‘সমস্যা অনেক’ (২১-১) এবং ‘বড় ও ছোট দুর্নীতি’ (৩১-১) শীর্ষক রচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। প্রথম বিষয়ে জানাই, প্রাথমিক শিক্ষা তখনই সফল বলা যাবে যখন এই স্তর পার করার সময় শিশুরা পড়তে, লিখতে ও সহজ অঙ্ক কষতে পারবে। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার আগে-পরে বহু সমীক্ষা হয়েছে, বহু কমিশন বসেছে, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বহু বার পাঠ্যক্রম বদল হয়েছে কিন্তু শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়নি। এর নানা কারণ আছে, সে কথা লেখায় প্রকাশও পেয়েছে। দিন দিন পাঠ্য বিষয়গুলি উপস্থাপন করার ক্ষেত্র সহজ না-হয়ে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনগণের মন না-বুঝে প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দিয়ে শিক্ষাবর্ষ পরিবর্তন করে যে ভুল করেছিল, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়ে হাতে সময় না-নিয়ে অভিভাবকদের মানসিকতা না-বুঝে নতুন যে পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে, তা শিক্ষার অগ্রগতিকে রুদ্ধ করবে বলেই আমার ধারণা। শিশুবেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা পঠনপাঠনে আগ্রহী হয়। এই সময় বিদ্যালয় ও গৃহ-পরিবেশ একটা বিরাট ভূমিকা নেয় শিশুমনে। গৃহ শুধু শিশুর বেড়ে ওঠার জায়গা নয়, গৃহাঙ্গন তার প্রাথমিক শিক্ষা পাঠের সূচনাস্থল। অথচ এ রাজ্যের শিশুরা বাড়িতে পাঠ্যবই নিয়ে যেতে ও পড়তে-লিখতে পারবে না (প্রাক্ প্রাথমিক স্তর থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবই বিদ্যালয়েই থাকবে)। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে হরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিটি সুপারিশ করে প্রথম শ্রেণিতে কোনও পাঠ্য পুস্তক না-রাখার। সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুযায়ী খেলাধুলা ও দৈনন্দিন কাজের মধ্যে শিশু শিক্ষা নেবে। |
১৯৯৬-এ কেন্দ্র রাজ্য সরকারগুলিকে নির্দেশ দেয় যশপাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি করতে, যাতে ব্যাগ হাল্কা থাকে। শিশুরা স্কুলের কাজ স্কুলেই করবে, ‘হোমওয়ার্ক’ দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাড়িতে বই না-নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তা হলে শিশুরা সকাল-সন্ধ্যায় পড়বে না! প্রমোদমাধ্যমগুলি কি ভবিষ্যতে তাদের শিক্ষার অগ্রগতিকে বাধা দেবে না? অথচ শিক্ষাবিদরা বলছেন, পড়াশোনার অভ্যাস শিশুবয়স থেকেই হওয়া দরকার। যা তার পরবর্তী জীবনের অভ্যাসে মিশে যেতে পারবে। বর্তমানে সরকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। সেখানে শিশুদের রোজ ৮/১০টি করে বই পড়তে হয়। সমস্যা এখানেই। সাধারণ মানুষ ভাবছে, সরকারি ব্যবস্থায় পড়াশোনা করলে মোটামুটি নাম সই করা থেকে কিছুটা এগোনো সম্ভব, কিন্তু ভাল ফল করতে হলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আদর্শ। আর এই সবই প্রতিষ্ঠানই সরকারি ব্যবস্থার বিপরীতে হেঁটে সাফল্য পাচ্ছে।
‘বড় ও ছোট দুর্নীতি’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সমস্যার কথা বলা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীর কথা বলা হলেও আমরা বরাবর দেখেছি, ক্ষমতাসীন দল নিয়োগে স্বজনপোষণ করে এসেছে। আর সেই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন অপেক্ষা দলীয় কাজে বেশি সময় ও মন দিয়েছেন। তবে এই আলোচ্য বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা বিদ্যালয়ের প্রধানের হাতে দেওয়ার কথা যে বলা হয়েছে, তাতে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ কি আদৌ সম্ভব? আগে তো উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে (এস এস সি পরীক্ষার আগে) বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির হাতে নিয়োগের ক্ষমতা থাকত। কিন্তু যেখানে যে দলের ক্ষমতা বেশি, তার পরিচালন কমিটি কি প্রধান শিক্ষককে নিরপেক্ষ ভাবে শিক্ষক বাছাইয়ের কাজ করতে দিত? দিত না। সেখানে ব্যক্তিগত ভাবে এক ‘ডোনেশন’ প্রথার সৃষ্টি হয়। যার ফলে এস এস সি পরীক্ষা চালু করতে বাধ্য হয় প্রশাসন।
তপনকুমার দাস। আহ্বায়ক ওয়েস্টবেঙ্গল এডুকেশন নেটওয়ার্ক, হুগলি
|
‘বিকেলের মৃত্যু, রাতের জন্ম’ (১-২) শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ে স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হলাম। স্কুল জীবনের ফেলে-আসা বিকেলগুলো যেন নতুন করে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। হাওড়া শহরের যে অংশে আমার মেয়েবেলা কেটেছে, সেখানে বাড়ির আশপাশে ছিল একাধিক খোলা মাঠ, জল টলটলে পুকুর। স্কুল থেকে ফিরে বই-খাতা রেখে নাকে-মুখে গুঁজে ছুটতাম মাঠে। সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে হাডুডু, বুড়িবসন্ত, এক্কাদোক্কা, চোরচোর। এমনকী ডাংগুলিও খেলা হত। সন্ধের মুখে যখন বাড়ি ফিরতাম মশার ঝাঁক মাথার উপরে পাক খেত। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বসতাম। আক্ষরিক অর্থে বিকেলগুলো ছিল ‘দিনমানে একটিই খুশির সময়’। এমনই এক ঝিরঝিরে বৃষ্টি-ভেজা গোধূলিতে আকাশে প্রথম বার রামধনু দেখেছিলাম।
আজকের স্কুল পড়ুয়াদের জীবনে ‘রাতের জন্ম হয়েছে’ এমনটা মেনে নিতে দ্বিধা থাকলেও বিকেলের যে মৃত্যু হয়েছে, এ বিষয়ে আমি লেখকের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। বোকা বাক্স, সেলফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের হাত ধরে পৃথিবীটা এখন ছোট হতে হতে স্কোয়্যার ফুটের হিসেব কষে বানানো ফ্ল্যাটের ড্রইংরুমে বন্দি হয়েছে ঠিকই, আর ছোটদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে উন্মুক্ত আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে রামধনু দেখার বিস্ময়, খোলা মাঠে ছুটোছুটি করে খেলার আনন্দ। ওদের একান্ত আপন বিকেলগুলো চুরি করে নিয়েছে ছবি আঁকা, গান, নাচ, আবৃত্তির ক্লাস, বোকাবাক্সের কার্টুন অথবা কম্পিউটার গেমস।
আশ্চর্য নয় যে, ছোট থেকেই ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, নানান মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেক স্কুল পড়ুয়াই। ওদের অনেকেই জানে না কনে-দেখা আলো কাকে বলে। হাডুডু, এক্কাদোক্কা, বুড়িবসন্ত, চোরচোর, ডাংগুলি এ সব খেলার নামই শোনেনি ওরা। বিকেলের সম্পূর্ণ মুক্তির আস্বাদ ওদের জীবনে নেই। তাই আজকের অমলকান্তিরা আর রোদ্দুর হতে চায় না।
মহুয়া মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-১০৮
|
‘গরিব রোগীদের চিকিৎসায়...’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদনে (১৪-০২) তথ্যগত ভুল আছে। আমেরিকা নিবাসী আমার ভাগিনেয়ী প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সুনন্দা বসু তাঁর পিতামাতার (ড. চুনীলাল ও শ্রীমতী অমিতা গঙ্গোপাধ্যায়) স্মৃতিরক্ষার্থে রামকৃষ্ণ সারদা আশ্রম মাতৃভবনকে কুড়ি লক্ষ টাকা দান করেছেন, যা দিয়ে দরিদ্র রোগীদের জন্য মাতৃভবনে একটি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। মাতৃভবনের অনুষ্ঠানে আমার ভূমিকা ছিল প্রধানত সেই শয্যাটির ফলক উন্মোচন করা। আমার দানে ওই শয্যা স্থাপিত হয়নি।
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা-২৯ |