|
|
|
|
দিঘায় পুলিশি জুলুম, সমুদ্র না দেখেই ফিরলেন দম্পতি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দিঘা |
স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমবার দিঘা বেড়াতে এসেছিলেন কলকাতার মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা নাজির খান। অভিযোগ, সৈকত শহরে পা দিয়েই পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাঁদের। জোর করে পুলিশের গাড়িতে তুলে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয়েছে টাকা। অভিজ্ঞতা এতটাই তিক্ত যে সমুদ্র না দেখেই ফিরে গিয়েছেন ওই দম্পতি। পুলিশের হাতেই পর্যটক দম্পতির হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় শোরগোল পড়েছে পর্যটন কেন্দ্রে। মঙ্গলবার ভোরে বাসে দিঘায় আসেন মেটিয়াবুরুজ কারবালা রোডের বাসিন্দা বছর তিরিশের নাজির খান। সঙ্গে স্ত্রী। |
|
দিঘা থেকে ফেরার পথে সস্ত্রীক নাজির। —নিজস্ব চিত্র। |
ভোর পৌনে চারটে নাগাদ স্ত্রীকে নিয়ে দিঘা বাসস্ট্যান্ডে নামেন। নাজিরের অভিযোগ, বাস থেকে নামামাত্র পুলিশের একটি গাড়ি এসে তাঁদের জোর করে তুলে নিয়ে যায় দিঘা বাইপাস এলাকায়। গাড়িতে ছিলেন পুলিশের উর্দি পরা তিনজন ও সাদা পোশাকে গাড়ি চালক। নাজিরের কথায়, “ওই পুলিশকর্মীরা ১৫ হাজার টাকা চায়। বলে, টাকা না দিলে থানার লক-আপে ঢুকিয়ে কিডন্যাপিং কেসে চালান করে দেবে।” নাজির জানান, সঙ্গের তরুণী তাঁর স্ত্রী। সঙ্গে ভোটার কার্ডও আছে। পুলিশকর্মীরা সে কথায় কান না দিয়ে টাকা দাবি করে হুমকি দিতে থাকে বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত নাজিরদের তল্লাশি করে এক হাজার টাকা আদায় করার পরে পুলিশের গাড়ি তাঁদের বাইপাসের কাছে একটি এলাকায় নামিয়ে দেয়। এর পর স্ত্রীকে নিয়ে কাছেই পুরাতন দিঘার একটি হোটেলে দু’দিনের জন্য ঘর ভাড়া নেন নাজির। কিন্তু ফোনে বাড়িতে সব জানানোর পর পরিজনরা বাড়ি ফিরে আসার পরামর্শ দেন। এ দিন সকালেই বাস ধরে কলকাতা ফিরে গিয়েছেন ওই দম্পতি। তার আগে অবশ্য নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখিত ভাবে জানিয়ে গিয়েছেন দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনকে।
অভিযোগ তো পুলিশের বিরুদ্ধে? তা হলে পুলিশে গেলেন না কেন? কলকাতা থেকে মোবাইলে নাজির বলেন, “ভোররাতে পুলিশের ওই আচরণে আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমরা সাধারণ মানুষ। দর্জির দোকানে কারিগরের কাজ করে সংসার চালাই। পুলিশের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা নেই। তাই আর অভিযোগ জানানোর সাহস পাইনি।” দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, নাজিরের লিখিত অভিযোগটি মোহনা থানায় পাঠানো হবে। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, “নাজির খান তাঁর অভিজ্ঞতার কথা আমাদের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। অন্য কোনও পর্যটককে যাতে এ ভাবে পুলিশের হাতে হেনস্থা না হতে হয় সেই আবেদনও জানিয়েছেন।” এই ঘটনা নিয়ে দিঘার পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে। দিঘা মোহনা থানার ওসি বিপ্লব হালদারের বক্তব্য, “বিষয়টি শুনেছি মাত্র। কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ না পেলে আমাদের কিছু করার নেই।” যদিও রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) অজয় নন্দের আশ্বাস, “ওই দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। পুলিশের হাতে পর্যটকদের হেনস্থা বরদাস্ত করা হবে না। অভিযোগ সত্যি হলে দোষী পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নাজিরের অবশ্য পুলিশ-ভীতি কাটছে না। অভিযোগ জানানো দূর অস্ৎ, বরং তিনি বলছেন, “আর কোনও দিন দিঘামুখো হব না।” |
|
|
|
|
|