খুন, জখম, ডাকাতির মতো বড় ঘটনা তো বটেই, ছিঁচকে চুরি বা রেশন কার্ড হারানোর ক্ষেত্রেও ২০-২৫ কিলোমিটার উজিয়ে অভিযোগ করতে যেতে হত থানায়। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলা বেড়েছে, অভিযোগ বেড়েছে, ফলে বহু দিন ধরেই নতুন থানার দাবি উঠছিল এলাকায়। সেই দাবি মেনে মঙ্গলবার থেকে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে চালু হল নাদনঘাট থানা।
এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, রাজ্যের আইজি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা, ডিজি (বর্ধমান রেঞ্জ) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা, অতিরিক্ত জেলাশাসক তরুণ হালদার, কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকার, সিআই রাকেশ মিশ্র প্রমুখও। নতুন থানায় ওসি হয়েছেন সনৎ দাস।
স্বাধীনতার আগে কালনা মহকুমায় তিন থানা তৈরি হয়- কালনা, পূর্বস্থলী ও মন্তেশ্বর। এরপরে জনসংখ্যা বেড়েছে, মামলার সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু থানা বাড়েনি। পূর্বস্থলী থানার এলাকা বিশাল হওয়ায় বহু গ্রামের বাসিন্দাদেরই কুড়ি-পঁচিশ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রেশন কার্ড হারানো বা আরও ছোটখাট নানা বিষয়ে অভিযোগ করতে আসতে হত। |
এছাড়া চুরি, ডাকাতি, দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য, দুর্ঘটনা, পথ অবরোধের মত নানা বিষয়ে পুলিশের ঘটনাস্থলে পৌঁছতেও দীর্ঘক্ষণ লেগে যেত। তার মধ্যে পুলিশের গাড়ি কোনও কারণে এক ব্লকে আটকে গেলে সময় লাগত আরও বেশি। ফলে দু’টি ব্লকে দু’টি আলাদা থানার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন বাসিন্দারা।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি নতুন থানা তৈরিতে উদ্যোগী হন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে স্বপনবাবু বলেন, “সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠক ছিল। সেখানেই পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নতুন থানা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবারই নতুন থানা উদ্বোধনের নির্দেশ দেন।” সিদ্ধিনাথবাবু জানান, সাধারণ মানুষ যাতে দ্রুত পরিষেবা পান সে জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে লক্ষাধিক পুলিশ কর্মীও নিয়োগ করা হয়েছে। বর্ধমানের শক্তিগড়-সহ আরও দু’জায়গাতে নতুন থানা গড়ার প্রস্তাবও পৌঁছেছে স্বরাষ্ট্র দফতরে। সেগুলি কবে হবে জানতে চাওয়া হলে আইজি বলেন, “প্রস্তাবটির কথা জানি। আশা করছি লোকসভা নির্বাচনের পরে থানা দু’টির উদ্বোধন হবে।” জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন থানায় পাঁচ জন ইন্সপেক্টের, চারজন সহকারী ইন্সপেক্টর ছাড়াও ১৬ জন পুরুষ ও ৬ জন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে। আপাতত সমুদ্রগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি ফ্লাড সেন্টারে থানাটি হবে। পরে স্কুলের দান করা কাছাকাছি জমিতে নতুন ভবন গড়া হবে। তবে পূর্বস্থলী ১ ব্লকে থানা হলে যাতায়াতে অসুবিধে হবে বলে দোগাছিয়া ও জাহান্নগর পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা জানান, পূর্বস্থলী থানায় পৌঁছতে তাঁদের পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার যেতে হয়। সেখানে নাদনঘাট থানা কুড়ি-পাঁচিশ কিলোমিটার দূরে। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় জানান, দুই এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন তারা পুরনো থানা এলাকার মধ্যেই থাকতে চান। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকেও জানানো হয়েছে। চিঠিও পাঠানো হবে। সমস্যার কথা আইজিকে জানান স্বপনবাবু। আইজি বলেন, “দু’এক মাসের মধ্যেই থানার এলাকা পুনরায় ঠিক করা হবে। তখন এই এলাকাগুলিকে পূর্বস্থলী থানার আওতাতেই রাখা হবে। তবে আগাম চিঠি দিয়ে পুলিশ সুপারকে জানিয়ে রাখতে হবে।” |