বাজেটের খুশির আমেজ মঙ্গলবারও বহাল ছিল শেয়ার বাজারে। এ দিন সেনসেক্স ফের উঠেছে। ১৭০.১৫ পয়েন্ট বেড়ে বাজার বন্ধের সময়ে সূচক এসে দাঁড়ায় ২০,৬৩৪.২১ অঙ্কে। এই নিয়ে গত তিন দিনের লেনদেনে সেনসেক্সের উত্থান ৪৪১ পয়েন্ট। তবে ডলারে টাকার দাম এ দিন পড়েছে ৩৬ পয়সা, যা প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। ইয়েনের মতো এশীয় মুদ্রার দাম কমা এবং ডলারের চাহিদা বাড়াই এর কারণ বলে বাজার সূত্রের খবর। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬২.২০ টাকা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের অন্তর্বর্তী বাজেটে শেয়ার বাজার মোটের উপর খুশি। প্রথমত, বাজারের স্বার্থের প্রতিকূলে কোনও পদক্ষেপ করেননি তিনি। উপরন্তু গাড়ি-সহ বেশ কিছু শিল্পে উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে সেগুলিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। উৎপাদন শিল্পকে উৎসাহ দেওয়ার এই প্রচেষ্টাই শেয়ারে লগ্নিকারীদের সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ।
অবশ্য এর আগে শেয়ার দরে টানা পতন হওয়ার ফলে অনেক ভাল সংস্থার শেয়ার এখন আগের থেকে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িক এই দিন সূচকের উত্থানে অনেকটাই ইন্ধন জুগিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু বড় সংস্থাই নয়, ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ারের চাহিদাও এ দিন বাজারে লক্ষ করা গিয়েছে। বিশেষ করে গাড়ি সংস্থা, ব্যাঙ্ক, যন্ত্রপাতি তৈরির সংস্থার শেয়ার কেনার দিকেই লগ্নিকারীদের ঝোঁক ছিল বেশি।
উল্লেখ্য, যন্ত্রপাতি তৈরির ক্ষেত্রেও বাজেটে চিদম্বরম উৎপাদন শুল্কে ছাড় দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর ফলেই ওই সব সংস্থার শেয়ার কিনতে এ দিন উৎসাহিত হয়ে ওঠেন লগ্নিকারীরা। এ ছাড়া গাড়ি শিল্পে উৎপাদন শুল্ক কমার ফলে গাড়ির দাম কমবে বলেই সকলের ধারণা। গাড়ি বিক্রি বাড়লে ব্যাঙ্কগুলির ঋণ দেওয়ার সুযোগও বাড়বে। এই কারণেই ব্যাঙ্ক শেয়ারের চাহিদাও বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বাজারের পক্ষে ভাল খরব যে, বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি মাঝে লগ্নি কমিয়ে দিলেও ফের তারা শেয়ার কিনতে শুরু করেছে। বাজার সূত্রের খবর অনুযায়ী, গত সোমবারই ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে ৫২০ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার কিনেছে।
তবে শেয়ার সূচকের এই উত্থানকে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানো বলে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, বাজারের মৌলিক উপাদানগুলির কোনও পরিবর্তন এখনও ঘটেনি। বিভিন্ন কারণে মাঝে মধ্যে বাজার বাড়ছে। যেমন, এ বার বাড়ল বাজেটের জন্য। কিন্তু বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার কোনও লক্ষণ এখনও দেখা যায়নি বলেই তাঁরা জানিয়েছেন।
বাজার বিশেষজ্ঞ বিএনকে ক্যপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল মনে করেন, “নির্বাচনের আগে শেয়ার বাজারে স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা কম। অবশ্য কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার গঠন হতে চলেছে, এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও শেয়ার দরে জোয়ার আসতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখনও দেখা যায়নি।”
প্রসঙ্গত, তেলঙ্গানা নিয়ে দেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে-অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তা শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। কারণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত হলে, বিশেষ করে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির আতঙ্কিত হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে। সে ক্ষেত্রে তারা ফের লগ্নি গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যা শেয়ার বাজারের পক্ষে চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে। খান্ডেলওয়াল মনে করেন, বর্তমান অবস্থায় সেনসেক্স ২০ হাজার থেকে ২১ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। |