একটা ফসল কেটে ঘরে তোলার পরে সেই জমিতে লাঙল বা ট্রাক্টরে চালিয়ে মাটি কর্ষণ করে পরের ফসল লাগানোর রেওয়াজ রয়েছে। আর এই পদ্ধতিতেই বেশিরভাগ কৃষক এখনও চাষ করছেন। কিন্তু ফসল কাটার পর বিনা কর্ষণে সেই জমিতেই মুসুর ডাল ফলিয়ে তাক লাগিয়েছেন গাজলের কালীনগরের অরুণ রায়, গৌরাঙ্গপুর এসাকার নরেশ মণ্ডলরা। এত দিন যে জমিতে হাল চালিয়ে এক বিঘায় দুই কুইন্টাল ডাল ফলাতে কালঘাম ছুটত, সেই জমিতেই জিরো টিলেজ মেশিন দিয়ে বীজ ও সার ফেলে এক বিঘায় তিন থেকে সাড়ে তিন কুইন্ট্যাল মুসুর ডাল ফলাতে শুরু করেছেন তাঁরা। এটা সম্ভব হয়েছে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের পরামর্শে। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মালদহের গাজল, মানিকচক ও চাঁচল ২ ব্লকে একশো বিঘা জমিতে চারটি ফসলের উপর পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছে। বিনা কর্ষণে জমিতে মুসুর ডালের চাষ করে এক বছরের মধ্যে হাতেনাতে এত ভাল ফলন পাবেন ভাবতে পারেননি কালীনগরের অরুণ রায়। অরুণবাবুরা দুইভাই। তাঁদের ২৮ বিঘার মত জমি রয়েছে। এ বছর ধান কেটে ঘরে তোলার পর উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের পরামর্শে মাটিতে কর্ষণ না করেই সাত দিনের মধ্যে ধান গাছে কাটা অংশের ফাঁকে ৮ বিঘা জমিতে মৈত্রেয়ী জাতের মুসুর লাগিয়েছেন অরুণবাবু। সে জমি এখন সবুজ ডালে ভরে গিয়েছে।
তিনি বলেন, “ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কর্ষণের পরে দেশি মুসুরের চাষ করে বিঘায় দেড়-দুই কুইন্টালের বেশি ডাল পাইনি। গত বছরে কৃষি বিজ্ঞানীদের কথা শুনে বিনা কর্ষণে মুসুর লাগিয়ে এক বিঘায় তিন কুইন্টালের বেশি ডাল পেয়েছি। তাই এ বার ৮ বিঘা জমিতে মুসুর ডাল লাগিয়েছি। এ বারেও যে ফলন হয়েছে তাতে বিঘা প্রতি সাড়ে তিন কুইন্ট্যাল ডাল হবে। আমাদের ফলন দেখে এ বছর গ্রামের অনেকেই বিনা কর্ষণে মুসুর ডাল লাগিয়েছে।”
একইভাবে গৌরাঙ্গপুরের নরেশ মণ্ডল বলেন, “ধান কাটার পর পরের ফসল লাগানোর আগে জমি তৈরি করতে প্রচুর খরচ হত। ধান গাছের গোড়া তুলে ট্রাক্টর দিয়ে জমি কর্ষণ করে মুসুর কিংবা সরিষা চাষ করতাম। পরের বীজ রোপণ করতে মাস খনেক সময় লাগাত। কিন্তু বিনা কর্ষণে এই বছর ধান কাটার সাত দিন পরই পাঁচ বিঘা জমিতে মুসুর ডাল লাগিয়েছি। ভাল ফলন হয়েছে। আশা করছি, পাঁচ বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ কুইন্ট্যাল ডালের ফলন হবে।” শ্রীকান্ত সিকদার দুই বিঘায়, নীরোদ সরকার তিন বিঘা ও ঠাকুরদাস রায় দেড় বিঘায় বিনা কষর্ণে মুসুর ডাল লাগিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালদহের আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রের শিক্ষক তপোময় ধর বলেছেন, “প্রতি বার ফলনের পর মাটিকে কর্ষণ করায় উরবর্তা শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সারের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। অথচ এই পদ্ধতিতে চাষে জৈব পদার্থের মাধ্যমে মাটির উবরর্তা বাড়বে।” তিনি জানান, চাষিদের উৎসাহিত করতে মালদহে এই পদ্ধতিতে একশো বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ভুট্টা এবং সর্ষের চাষও শুরু করা হয়েছে। |