আবর্জনা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ নতুন নয়। এ নিয়ে পুরসভার কাছে দরবার, স্মারকলিপি পেশ হামেশাই হয়। কিন্তু, রেলশহর খড়্গপুরে আবর্জনার জন্য সমস্যায় পড়ছে খোদ বায়ুসেনা।
জঞ্জালের স্তূপে জড়ো হচ্ছে পাখির দল। আবর্জনা খুঁটে খাচ্ছে, তারপর উড়ে যাচ্ছে আকাশে। এর জেরে বায়ুসেনার বিমানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলাইকুণ্ডা বায়ুসেনার পক্ষ থেকে খড়্গপুর পুরসভাকে জানানো হয়েছে, তারা যাতে যত্রতত্র আবর্জনা না ফেলে। কলাইকুণ্ডা সেনা ছাউনিতে রয়েছেন বহু কর্মী ও আধিকারিক। তাঁদের পরিবারেরও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ভেতরে। সেখানেও জমা হয় আবর্জনা। সেই আবর্জনাই বা তাঁরা ফেলবেন কোথায়? খড়্গপুর পুরসভার তাই আবেদন জানানো হয়েছে, তারা যেন কলাইকুণ্ডা বায়ুসেনা ছাউনির আবর্জনা ফেলার জন্যও কিছুটা জমি দেন। বায়ুসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেনা ছাউনি থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত কোনও আবর্জনা ফেলা যাবে না। তাহলে প্রচুর পাখি, বিশেষ করে কাকের উৎপাত হয়। এ দিকে হামেশাই বায়ুসেনার মহড়া চলে। তিন কিলোমিটারের মধ্যে আকাশে প্রচুর পাখি উড়লে বিমান দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। পুরসভার পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, পুরসভারই আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। তারা কী ভাবে কলাইকুণ্ডাকে সাহায্য করবে। বায়ুসেনা এবং পুরসভা দু’পক্ষই জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “আবর্জনা নিয়ে একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কী ভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় তা খতিয়ে দেখছি।” |
খড়্গপুর পুরসভার পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “কলাইকুণ্ডা বায়ুসেনার পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, আমরা যাতে যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলি। এক্ষেত্রে পাখি আসার কারনে বিমান দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কলাইকুণ্ডার দিকে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে আমাদের ৭ একর জমি ছিল। যেখানে আবর্জনা ফেলা হত। এই সমস্যার কারনে এখন সেখানে আবর্জনা ফেলা বন্ধ করেছি। এর বাইরেও যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা নিয়ে বায়ুসেনা বারেবারেই প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আমরাও সমস্যায় পড়েছি। তাই জেলাশাসকের কাছে অন্য কোনও এলাকায় ৪ একর জমি চেয়ে আবেদন জানিয়েছি।”
খড়্গপুর পুরসভায় ৩৫টি ওয়ার্ড। গড়ে প্রতিদিন ১ মেট্রিক টন আবর্জনা জমে শহরে। কিন্তু কোথায় সেই আবর্জনা ফেলা যাবে। কলাইকুণ্ডা বায়ুসেনার প্রবল আপত্তিতে জাতীয় সড়কের ধারে আবর্জনা ফেলা বন্ধ হয়েছে। মীরপুর এলাকাতেও এখন বসতি হয়ে যাওয়ায় সেখানেও আবর্জনা ফেলা যাচ্ছে না। ফলে রাস্তার ধারের ভ্যাটগুলি উপচে পড়ছে। তাতে এলাকাবাসীর ক্ষোভ জমতে থাকায় সেখান থেকে তুলে চৌরঙ্গীর কাছে রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। খড়্গপুর শহর ঢোকার আগেই এমন দুর্গন্ধ নিয়ে মানুষকে ঢুকতে হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সেখানেই বা কত পরিমাণ আবর্জনা ফেলা সম্ভব। ফলে শহরের যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা শুরু হয়। যা নিয়ে ফের আপত্তি জানিয়েছে বায়ুসেনা। প্রশ্ন উঠছে, কেন ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। তাহলে আবর্জনা সমস্যা মেটার পাশাপাশি পুরসভার আয়ও বৃদ্ধি হত। পুরপ্রধানের কথায়, “এই পরিকল্পনার কথাও আমাদের মাথায় রয়েছে। দেখি প্রশাসন যদি জমি দিতে পারে। সামনেই বোর্ড মিটিং রয়েছে। সেখানেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। বায়ুসেনার আপত্তি তো অমান্য করা যাবে না। তাই কিছু একটা পথ খুঁজে বের করতেই হবে।” দেখা যাক, পুরসভা কী পথ খুঁজে বের করে। উপযুক্ত পথ পেলে শুধু যে বায়ুসেনার সমস্যা মিটবে তা-ই নয়, শহরবাসীও জঞ্জাল, দুর্গন্ধ আর দূষণ থেকে মুক্তি পাবেন। এই আশাতেই পথ চেয়ে শহরবাসী। |