জমা দেওয়া বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফি ফেরত দেওয়ার দাবি তুলেছে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। দেড় বছর আগে শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সে সময়েই ফি কাঠামো নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন তাদের আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিয়ে বৈঠকেও বসেন পুর কর্তৃপক্ষ। যদিও, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির অভিযোগ, আপত্তি সত্ত্বেও পুর কর্তৃপক্ষ ফি-কাঠামোয় দাবি মতো ছাড় দেয়নি। এ বারে ফি বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ আইনি প্রশ্নের মুখে পড়ায়, বর্ধিত ফি ফেরতের দাবিতে সরব হয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি।
রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে গত শুক্রবার পুরসভার বোর্ড মিটিঙে প্রশ্ন ওঠে। ফি নিয়ে পুরসভার পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে আগামী ১ মার্চ বিশেষ বোর্ড মিটিং হবে পুরসভায়। ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)-এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পুরসভা যখনই নতুন ট্রেড লাইসেন্স করার ও নবিকরণের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই আপত্তি করি। এক ধাক্কায় অনেকটা ফি যেমন বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তেমনিই পুর কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়মে একটি দোকানের ক্ষেত্রে একাধিক ট্রেড লাইসেন্স নিতে হতো। বিধি মেনে ফি বাড়ানো হলে, এই অসামঞ্জস্য হতো না। পুরসভাকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।” পুরসভার ফি বাড়ানো নিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি মূলত তিনটি আপত্তি তোলে। দ্বিগুণ বা তিন গুণ হারে ফি বাড়ানো। এক দোকানে একাধিক পণ্য বিক্রির জন্য একাধিক লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম করা হয় নতুন ফি কাঠামোতে। বড় ও ছোট দোকান বিচারের মাপকাঠি নিয়েও ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তোলেন। শিলিগুড়ি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমপ্রকাশ অগ্রবাল অভিযোগ করে বলেন, “বেসরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে নুন্যতম লাইসেন্স ফি পাঁচশো টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ বাজার টাকা করে দেওয়া হয়। সবক্ষেত্রেই কর হার নির্ধারণ নিয়ে বৈষম্য হয়। পুরসভার বৈঠকেই সাফ হয়ে গিয়েছে, যে ওই ফি বৃদ্ধির পদ্ধতি সঠিক নয়। আমাদের দাবি, অবিলম্বে বর্ধিত কর ফেরত দেওয়া হোক। ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের জন্য পুর কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়ে নিক।”
বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র দে বলেন, “একাধিক বার আশ্বাস দিয়েও পুর কর্তৃপক্ষ ফি কমায়নি। এবার নীতিগত ভাবে সেই বর্ধিত ফি পুরসভা ফেরত দিক।” শিলিগুড়ির হার্ডওয়ার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদ্যুম্ন সিংহ চৌহান বলেন, “পুরসভা নিজেই বলছে, যে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত আইন মেনে হয়নি। সুতরাং এবার আইন মেনে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।”
যদিও মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “আগে যে ভাবে ফি বাড়ানো হতো, সেই পদ্ধতিই মানা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। আমাদের মনে হয়, কোনও অনিয়ম হয়নি। তবু আইনগত সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুতরাং এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসা সঙ্গত নয়। ফি কমানো নিয়েও আলোচনা হবে।” গত শুক্রবার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলর নান্টু পালের তোলা প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই আইনগত জটিতলার দিকটি প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এ দিন নান্টুবাবু পাল্টা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই পুরবোর্ডকে সর্তক করেছিলাম। ওরা শোনেনি। তাই বোর্ডের সভায় প্রশ্ন তুলি। ফি বাড়ানো নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছে, তো বোর্ডের সভার বিবরণে নথিবদ্ধ করানো হয়েছে। এটা নিয়ে আর বির্তকের অবকাশ নেই।”
পুরসভায় ক্ষমতাসীন কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশের দাবি, গত শুক্রবারের বোর্ড মিটিঙে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আলোচনা শেষ হয়নি। একটা পর্যায়ে এসে তা স্থগিত হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম দিনের বৈঠকে কংগ্রেস কাউন্সিলরেরাও পাল্টা আইনি ব্যাখা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ফি ফেরত চেয়ে দাবি তুললেও আপাতত বিশেষ বোর্ড সভার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিও। |