৭ হাজার হেক্টরে আলুর ক্ষতির আশঙ্কা পশ্চিমে
দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। আলুর পাশাপাশি মুসুর ডাল ও সরষে চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে তিল ও বোরো ধানের চাষে এই বৃষ্টি চাষিদের সেচের খরচ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। কৃষি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃষ্টিতে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর আলু জমিতে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দেড়শ হেক্টর মুসুর ডাল ও ১ হাজার হেক্টরের মতো সরষেতেও ক্ষতি হতে পারে বলে কৃষি দফতরের অনুমান। তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব পেতে আরও অন্তত সাতদিন লাগবে। কৃষি দফতরের মতে, নীচু এলাকার জমি, যেখানে জল দাঁড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা বেশি, সেখানেই ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। টানা সাতদিন যদি ঝলমলে রোদ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত জল শুকিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমতেও পারে। কৃষি দফতরের তথ্য আধিকারিক দুলালদাস অধিকারীর কথায়, “চড়া রোদ হলে দ্রুত মাটি থেকে রস শুকিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। তা না হলে ক্ষতি তো হবেই।” জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “আমরা ক্ষয়ক্ষতির উপর নজর রাখছি। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কৃষকদের কিভাবে সাহায্য করা যায়।”
অসময়ের বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে বেরিয়ে পড়েছে আলু।
মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিজি মৌজায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আলু চাষ হয়। সব থেকে বেশি আলু চাষ হয় মেদিনীপুর সদর ও ঘাটাল মহকুমা এলাকায়। চলতি বছরে জেলায় ৭৩ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় ডাল শস্য, সব্জি ও বোরো ধানেরও চাষ হয় এই সময়। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার জেলায় ১৯১৪ হেক্টর জমিতে মুসুর ডাল ও ২১ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে সরষের চাষ হয়েছিল। এই সময় আলু তোলার যেমন কাজ চলছে তেমনি সরষেও প্রায় পেকে গিয়েছে। কিছু চাষি কাঁচা আলু তুলে বেচে দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ আলুই মাঠে রয়েছে। কারণ, তা কিছুটা পাকিয়ে তোলেন চাষিরা। যাতে বীজ রাখা যায়। ওই আলুউ হিমঘরে সংরক্ষণ করেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আলু চাষের নিয়ম অনুযায়ী, মাটিতে সব সময় রস থাকতে হবে। কিন্তু কিছুতেই যেমন জল দাঁড়িয়ে না থাকে। তাহলেই আলু পচে যাবে। কিন্তু শনিবার ও রবিবার - টানা দু’দিন বৃষ্টি হয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৭.৮ মিলিমিটার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জমিতে জল দাঁড়িয়েছিল। চাষিরা জল বের করার চেষ্টা করেও সর্বত্র সফল হননি। বিশেষত, নীচু এলাকাগুলিতে। ফলে সেখানে জল জমে থেকে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার প্রবল জোরে বৃষ্টি হওয়ায় মাটি থেকে কিছু আলুও বেরিয়ে গিয়েছে। যেগুলি মাটি থেকে বেরিয়ে থাকায় বাতাস লেগে সবুজ হয়ে যাবে। তা বাজারে বিক্রি করা যাবে না। মেদিনীপুর সদর ব্লকের আলু চাষি সুব্রত ঘোষের কথায়, “আমি ৫ বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। তার মধ্যে প্রায় ২ বিঘে জমিতেই জলের তোড়ে মাটি থেকে প্রচুর আলু বেরিয়ে গিয়েছে। এখন জমিতে মাটি ভিজে থাকায় আলু তুলেও নিতে পারছি না। ফলে ভালোই ক্ষতি হবে।” একইভাবে মুসুর ডাল ও সরষেতেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, যে সব সরষে পাকতে চলেছিল, বেশি রস পাওয়ায় তা পাকার সঙ্গে সঙ্গে ফেটে গিয়ে দানগুলি পড়ে যাবে। জমিতে জল থাকায় তা কেটে নেওয়াও যাবে না। আবার পাকা সরষেতে বৃষ্টির ছাঁট লাগায় সেক্ষেত্রেও শিস ফেটে গিয়ে সরষের দানা পড়ে গিয়েছে।
এই বৃষ্টিতে কিছু চাষে ক্ষতি হলেও তিল ও বোরো ধানের ক্ষেত্রে তা সহায়ক হয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছিল। বৃষ্টির পরে তা কিছুটা বাড়তে পারে। কারণ, তিল চাষে বীজ ছড়ানোর সময়েই সেচ দিতে হয়। মাটিতে কিছুটা রস থাকলে দ্রুত গাছ ফোটে। এক্ষেত্রে সেই সেচের খরচ লাগবে না। মাটি একটু শুকনো হলেই তাতে লাঙল দিয়ে বীজ ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। আর যাঁরা আগেই তিল চাষ করেছিলেন তাঁদের একটি সেচের খরচও বেঁচে গেল। এই বৃষ্টির ফলে মাঝ পথে কিছুদিন সেচের প্রয়োজন হবে না। একইভাবে বোরোধানেরও চাষ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত, জেলায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে এই চাষ হয়। নিখরচায় বৃষ্টির জল মেলায় অনেকেই চাষ করতে আগ্রহী হবেন। যাঁরা ইতিমধ্যেই চাষ করে ফেলেছেন, তাঁরা জমিতে বৃষ্টির জল ধরে রেখে দিয়েছেন। ফলে তাঁদের দু’টি সেচের খরচও কমে গেল। সব মিলিয়ে অকাল বৃষ্টি যেমন কিছু ক্ষতি করেছে তেমনি কিছু লাভও হয়েছে চাষির। তবে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে বলেই কৃষি দফতরের অনুমান। সঠিক কী হল, ৭ দিনের মধ্যেই অবশ্য তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.