অনাদায়ী ঋণ আর লোকসান নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যে শীর্ষ পদ ছাড়লেন ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (ইউবিআই) চেয়ারপার্সন ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর (সিএমডি) অর্চনা ভার্গব। তাঁর জায়গায় আসতে পারেন পঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর মুকেশ জৈন।
|
অর্চনা ভার্গব।
—ফাইল চিত্র। |
সরকারি ভাবে অবশ্য স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক পরিষেবা বিষয়ক দফতরের কাছে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আবেদন জানিয়েছিলেন ভার্গব। কেন্দ্রের তরফ থেকেও সঙ্গে সঙ্গেই তা মঞ্জুর করা হয়।
উল্লেখ্য, ইউবিআই-এর শীর্ষ পদে মাত্র ৯ মাস আগেই (২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল) যোগ দিয়েছিলেন ভার্গব। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এই নিয়ে গত আট বছরের মধ্যে ইউবিআই-তে দু’জন সিএমডি কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই পদ থেকে সরে গেলেন। ভার্গবের আগে ২০০৫-এ চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রকাশ সিংহ।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ইউবিআইয়ের পরবর্তী সিএমডি হিসেবে মুকেশ জৈনের নাম বিবেচনা করছে তারা। তবে নতুন সিএমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া আদৌ নির্বাচনের আগে শেষ করা যাবে কিনা, তা নিয়ে ব্যাঙ্ক শিল্পের ওয়াকিবহাল মহল যথেষ্ট সন্দিহান। অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক পরিষেবা বিষয়ক সচিব অবশ্য জানান, খুব শীঘ্রই নতুন সিএমডি নিয়োগ করা হবে।
এ দিকে, ভাগর্র্বের সরে দাঁড়ানো নিয়ে বিভিন্ন মহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ইউবিআইয়ের অফিসারদের মধ্যে অনেকেই বিশ্বাস করতে নারাজ যে, ভার্গব স্বাস্থ্যের কারণে চাকরি ছেড়েছেন। ব্যাঙ্কে অনুৎপাদক সম্পদ বা অনাদায়ী ঋণের পাহাড় জমে ওঠা এবং চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ন’মাসেই নিট লোকসানের বহর ১,৭২৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, অনুৎপাদক সম্পদ যাতে না-বাড়ে, তার জন্য বিভিন্ন স্তরে বিশেষ কমিটি থাকা সত্ত্বেও চটজলদি তা এতটা বেড়ে গেল কী করে? অফিসারদের ওই অংশের মতে, ব্যাঙ্কটির এই অবস্থার জন্য দায় অস্বীকার করা ভার্গবের পক্ষে কঠিন ছিল। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও এ দিন বলেছেন, “বাঙালির ব্যাঙ্ক। বাংলার আবেগ জড়িত। শুধু পদ ছাড়লেই হবে না। যে সব গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে চিঠি দিচ্ছি।” তবে এই পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলেও ভার্গবের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।
ভার্গবের সঙ্গে ইউবিআইয়ের অফিসার, জেনারেল ম্যানেজারদের সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছিল বলে অভিযোগ। অবস্থা এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে, গত জানুয়ারির শেষের দিকে ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজাররা সিএমডিকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে নিজেদের আপত্তির কথা জানান। ওই চিঠিতে ব্যাঙ্কের ১১ জন জেনারেল ম্যানেজারের মধ্যে ১০ জনই সই করেন। চিঠির কপি সরকারি দফতরেও পাঠানো হয়েছিল বলে ইউবিআই সূত্রে খবর।
ইউবিআই-তে অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ইনফোসিসের ফিনাক্ল সফ্টওয়্যারকে দায়ী করে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু ওই অভিযোগের সঙ্গে ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসারদের অনেকেই একমত ছিলেন না। তাঁদের বক্তব্য, ২০০৮ সালে ব্যাঙ্কে ফিনাক্ল চালু হয়। এত দিন কোনও অভিযোগ ওঠেনি। সফ্টওয়্যারটির কার্যকারিতাও পরীক্ষিত। তা হলে এখন অভিযোগ কেন? পরে সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক যুগ্ম বিবৃতিতে ইউবিআই এবং ইনফোসিসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকারও করা হয়েছে।
ইউবিআইয়ের পক্ষ থেকে শুক্রবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যত দিন অর্থ মন্ত্রক নতুন সিএমডি নিয়োগ না-করে, তত দিন ব্যাঙ্কের বর্তমান দুই এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর দীপক নারাঙ্গ ও সঞ্জয় আর্যই ব্যাঙ্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন। |