বিয়েতে রাজি না হওয়ায় পড়শি শিক্ষিকার মুখের ভিতরে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল এক যুবক। ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত উজ্জ্বল মণ্ডলের হদিস না পাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েই এ বার প্রশ্ন উঠে গেল।
তবে, শনিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে পুলিশ ওই যুবকের বাবা বিশ্বনাথবাবুকে গ্রেফতার করে। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। গুরুতর জখম শিক্ষিকাকে স্থানান্তর করা হয়েছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে উজ্জ্বলদের বাড়ির নীচেই একটি সোনার দোকান রয়েছে। সন্দেহ সেখান থেকেই নাইট্রিক অ্যাসিড সংগ্রহ করেছিল সে। তবে ঘটনার পর থেকে ওই দোকান বন্ধ করে উধাও হয়ে গিয়েছেন সোনার দোকানের মালিকও। পুলিশ তারও খোঁজ করছে।
সরকারি নির্দেশ অনুসারে স্বর্ণকারদেরও সোনা গলানোর জন্য নাইট্রিক বা সালফিউরিক অ্যাসিড কিনতে গেলে সে ব্যাপারে বৈধ লাইসেন্স থাকা জরুরি। তবে বিভিন্ন জেলার সোনার দোকানগুলি সেই সব নিয়মের বিশেষ তোয়াক্কা করে না বলেই পুলিশ জানিয়েছে। মালদহ পুলিশের সন্দেহ, উজ্জ্বলদের বাড়ির নিচের সোনার দোকানিও সেই তালিকায় পড়েন। নিয়ম ফাঁকি দেওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে তাই দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির মালদহ জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল সরকারের মন্তব্য। তিনি বলেন, “মালদহে প্রায় পাঁচ হাজার স্বর্ণ ব্যবসায়ী রয়েছেন এবং তাঁদের কারও অ্যাসিড কেনার বৈধ লাইসেন্স নেই। মালদহে ১৬টি সোনার কারখানা রয়েছে। সব জায়গায় বেআইনিভাবেই অ্যাসিড কেনাবেচা হচ্ছে।” তিনি জানান, মাসখানেক আগে মালদহ জেলা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের এক বৈঠকে এ ব্যাপারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সতর্কও করেছিলেন তিনি। প্রস্তাব দিয়েছিলেন, “এ বার বৈধ পথে হেঁটে লাইসেন্স নিয়ে অ্যাসিড কেনাবেচা করা হোক।” তবে সে ব্যাপারে যে বিশেষ সাড়া মেলেনি বৃহস্পতিবার মালদহের বৈষ্ণবনগরের ঘটনা তারই প্রমাণ। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবের মন্তব্য, “লাইসেন্স ছাড়া কী করে অ্যাসিড কেনাবেচা হচ্ছে তা খোঁজ নিতে বলেছি। আমরা অচিরেই কড়া ব্যবস্থা নেব।”
গত জানুয়ারি মাসেও একই ভাবে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অ্যাসিড-আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার এক মহিলা। রাজ্য জুড়ে অ্যাসিড আক্রমণের অহরহ এমন ঘটনা রুখতেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, ১৮ বছরের নীচে কাউকে অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না। সেই সঙ্গে যিনি অ্যাসিড কিনছেন তাঁর নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখে রাখতে হবে বিক্রেতাকে। যে সব দোকানে অ্যাসিড বিক্রি করা হয় সেখানে গিয়ে স্থানীয় পুলিশকে নিয়মিত অ্যাসিডের স্টক ও বিক্রির পরিমাণের হিসেবও রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
তবে সে ব্যাপারে পুলিশ যে বিশেষ তৎপর নয়, মালদহের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। |