কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে। আবার আদালত স্থগিতাদেশ শিথিল করায় শর্তাধীনে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর মাধ্যমে স্কুলশিক্ষক-পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াও ফের চালু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় মেধা-তালিকার ভিত্তিতে কমিশনের মাধ্যমে স্কুলে নিয়োগের দাবিতে যে-সব প্রার্থী অনশন করছেন, তাঁদের দাবির ‘ন্যায্যতা থাকলে’ রাজ্য সরকার যা করার করবে বলে রবিবার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এ দিন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী সরকারের তরফে এই আশ্বাস দেন। তবে সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যাঁদের দাবির কোনও ন্যায্যতা নেই, তাঁদের জন্য কিন্তু আইন ভেঙে সরকারের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
শিক্ষক-পদ প্রার্থীদের একাংশ গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বিধাননগরে এসএসসি-র দফতরের সামনে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, এসএসসি-র মেধা-তালিকায় এগিয়ে থাকা প্রার্থীদের উপেক্ষা করে পিছনের অনেক প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁদের মতো তিন হাজারের কিছু বেশি প্রার্থী। অনশনকারীরা রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের সাহায্যে শনিবার রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তার আগে অনশনকারীদের মঞ্চে গিয়েছেন অন্যান্য দলের নেতারাও।
অনশনকারী প্রার্থীদের বিষয়ে সরকার কী ভাবছে?
ব্রাত্যবাবু এ দিন বলেন, “আমি ওঁদের সঙ্গে দেখা করেছি। এসএসসি-র চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা অধিকর্তাও ইতিমধ্যে ওঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আমাদের বক্তব্য, যে-সব প্রার্থীর দাবি ন্যায্য, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার যা করার অবশ্যই করবে। কিন্তু দাবির ন্যায্যতা না-থাকলে সরকারের পক্ষে আইন ভেঙে কিছু করা সম্ভব নয়। ওঁদের কাছে আমার অনুরোধ, ওঁরা অনশন তুলে নিন।”
এসএসসি-র প্যানেলভুক্ত সকলেই কি চাকরি পাবেন?
ব্রাত্যবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “এটা কোনও কথা হল?” এসএসসি-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের উপরে আদালত তাদের স্থগিতাদেশ শিথিল করার পরে চতুর্থ কাউন্সেলিং হয়ে গিয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
মেধা-তালিকায় অনেক পিছনে থাকা প্রার্থীরা নিয়োগপত্র পেয়ে গেলেও সামনের দিকে নাম থাকা অনেকে তা পাননি বলে অনশনে বসা বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ। আর মামলাতেও জট পাকিয়েছে প্রার্থী-তালিকা নিয়েই। বিএড ডিগ্রিধারীদের জন্য পৃথক তালিকা তৈরি করতে হবে বলে এসএসসি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত। কিন্তু কমিশন একটাই ‘কম্পোজিট’ বা সামগ্রিক তালিকা প্রকাশ করে। তাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, প্রশিক্ষণহীন, সংরক্ষিত শ্রেণি বা অসংরক্ষিত শ্রেণির প্রার্থীদের নাম আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তাই নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়ে নতুন তালিকা চেয়েছিল হাইকোর্ট। পরে অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানান, বিএড ডিগ্রিধারী এবং ওই ডিগ্রি না-থাকা প্রার্থীদের আলাদা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু বিভ্রান্ত করার জন্য সেই তালিকায় তথ্য বদলের অভিযোগ ওঠে উচ্চ আদালতেই।
এই পরিস্থিতিতে স্থগিতাদেশ শিথিল করে নিলেও হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, মামলার চূড়ান্ত রায় কমিশনের বিরুদ্ধে গেলে নিয়োগ বাতিল হয়ে যাবে। তার পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের চালু হলেও যাঁরা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের দাবির সুরাহা হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের উপরে তাঁরা অনেকটাই নির্ভর করছেন।
|
পরীক্ষার্থীরা জানতেনই না, পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। তাই রবিবার পরীক্ষা দিতে গিয়ে হয়রান হতে হল কয়েকশো প্রার্থীকে। পশ্চিমবঙ্গ অত্যাবশ্যক পণ্য নিগমের কিছু পদে নিয়োগের জন্য রবিবার পরীক্ষা ছিল জোড়াবাগানের জ্ঞানভারতী বিদ্যাপীঠে। প্রার্থীদের অভিযোগ, স্কুলে পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন, পরীক্ষা বাতিল। কবে তা হবে, বলতে পারেননি স্কুল-কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশ এসে সামাল দেয়। কেন বাতিল হল পরীক্ষা? খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে দুর্গাপুরে এক প্রার্থী অভিযোগ করায় তদন্ত করে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি তার বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় সংবাদপত্রে। তিনি বলেন, “পরীক্ষার পরবর্তী দিন ঠিক করে বিজ্ঞাপনে জানিয়ে দেওয়া হবে।” |