সম্পাদকীয় ১...
বিস্ফোরণের পথে
বাণিজ্যিক সংস্থার আর্থিক পরিচালনায় একটি ধারণা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাহাকে ‘ব্রেক-ইভ্ন পয়েন্ট’ অর্থাৎ আয়ব্যয়ের ভারসাম্যের মাত্রা বলা হইয়া থাকে। একটি ব্যবসার স্বাভাবিক খরচ উসুল করিতে যতটা আয় আবশ্যক, তাহাই এই মাত্রাটি নির্দিষ্ট করিয়া দেয়। ব্যয়বৃদ্ধির ফলে এই মাত্রাটি যত বাড়ে, ব্যবসার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আয়ের অঙ্কটি ততই বেশি হয়, সুতরাং আয়ের সুযোগ সমান বা বেশি হারে না বাড়িলে ব্যবসা চালানো তুলনায় বেশি দুষ্কর হইয়া পড়ে, আয় বাড়িলেও লাভ বাড়ে না। এক কথায় বলিলে, ব্রেক-ইভ্ন পয়েন্ট যত উপরে, ব্যবসার স্বাস্থ্যরক্ষা ততই কঠিন। সরকার চালানো আর ব্যবসা চালানো এক নয়, কিন্তু উভয়ের অর্থনীতির মধ্যে বড় রকমের সাদৃশ্য আছে। সরকারি ব্যয় যত বেশি হয়, আয়ব্যয়ের কাঠামোয় ভারসাম্যের মাত্রাটি তত উঁচুতে ওঠে, রাজস্ব বাড়াইয়াও সেই ব্যয় সামলানো ততই দুরূহ হয়। সরকারের লাভ করিবার প্রশ্ন নাই, কিন্তু তাহার ক্ষেত্রে ভারসাম্যের অভাব যে রূপ ধারণ করে, তাহার নাম ঋণ-বিস্ফোরণ। আয় বাড়িলেও ব্যয় সামাল দেওয়া যায় না, ফলে ঋণের বোঝা বাড়িয়া চলে।
অমিত মিত্র বাণিজ্যের দুনিয়া হইতে সরকারি অলিন্দে আসিয়াছেন। ব্রেক-ইভ্ন পয়েন্টের রহস্য তাঁহার সুবিদিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর আসনে বসিয়া তাহার মর্ম তিনি যতখানি বুঝিতেছেন, অতীতে কখনও তাহা বুঝিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। অমিতবাবু সরকারি রাজস্ব আদায়ে লক্ষণীয় উন্নতি করিয়াছেন। প্রধানত কর ব্যবস্থা ও কর আদায় পদ্ধতির সংস্কারের মাধ্যমেই এই উন্নতি আসিয়াছে। বলা চলে, দক্ষতা বাড়াইয়া আয়বৃদ্ধির বাণিজ্যিক পথই তিনি অনুসরণ করিয়াছেন। ইহা অবশ্যই কৃতিত্ব। কিন্তু এতটা রাজস্ব বৃদ্ধির পরেও তিনি কি সরকারি ঋণের বোঝা লাঘব করিতে পারিয়াছেন? ইহা সত্য যে, তাঁহার পূর্বসূরিরা ঋণের বিপুল বোঝা তাঁহার তথা তাঁহাদের সরকারের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া গিয়াছেন, সেই বকেয়া ঋণ পরিশোধ করিতেই রাজ্যের নাভিশ্বাস উঠিতেছে। কিন্তু কোনও সরকারই অতীতকে অস্বীকার করিতে পারে না। উত্তরাধিকার যত সমস্যাসঙ্কুলই হউক, তাহার মোকাবিলা করিতেই হইবে। অমিত মিত্র যে বাণিজ্যিক দক্ষতায় রাজস্ব বাড়াইয়াছেন, তাহার অনুরূপ দক্ষতাতেই তাঁহাকে ঋণের বোঝা ক্রমশ কমাইয়া আনিবার পরিকল্পনা করিতে হইবে। তাহা কঠিন কাজ, সময়সাপেক্ষও বটে। কিন্তু কোষাগারের ভারসাম্য ফিরাইবার দ্বিতীয় কোনও উপায় নাই। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করিয়া সমস্যার সমাধান হইবে না।
উদ্বেগ ঠিক এইখানেই। ঋণ-প্রবণতা কমা দূরে থাকুক, বর্তমান সরকারের আমলে তাহা আরও বাড়িয়া গিয়াছে। বামফ্রন্ট সরকার প্রায় দুই লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা রাখিয়া গিয়াছিল, তিন বছরে সেই বোঝা প্রায় চল্লিশ শতাংশ বাড়িতেছে। অর্থাৎ রাজ্য বাজেটের অন্তর্নিহিত আর্থিক সংকট আরও গভীর হইতেছে। আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাফল্য সত্ত্বেও। এবং, অমিত মিত্র মহাশয় নিশ্চয়ই জানেন, রাজস্ব ব্যবস্থায় যে সংস্কারের সুফল তিনি কুড়াইয়াছেন, তাহা চিরস্থায়ী হইতে পারে না। তিনি যত সফল হইবেন, সেই অবকাশ তত কমিয়া আসিবে। বাজেট পেশ করিবার প্রায় পরমুহূর্তেই প্রায় উনিশ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় মঞ্জুরির দাবি পেশ করিয়া তিনি বুঝাইয়া দিয়াছেন, সরকারি ব্যয়ের লাগাম তাঁহার হাতে নাই। ব্যয়বাহুল্য কমাইতে না পারিলে অথবা আয়ের অন্য পথ খুঁজিয়া না পাইলে রাজস্ব বাড়াইয়া ঘাটতি দূর করিবার পথ ক্রমশ সংকীর্ণ হইবে। তাহার পরিণাম: ঋণ-বিস্ফোরণ। বাজেট পেশ হইয়াছে। অর্থমন্ত্রী এ বার তাঁহার কর্পোরেট টুপিখানি মাথায় পরিয়া ব্রেক-ইভ্ন পয়েন্টটির প্রতি মনোযোগ করিলে ভাল হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.