প্রকাশ্য ধূমপান বন্ধের চেষ্টা নিয়েই নানা প্রশ্ন
ইন আছে। আছে শাস্তির বিধানও। কিন্তু তা রয়ে গিয়েছে স্রেফ খাতায়-কলমেই। তাই প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করায় আজও অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শনিবার প্রকাশ্যে ধূমপান রুখতে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল লালবাজারে। কর্মশালায় উপস্থিত পুলিশ অফিসারেরা আইন নিয়ে উৎসাহ দেখালেও তার কতটা বাস্তবায়ন করা যাবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দিহান তাঁরা। পুলিশের একাংশই বলছে, শহরে তড়িঘড়ি ধূমপান বন্ধ করতে গেলে অশান্তি ছড়াতে পারে।
২০০৩ সালে পাশ হয়েছিল ধূমপান-বিরোধী আইন। কিন্তু এ শহরে তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রকাশ্যে ধূমপান করার জন্য কাউকে জরিমানা করা হয়েছে, তেমনটা মনে করতে পারছেন না পুলিশকর্তারা। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, আইনের ফাঁকেই এর বাস্তবায়ন হয়নি। তাঁদের যুক্তি, পুলিশ ছাড়াও সরকারি অফিসার, শুল্ক অফিসার-সহ নানা দফতরের কর্তাদের আইন বলবৎ এবং জরিমানা করার ক্ষমতা রয়েছে। এমনকী, বেসরকারি সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগের ম্যানেজারদেরও এই ক্ষমতা রয়েছে।
এতগুলি দফতরের দায়িত্ব থাকায় কোনও দফতরই নিজের চেষ্টায় এই আইন বলবৎ করে না। পাশাপাশি, শহরের যা পরিকাঠামো, তাতেও আইন বলবৎ করায় অসুবিধা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। “কলকাতায় প্রতি এক হাত অন্তর একটি করে বিড়ি-সিগারেটের দোকান। হঠাৎ করে তা ভাঙতে গেলে ওই দোকানদারদের রুজি-রোজগারে টান পড়তে পারে। আর তা হলেই অশান্তি বাধার আশঙ্কা প্রবল।” মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।
সুখটান। শহরের পথে। —নিজস্ব চিত্র।
যদিও এই আইনকে হাতিয়ার করেই পঞ্জাব-হিমাচল, এমনকী সিকিমও প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ করতে পেরেছে। সম্প্রতি সিকিমে বেড়িয়ে আসা এক বাঙালি বললেন, “রাস্তাঘাটে পকেট থেকে সিগারেট বার করলে স্থানীয় লোকজনই বাধা দেন।” দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন শহর, চণ্ডীগড়, সিমলাতেও একই ছবি।
কিন্তু এ রাজ্যে ছবিটা একেবারে উল্টো। রাস্তাঘাট, বাসস্ট্যান্ড সর্বত্র অবাধে ধূমপান চলে। সিগারেট-বিড়ির দোকান বসে হাসপাতাল চত্বরেই। ফলে ধূমপায়ীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও বিষ-ধোঁয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ধূমপায়ীদের থেকেও পরোক্ষ ধূমপান (প্যাসিভ স্মোকিং) আরও ক্ষতিকর। পরোক্ষ ধূমপায়ীদের হাঁপানি কিংবা শ্বাসনালির ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে। কলকাতার ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা আরও বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কলকাতার বায়ুদূষণ মাত্রাছাড়া। ফলে এখানে হাঁপানি কিংবা শ্বাসনালির ক্যানসারের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। পরোক্ষ ধূমপান বাড়তে থাকলে সেই আশঙ্কা আরও বাড়বে বলেই চিকিৎসকদের আশঙ্কা। সেই কারণেই কলকাতায় প্রকাশ্য ধূমপান বন্ধ করা উচিত বলে তাঁরা মনে করছেন।
এ দিন কর্মশালাতেও সে কথাই বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশ অফিসারদের। জানানো হয়েছে, বাসস্ট্যান্ড, হোটেল-রেস্তোরাঁ, রেল স্টেশনের মতো জনবহুল জায়গায় প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ২০০ টাকা জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি দোকানের বাইরে সিগারেট-বিড়ির বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না এবং স্কুল-কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে সিগারেট-বিড়ি বিক্রি করা যাবে না। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধূমপান বিরোধী বোর্ড লাগানো এবং প্রতিষ্ঠানে আলাদা স্মোকিং জোন চালুর কথাও বলা হয়। জরিমানা আদায়ের জন্য প্রায় ৪০টি থানায় চালানও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
তা হলে কি এ বার শহরের ধোঁয়াটে ছবিটা বদলাবে? লালবাজারের কর্তারা কিন্তু তেমন বলছেন না। কলকাতার যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষের কথায়, “আইন নিয়ে প্রশাসনের সব স্তরে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে। এটা তারই অঙ্গ।” যদিও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অধিকর্তা নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় পুলিশ অফিসারদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ করেছেন। একটি সূত্রের খবর, শহরে ধূমপান-বিরোধী আইন বলবৎ করতে আগামী দিনে কলকাতা পুরসভার অফিসারদের নিয়েও এমন কর্মশালা করা হবে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.