শহরে অগ্নিকাণ্ডের ৯৫ শতাংশই শর্ট সার্কিট থেকে হয় বলে দাবি দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের। মূলত শহরের বাজারগুলোতে অগোছালো ভাবে বিদ্যুতের তার টানার জেরেই তা ঘটে। তা রুখতেই এ বার বাজারগুলোতে মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন দমকলমন্ত্রী। সিইএসসি-র সঙ্গে আলোচনা করে ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে।
দমকল সূত্রের খবর, গত দু’বছরে শহরের সবচেয়ে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে শিয়ালদহ ও হাতিবাগানের দু’টি বাজারে। শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২১ জন মারা যান। তদন্তে দেখা গিয়েছিল, এলোমেলো ভাবে তার টেনে বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছেন দোকানিরা। কোথাও খদ্দেরের মাথার উপরেই তারের কুণ্ডলী। ওই ঘটনার পরে শহরের বাজারগুলোর হাল খতিয়ে দেখে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাজারে অগ্নিকাণ্ড এড়াতেই এ বার মাটির তলা দিয়ে তার নিয়ে যাওয়ার এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন দমকলমন্ত্রী। জাভেদ খানের কথায়, “শুধু মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নয়, প্রতিটি প্রেমিসেসের মিটারও পৃথক হবে। ব্লক মিটার অর্থাৎ একটি মিটার থেকে একসঙ্গে অনেক লাইন দেওয়া হবে না।” দ্রুত আগুন নেভাতে প্রতিটি বাজারে গভীর নলকূপ বসাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাতিবাগান বাজারের অগ্নিকাণ্ডে জলের সংস্থান না থাকায় বেগ পেতে হয়েছিল দমকলকে। মন্ত্রী জানান, পুরসভা ইতিমধ্যেই শহরে ৯০টি গভীর নলকূপ বসিয়েছে। বাকি পাঁচটি বসানোর কাজ চলছে। প্রতিটি নলকূপের সঙ্গে ১০০ মিটার লম্বা হোস পাইপ দিয়ে প্রায় পাঁচতলা পর্যন্ত উঁচুতে জল তোলা যাবে। মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, অগ্নিকাণ্ডে ওই গভীর নলকূপ থেকে জলের সংস্থান হবে।
সূর্য সেন মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুরসভার নিজস্ব ৪৬টি বাজার-সহ শহরের মোট ৩৫৮টি বাজারে সমীক্ষা করেন পুরসভা, পুলিশ, দমকল ও সিইএসসি-র কর্মীরা। দেখা যায়, দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে ২৪০টি বাজার। অন্তত ১৪৫টিতে বৈদ্যুতিক তারের ওয়্যারিংয়ের হাল খারাপ। আগুন লাগলে বেরোনোর পথ নেই ২৪২টি বাজারে। ৮০ শতাংশ বাজারে রাতে শুয়ে থাকে লোক। বিদ্যুতের তার ঝোলানোর ছবিও রীতিমতো আতঙ্কের। দিশাহারা পুর-প্রশাসন এর পরেই অবস্থার বদল ঘটাতে পরিকল্পনা করে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শহরের ৯৫টি জায়গায় গভীর নলকূপ বসানোর সিদ্ধান্ত হয় এর পরেই। |