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনেক বহুতলে মূল প্রবেশপথ ছাড়া অন্য প্রবেশপথ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় আবার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকলেও, তা নিয়মিত বদলানো হচ্ছে না। সেগুলির ব্যবহারের বিষয়েও যথেষ্ঠ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। আগ্নিকাণ্ডের সময়ে ব্যবহারের জন্য বিশেষ কিছু প্রবেশপথ বাইরে থেকে খোলার ব্যবস্থা রাখা দরকার। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, অধিকাংশ বহুতলেই এমন ব্যবস্থা নেই। অনেক বহতলে অতিরিক্ত একটি ফায়ারমেন পাম্পও নেই বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
এ দিন পুরমন্ত্রী বলেন, “এই নথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে এক নজরে ঘটনাস্থল সম্পর্কে সব তথ্য মিলবে। পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি স্কাই ল্যাডার রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে।” |