বিয়েতে রাজি না-হওয়ায় এক তরুণীর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই তরুণীর জিভ, গাল পুড়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর খাদ্যনালীও। তিনি কথা বলতে পারছেন না। মালদহ বৈষ্ণবনগরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ওই তরুণীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন তাঁর মা-ও। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম উজ্জ্বল মণ্ডল। সাউথ মালদহ কলেজ থেকে স্নাতক উজ্জ্বলের বাড়ি বাঙালিপাড়ায়। কলেজেই ওই তরুণীর সঙ্গে অভিযুক্তের আলাপ। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ওই তরুণী একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ান। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, উজ্জ্বলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও তিনি কখনও তাঁকে বিয়ে করার কথা ভাবেননি। কিন্তু উজ্জ্বল ও তাঁর পরিবার তাঁদের বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তবে নিজের মতেই অনড় ছিলেন ওই তরুণী।
ওই তরুণীর বাবা বিড়ি ব্যবসায়ী। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। তিনি ও তাঁর ছেলে ওই সন্ধ্যায় বাড়িতে ছিলেন না। ওই তরুণীর মা জানান, সাড়ে ৭টা নাগাদ অভিযুক্ত তাঁদের বাড়ি যান। তিনি বলেন, “দরজা খুলতেই উজ্জ্বল একটি পাইপগান বের করে আমার কপালে ধরে মেয়ে কোথায় জানতে চায়। এর পর ছুটে ঘরে ঢুকে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে মেঝেয় ফেলে দেয়। তার পরে পকেট থেকে একটি বোতল বের করে ওর মুখে ঢালতে থাকে।” তিনি জানান, যন্ত্রণায় মেয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। তিনি ছুটে যান। অভিযুক্ত তখন তাঁর মুখেও অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যান। তাঁর আঘাত অবশ্য গুরুতর নয়। তাঁদের এক প্রতিবেশী বলেন, “হঠাৎ দেখি একটি ছেলে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মোটর সাইকেলে পালিয়ে গেল। ভিতরে গিয়ে দেখি ওঁদের মেয়ে ছটফট করছে।” ওই তরুণীকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। সুপার মহম্মদ রসিদ বলেন, “ছাত্রীটির মুখের ভিতরে ও বাইরে অনেকটা পুড়ে গিয়েছে। খাদ্যনালীও পুড়ে গিয়েছে। চিকিৎসার জন্য একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।”
অ্যাসিড জোগাড় হল কোথা থেকে? বৈষ্ণবনগর থানার আইসি মানিক দেবনাথ জানান, অভিযুক্তের বাড়ির নীচেই একটি সোনার দোকান রয়েছে। সেখান থেকে নাইট্রিক অ্যসিড জোগাড় হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দোকানটি এ দিন বন্ধ ছিল। ওই তরুণীর বাবা বৈষ্ণবনগর থানায় উজ্জ্বল, তাঁর বাবা ও দুই দাদার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “মেয়ে উজ্জ্বলকে বিয়ে করতে রাজি ছিল না। কিন্তু ওদের বাড়ির লোক দু’বছর ধরে বিয়ের জন্য চাপাচাপি করছিল। আমার স্ত্রী না এলে উজ্জ্বল মেয়েকে মেরেই ফেলত।”
অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বৃদ্ধ ঠাকুমা ও বড় বৌদি আছেন। বাকিরা পলাতক। অভিযুক্তের বড় বৌদি বলেন, “শ্বশুর, দুই দেওর ও আমার স্বামী সকাল থেকেই বাড়িতে নেই। শুনেছি উজ্জ্বল কারও মুখে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে। তবে ঠিক কী হয়েছে, তা জানি না।” |