|
|
|
|
মরিচের ঝাল ভুলে শেষ পাত মিঠেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২১ ফেব্রুয়ারি |
সবটা যে ভাল ছিল, এমনটা বলা যাবে না। গত পাঁচ বছর ধরে লোকসভায় নিত্য ঝঞ্ঝা ও হট্টগোলের ছবি দেশের নজর এড়ায়নি। এমনকী হিসেবপত্রও জানান দিচ্ছে, ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে এ পর্যন্ত হট্টগোলের কারণে সব চেয়ে কম সময় কাজ হয়েছে পঞ্চদশ লোকসভায়। তবু আজ, সংসদে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্যের ছবিটা দেখলে অন্তত বলতে হয়, শেষটা ভাল হল! এমনকী মজা করে সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব শুক্ল তো বলেই ফেললেন, “তিক্ততার পর মিষ্টি পড়ল শেষ পাতে।”
মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তাণ্ডব চলেছিল লোকসভার মধ্যে। সাংসদদের আক্রমণ করেছিলেন সাংসদরাই। এমনকী মরিচগুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়ে এমন আতঙ্ক ছড়িয়েছিলেন যে ঢি-ঢি পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। অথচ আজ পঞ্চদশ লোকসভায় ইতি টেনে ভোটে যাওয়ার আগে সেই সভাতেই অভূতপূর্ব এক সৌহার্দ্যের আবহ গড়ে তুললেন তাঁরাই। শাসক দলের নেতারা বিরোধীদের অভিনন্দন জানালেন। প্রতি-শুভেচ্ছা জানালেন বিরোধীরা। আর তার মাঝেই হাল্কা হাসি-ঠাট্টা, মজা-মস্করা সবই চলল দেদার।
লোকসভার শেষ দিনে আজ সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণ ভাবে চলে অধিবেশন। তবে একেবারে শেষ প্রহরে এসে সভার পরিবেশ আরও মজাদার করে তোলেন লোকসভার নেতা তথা সুশীল শিন্দে। বলেন, “সংসদের এই শান্ত পরিবেশ দেখে ভাল লাগছে। সংসদ এমনই হওয়া উচিত। নইলে ক’দিন আগে এমন অবস্থা হয়েছিল যে, আমি নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” কথা শেষ করার আগেই টিপ্পনি উড়ে আসে বিরোধী বেঞ্চ থেকে, “খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভয় পেলে চলবে!” জবাবে শিন্দে বলেন, “না না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমিও ভয় পাইনি। তবে যে ভাবে সব তেড়ে আসছিলেন, একটু পিছনে হেলে গিয়েছিলাম।” শিন্দের এই বক্তব্যের মাঝেই হঠাৎ উসখুস শুরু করেন সমাজবাদী পার্টির কয়েক জন সাংসদ। তাঁরা সভা থেকে বেরোতে তৎপর হন। তাঁদের উদ্দেশে স্বভাবসুলভ রসিকতা শিন্দের, “আরে যাচ্ছেন কোথায়? ভোটের পর আমরা সবাই ফিরব কিনা কে জানে! তাই আজকের দিনটা যতটা সময় পাচ্ছেন লোকসভায় বসে নিন।” |
বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন... |
|
|
এখানেই থামেননি শিন্দে। লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজকে অভিনন্দন জানাতে গিয়ে বলেন, “বিরোধীদের থেকে অনেক সাহায্য পেয়েছি। সেই জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই। বিশেষ করে সুষমাজিকে। উনি ভীষণ রাগি। সভার মধ্যে বারবার রেগে যান। তবে সংসদের বাইরে ওনার ব্যবহার ও আচরণ বড়ই মধুর। সংসদের বাইরে তিনি এতটাই মিষ্টি করে কথা বলেন যে, মিষ্টান্নও তখন কম মিঠে বলে মনে হয়।” শিন্দের এই কথা শুনে গোটা লোকসভায় হাসির রোল ওঠে। সুষমা তো বটেই, শিন্দের পাশে বসে থাকা হাসতে দেখা যায় সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহকেও।
শিন্দে তাঁর কথা শেষ করতেই উঠে দাঁড়ান সমাজবাদী পার্টি নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব। সংসদের গরিমা অক্ষুণ্ণ রাখার কথা বলে মুলায়ম বলেন, “যতই মতান্তর থাকুক না কেন, সনিয়া গাঁধীর সহযোগিতার কথা ভুলব না। কখনও কোনও আর্জি জানালে তিনি তা ফেলেননি। এমনকী ওঁর হাতে চিরকুট ধরিয়ে এলেও, তা পড়ে সঙ্গে-সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছেন।” পরক্ষণেই বিরোধী বেঞ্চে বসে থাকা লালকৃষ্ণ আডবাণীর উদ্দেশে মুলায়ম বলেন, “আডবাণীজি এই সভার সব থেকে বর্ষীয়ান নেতা আপনি। যতই আপনার সঙ্গে মতাদর্শের ফারাক থাক, আপনাকে শ্রদ্ধা করি। আপনার জন্যই বিজেপি বড় দল হয়েছে। আর এখন আপনাকে অপাঙ্ক্তেয় করে দেওয়ার জন্য বিজেপি-র ক্ষয়ও হচ্ছে।” আডবাণী হেসে ফেলেন। কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে, পরোক্ষে নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করছেন মুলায়ম।
পঞ্চদশ লোকসভার শেষ ধাপে এসে আজ একে-একে বক্তৃতা দেন সকলেই। তার পর সকলের শেষে তাঁর মত জানান বিরোধী দলনেত্রী সুষমা। বলেন, “এটা এমন একটা সময় যে এ বার সকলেই লোকসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন। এই অবস্থায় আমার একটা কথাই সকলকে বলা উচিত, বিজয়ী ভব। কিন্তু বলুন, সেই কপটতা করি কী করে? তা আমি করব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা প্রতিপক্ষ। একে অপরের শত্রু নই। তাই বলছি যশস্বী ভব। অর্থাৎ যশের সঙ্গে সবাই নির্বাচনে লড়ুন।” সুষমা এ-ও বলেন, “পঞ্চদশ লোকসভার ইতিহাসে লেখা হবে, সব থেকে বেশি গোলমাল হয়েছিল এই মেয়াদে। কিন্তু এই পঞ্চদশ লোকসভাতেই পাশ হয়েছে বেশ কিছু মাইলফলক বিল।
শুধু লোকসভা নয়। আজ ভরপুর সৌহার্দ্যের আবহ ছিল রাজ্যসভাতেও। সামনে লোকসভা ভোট। তাই প্রকাশ্যে না হলেও একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন গোপনে। গত কাল সরকারের তেলঙ্গানা বিল নিয়ে বিভিন্ন ত্রুটি ও আপত্তির কথা জানাতে গিয়ে তেড়েফুঁড়ে উঠছিলেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু। আজই তিনিই চিরকুট পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “তেলঙ্গানা বিল পাশ করানোর জন্য সরকারকে ধনবাদ। আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
পঞ্চদশ লোকসভার অধিবেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ছবিটা ছিল অনন্য। দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে তাঁকে স্পিকার মীরা কুমারের কক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন সনিয়া। আবার লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান সুষমা। দীর্ঘ আড্ডা চলে দুই শিবিরে। তার পর বেরিয়ে যাওয়ার আগে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন সনিয়া-সুষমা।
কী বলা যাবে একে? শেষ ভাল! |
|
|
|
|
|