শনিবারের নিবন্ধ ৩...
সীমান্তরেখা
তিনি নাকি তাঁর লাস্যময়ী ঠোঁটে লিপস্টিক বুলিয়ে নেওয়ার আগে সেটির সঙ্গে কথা বলে নেন!
ব্লাশ-অনকে আদর করে ডাকেন ‘মাই বেবি’।
টিস্যু পেপার গালে ঘষার আগেও ইশারা করে বলে দেন অবাধ্য না হতে!
তিনি রেখা।
উইকিপিডিয়া বলছে তাঁর বয়স ৫৯। ফ্যানেরা বলেন, হয়তো আরও বেশি। কিন্তু আজও কোনও অনুষ্ঠানে তিনি ঢুকলেই ক্যামেরা সব কিছু ছেড়েছুড়ে তাঁকেই ধাওয়া করে। তিনি যে চিরযৌবনা।
এক ঢাল চুল। সিঁথিতে টিকলি। তার নীচে আলতো হয়তো সিঁদুররেখা। পরনে ভারী কাঞ্জিভরম। হেমামালিনীর কন্যা অহনার বিয়েতে রেখার সাজ অনেক কমবয়সিকেও বলে বলে ‘ক্লিন বোল্ড’ করে ছেড়েছে।
হাতের রতনচূড় থেকে মেরিলিন মনরোর সেই লাল লিপস্টিক। তাঁর রূপছটার জৌলুসে মনে হয়েছিল যেন ঝলসে যাবে গোটা চত্বর। হাতে গোনা ক’জন হয়তো মানুষ পাওয়া যাবে, যাঁরা তাঁকে দেখে সেদিন প্রশ্ন করেননি কী ভাবে আজও নিজেকে এ ভাবে ধরে রেখেছেন?
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, নিন্দুকেরা বলছেন এ-সবই হল বোটক্সের বাহাদুরি। গুজব শুনতে ক্ষতি নেই, তবে তার কতটা খাঁটি আর কতটা জল, সন্দেহ তো থেকেই যায়।
অনেকেই বলেন, রেখা নাকি নিজের ফিটনেস নিয়ে আজও খুব সতর্ক। কিছু দিন আগে পর্যন্ত তিনি রোজ ভোরে উঠে ২৫০টা ‘ক্রাঞ্চেস’ করতেন। তার সঙ্গে আছে যোগা, প্রাণায়াম আর মুম্বইয়ের নামকরা এক হোটেলে গিয়ে স্পা করানো। সঙ্গে শতকরা একশো ভাগ নিরামিষ ডায়েট। ডার্ক চকোলেট তাঁর ভীষণ প্রিয়।
আর সাজগোজ? এখনও, আজও ‘ব্যাট-প্যাডে’ একটুও ফাঁক রাখতে দেন না প্রৌঢ়বেলার এই তন্বী।
অহনার মেহেন্দিতে
মায়ের পুরোনো শাড়ি পরাটা খুব পছন্দের। কখনও বা দু’টো শাড়িকে কেটে একটা প্যাটার্ন বানিয়েও পরতে দেখা যায় তাঁকে। ফ্যাশন ম্যাগাজিনে কোথায় কী খুঁটিনাটি বেরিয়েছে তার ‘আপডেট’ রাখেন। যদিও কোনও দিন কিচ্ছুটি কপি করেন না। বরং কখনও নিজেই স্টাইল-স্টেটমেন্ট তৈরি করেন। যেমন একবার শুরু করেছিলেন ডার্ক লিপস্টিক পরার চল। অবসরে বিখ্যাত মার্কিন টক শো হোস্ট অপ্রা উইনফ্রের শো দেখেন। মেজাজ শরিফ রাখতে পছন্দ মেহদি হাসান আর গুলাম আলির গজল। তার সঙ্গে অবশ্যই ম্যাডোনা।
এছাড়াও নিশ্চয়ই আরও অনেক কিছু আছে, বছরের পর বছর যা গুঢ় রহস্যই থেকে গিয়েছে। এই যেমন রেখার মেক-আপ কিটের সঙ্গে কথা বলার অভ্যেস।
“প্রথম বার যখন দেখি রেখা লিপস্টিকের সঙ্গে কথা বলছেন আমি সত্যিই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম,” বলছিলেন ফোটোগ্রাফার জয়েশ শেঠ। জয়েশের কাছে অন্তত এক লাখ নেগেটিভ রয়েছে রেখার। দু’বছর আগেও শ্যুট করেছেন রেখার সঙ্গে।
ছবি তোলার নেপথ্য গল্প শোনাচ্ছিলেন জয়েশ, “ঠোঁট এঁকিয়ে বেঁকিয়ে কত রকম যে উনি ভঙ্গি করতে পারেন। এক বার শ্যুট করতে গিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম অত ভেরিয়েশন কী করে নিয়ে আসেন ‘পাউট’-এ? উত্তরে বললেন, ‘ইট অল ডিপেন্ডস অন মাই লিপস্টিক!’ আমি তখনও ঠিক বুঝিনি। তার পর দেখলাম নিজের লিপস্টিক, ব্লাশ-অন, চুল এমনকী কস্টিউমের সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করলেন। একদম বাচ্চাদের মতো করে ওগুলোকে হাতে নিয়ে বোঝাচ্ছেন। ধরুন একটা লেস ঠিক করে জামার উপরে বসছে না, রেখা বললেন, ‘কাম অন বেবি...’ আমি তো পুরো থ। জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, কার সঙ্গে কথা বলছেন? উত্তর এল, ‘জয়েশ, দে আর মাই বেবিজ। ডু ইউ ওয়ান্ট টু সি দেম লিসেন টু মি?’ এর পর নিজের দোপাট্টাটা অ্যাডজাস্ট করতে করতে ফোল্ডটাকে বোঝালেন, ঠিক যেমনটি চাইছেন সেভাবেই যেন ‘সে’ বসে থাকে! তখন ছবি তুলব কী, এসব দেখেটেখে আমার তো পুরো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা!”
কথা হল শেখর সুমনের সঙ্গে। ওঁর আজও মনে আছে ১৯৮২-র ৩ নভেম্বর তারিখটা। রেখার মুম্বইয়ের বাড়িতে সেদিন নাকি একটা তল্লাশি হয়েছিল। ‘উৎসব’ ছবির শ্যুটিং-এর জন্য তিনি তখন কুন্দাপুরাতে। “অথচ কারও দেখে বোঝার উপায়ই ছিল না, সেদিন তাঁর বাড়িতে কত কী কাণ্ডকারখানা চলছে। একদম পেশাদার ভাবে কাজ করে গেলেন, রোজ যেমন করেন,” বললেন শেখর। মনের লাগাম টানার এই পেশাদারি মোড়কটাও কি রেখাকে আজও তন্বী করে রেখেছে? হতে পারে।
শেখর তখন সবে বাইশ। সদ্য বিয়ে হয়েছে। পটনা থেকে এসে মুম্বইয়ে ফিল্ম করতে শুরু করেছেন। প্রথম ছবিতেই বিপরীতে রেখা। তাও একেবারে যৌনতার দৃশ্যে ভরপুর একটা ছবি। শেখর খুব নার্ভাস। কিন্তু পরিচালক গিরীশ কারনাড তাঁকে বলছেন, একদম ঘাবড়াবে না।
শেখর বলছিলেন, “গিরীশ অভয় দিলেন। বললেন রেখা কনভিন্সড হয়েছেন বলেই কিন্তু আমার সঙ্গে অভিনয় করতে রাজি হয়েছেন। প্রথম দিনই সঙ্গমের দৃশ্য। গিরীশ বললেন, ‘ভুলে যাও তুমি শেখর, ও রেখা।

শেখর সুমন
“ শুনে হাসলেন। সে হাসির ভাষা বোঝে কার সাধ্য?
রেখা চিরকালই প্রহেলিকা। অনেকটা যেন সুচিত্রা সেন”
মনে করো তুমি চারু দত্ত আর ও বসন্তসেনা।’ থিয়েটার করেছিলাম বলে মনটাকে সেভাবেই তৈরি করে নিই। এক টেক-এ ওকে হয়ে গেল। রেখা বললেন: ‘ওকে দেখে তো বেশ কনফিডেন্ট লাগছে। ইসন’ট হি সাপোজড টু বি নার্ভাস?’ সে কথা শুনে গিরীশ ঠাট্টা করে বলে ওঠেন: ‘আরে, ও তো সারা রাত ধরে একটা বালিশের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেছে!’ আমার প্রথম ছেলে আয়ুষকে নিয়ে ‘উৎসব’-এর সেটে গিয়েছিলাম (দুর্ভাগ্যবশত আয়ুষ আজ আর বেঁচে নেই)। তখন শশী কপূর ওকে দেখে বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না যে আমার একটা ছেলেও থাকতে পারে। বললেন, ‘বাচ্চে নে মিলকে বাচ্চা প্যায়দা কিয়া হ্যয়!’ আর রেখাও ওই একই সুরে আমাকে খেপিয়ে গেলেন।” চ্যালেঞ্জ নেওয়া, পরিস্থিতিকে সহজ করে তোলা, অন্যকে নিজের কাছে সহজ হতে দেওয়ার এই যে ব্যক্তিত্ব, এর মধ্যেও কি লুকিয়ে আছে রেখার রূপ-রহস্য? হতে পারে।
সেদিনের অভিজ্ঞতা বলছিলেন শেখর, “সেট-এ দেখলাম রেখা সব সময় ইন-কনট্রোল। কী মেকআপ হবে, কোন কস্টিউম পরবেন সব নিজে ঠিক করতেন।”
সব দেখে শুনে কেমন যেন মোহগ্রস্থের মতো এক দিন হাঁ করে চেয়েছিলেন রেখার দিকে। শেখর বললেন, “আমায় ওভাবে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, অমন করে তাকিয়ে আছি কেন? বলেছিলাম, সাত বছর আগে মুম্বই এসে ‘পরমাত্মা’র শ্যুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে তাঁর অভিনয় দেখতে গিয়ে কত ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। আর সেই আমি নাকি এই রকম একটা ছবি করছি তাঁর সঙ্গে! শুনে হাসলেন। সে হাসির ভাষা বোঝে কার সাধ্য? রেখা চিরকালই প্রহেলিকা। অনেকটা যেন সুচিত্রা সেন। যত কম প্রকাশ পাবে, তত তাঁর প্রতি লোকের কৌতূহল। অথচ কখন কতটা বলতে হবে, কতটা নৈশব্দ্যের প্রয়োজন হবে, সব উনি জানেন।” এই অধরা মাধুরীও কি রেখার সৌন্দর্যের অলংকার? হতে পারে।
পরিচালক রাকেশ রোশন অনেক বার কাজ করেছেন রেখার সঙ্গে। দু’জনে অভিনয় করেছেন ‘খুবসুরত’, ‘বহুরানি’, ‘খুন ভরি মাঙ্গ’ এবং ‘আক্রমণ’-এর মতো ছবিতে।
পরিচালক রাকেশ রোশন রেখাকে ডিরেক্ট করেছেন। পুত্র হৃত্বিক-এর সঙ্গেও কাজ করেছেন ‘কোই মিল গয়া’, ‘কৃষ’ এবং ‘কৃষ ৩’-এ। এখন আবার রেখার সঙ্গে রোশনদের পারিবারিক বন্ধুত্বও হয়েছে। “একসঙ্গে অভিনয় করার সময় আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল। পরিচালক হয়ে দেখেছি রেখা খুব পরিশ্রমী অভিনেত্রী। এক বার স্ক্রিপ্টটা দিয়ে দিলে একটা ডিসকাশন করে নেন। তার পর নিজেই ঠিক করে নেন যে কী ধরনের কস্টিউম পরবেন। সব থেকে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল আমি যখন ওঁকে বলেছি যে কস্টিউমটা হয়তো দৃশ্যের জন্য একটু ‘লাউড’ হয়ে গিয়েছে, ও নিজেই তার অলটারনেটিভ সাজেশন দিয়েছে। এই নয় যে পরে ভেবে অন্য অপশন দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই একটা অনন্য অল্টারনেটিভ রেডি। নিজের পোশাকের খুঁটিনাটির দিকেও তাঁর নজর থাকে সব সময়,” বলছেন রাকেশ রোশন। আর সেটে থাকলে তিনি কিন্তু একদমই গম্ভীর-গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকেন না। “আমরা না হয় পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছি। ইউনিটের অন্যান্যদের সঙ্গে এক বার আলাপ হয়ে গেলেও দেখেছি যে রেখা সবার সঙ্গে বেশ মিলেমিশে যান। খাওয়াদাওয়া নিয়েও কোনও আলাদা ঝামেলা করেন না।” একদিকে অসম্ভব প্রত্যুৎপন্নমতী হয়ে গড় মানুষের থেকে বেশি উচ্চতায় বাঁচা, অন্য দিকে সবার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা এই দুই বিপরীত গুণের আশ্চর্য মিশেল কি পড়ন্ত বেলাতেও ওর শরীরের কিরণ ধরে রেখেছে? হতে পারে।
বছর কুড়ি আগে একটা ফোটোশ্যুটে ভারতের অন্যতম সেরা মেকআপ-আর্টিস্ট মিকি কনট্রাকটরের সঙ্গে কাজ করেন রেখা। “মেকআপটা ও নিজেই করেছিল। মাথায় এক ঢাল চুল। একদম ঈশ্বরপ্রদত্ত। একটা পাগড়ি বানিয়ে শ্যুট করেছিলাম। এত বছর পরেও বলব রেখার শ্যুটে শুধু দাঁড়িয়ে থেকে দেখাটাও একটা শিক্ষা। নিজেই নিজের শ্যুটগুলো স্টাইল করে। এমনকী ব্যাকড্রপটা কেমন হবে সেটাও ঠিক করে দেয়। এক বার দেখেছিলাম বাড়ি থেকে ফেব্রিক নিয়ে এসে বলল, ওটা দিয়েই ব্যাকড্রপটা হবে। শুধু ছবি তোলা নয়, নিজে ছবি এডিটও করেন। তাই আজ অবধি কোনও দিন রেখার একটা বাজে ছবি কেউ কোনও দিন ম্যাগাজিনে দেখেননি। যদি কোনও ফোটোগ্রাফার অবাধ্য হয় তাহলে অন্য কথা। রেখা তার সঙ্গে দ্বিতীয় বার শ্যুটই করেন না,” বলছেন মিকি।
শ্যুটিং-এর সময় নাকি জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই রেখা নিজে করতেই পছন্দ করেন। নিজের পোশাক নিজেই ইস্ত্রি করেন। কোনও হেয়ার ড্রেসার থাকে না। কোনও মেকআপ আর্টিস্টের প্রয়োজন নেই। কিন্তু একটা বিষয়ে তিনি সব সময় খুঁতখুঁতে নাক। জয়েশকে নাকি বলতেন, তোতাপাখির মতো নাক তাঁর। সেটা মাথায় রেখেই শ্যুট করতে হবে। “তাই কোনও সাইড প্রোফাইলে ছবি তোলা যাবে না। বেশি লো অ্যাঙ্গল হলেও চলবে না। তাতে নস্টিলস্গুলো বড় দেখাতে পারে। আবার খুব টপ অ্যাঙ্গলও পছন্দ নয়। প্রথম প্রথম তো বলতেন যে ‘ওয়াইল্ড স্মাইল’টার ছবিও তোলা যাবে না। তখন একমাত্র অবসেশন হল ‘পাউট’, ওর ঠোঁটযুগল। আমি ঠিক করলাম এই ধারণাটা ভাঙতে হবে। বললাম, আমি চাই যে আপনার ফ্যানেরা সত্যিকারের রেখাকে চিনুক। রেখাও শুনবেন না। আমিও ছাড়ব না। শেষে ঝগড়া করতে করতে হেসে ফেললেন। বললেন, ইস এ রকম করে ছবি তুললে আমার দাঁতগুলো দেখা যাবে। আমি নাছোড়। ঝগড়া করতে করতে খচাখচ ছবি তুলে গেলাম। এরকম স্পর্ধা বোধ হয় ওঁর সঙ্গে আর কেউ দেখায়নি। পরে নিজেই ওই ছবিগুলো দেখে একটা পছন্দ করেন। আরেকবার রানির সঙ্গে শ্যুটিং করবেন। কলটাইম সন্ধে সাড়ে পাঁচটা। রেখা আমার স্টুডিয়োতে পাঁচটায় হাজির। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে নিজে মেকআপ করে বেরিয়ে এলেন। তখনও অন্যদের মেকআপ শেষ হয়নি,” বললেন জয়েশ।
শুধু পোশাক নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা কিংবা ক্যামেরার সামনে খুঁতখুতানি নয়, মেকআপ, অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার নিয়েও রেখা অদ্ভুত রকমের ‘ইনোভেটিভ’।
গল্প শোনালেন জয়েশ। একবার উদয়পুরে গিয়েছিলেন একটা শ্যুটে। ঘোড়ার সঙ্গে শ্যুট। ঘোড়াটাও ওঁর কথায় পোষ মেনে গেল।
বাদামি রঙের ঘোড়া দেখে রেখা ঠিক করলেন তার ট্যান মেকআপ দরকার। পরে নিলেন গ্লেয়ারস আর ম্যাচিং লিপস্টিক। আর চুলটা বেঁধে নিলেন পনিটেল করে। আর একবার একটা গাছের গুঁড়ির উপরে বসে শ্যুট করতে হবে। চামড়ার করসেট পরে শ্যুট। রেখার পরনে শুধুমাত্র অন্তর্বাস।
জয়েশ বলতে লাগলেন, “আউটডোর শ্যুট। মনে হল, অসুবিধা হবে। আমি ভাবলাম উনি করসেটটা পরে নেবেন। কিন্তু না। দেখি শুধু গায়ের উপর চাপিয়ে রাখলেন।
ইন্দের কুমারের ‘সুপারনানি’ ছবিতে অভিনয় করছেন রেখা। সেই ছবির সেট থেকে তোলা ছবি দেখলে বোঝা যায়, ‘সোলা শাওয়ন’-এর রেখা আর আজকের রেখার মধ্যে কতটা ফারাক। নিজের কাছে সেই সরল অঙ্কের হিসেবটা তাঁর এত স্বচ্ছ বলেই হয়তো অনায়াসে চমকে দিতে পারছেন আজও। এখনও। পাশাপাশি না-জানা, না-বলা এক রেখাকে ঢেকে রেখেছেন নিজেরই তৈরি এক আস্তরণের আড়ালে। যার পিছনে ঘাই মারছে বহু না-বলা কথা। আর তাঁর বাস্তব জীবনের সিলসিলাকে নিয়ে না-উত্তর দেওয়া প্রশ্নের বিহ্বলতা ও তার উষ্ণতা। আর সেখানেই কি রেখা-রহস্যের আশ্চর্য প্রাণভোমরাটি শুয়ে আছে? হতে পারে। হতেই পারে।
যৌবন ধরে রাখতে
ডা. গৌতম খাস্তগীর, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
• যৌবন ঠেকিয়ে রাখতে প্রয়োজন অনুযায়ী হরমোন থেরাপি করা যায়
• এই থেরাপিতে অনেকের মাথাব্যথা, বমি ভাব, ব্রেস্টে ব্যথা ইত্যাদি কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা সাধারণত মিটে যায়
• হরমোন থেরাপি করলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বছরে এক বার কিছু পরীক্ষা করা দরকার। ষাট বছরের পর হরমোন থেরাপি না করাই ভাল
ডা. সুব্রত মৈত্র, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
• পরিমিত বোধ রপ্ত করতে হবে। তাতে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে যে সব সমস্যা হতে পারে, সেগুলো এড়ানো যাবে। মদ্যপান বা ধূমপান না করাই ভাল। করলেও পরিমিত হারে
• রেড মিট কম খাবেন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট উপকারি
• দিনে ৬ ঘণ্টা ঘুম। মাঝে মাঝে কাজ থেকে পুরোপুরি সরে গিয়ে বিশ্রাম
• স্ট্রেস কাটাতেই হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
• নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও মন খুলে মিশুন। মনকে আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন
ডা. সঞ্জয় ঘোষ, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
• সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি তাড়াতাড়ি ত্বকের বয়স বাড়িয়ে দেয়। তাই ছোট থেকেই বছরভর সানস্ক্রিন লাগানো অভ্যাস করতে হবে। বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে আলাদা সানস্ক্রিন
• ভেতর থেকে ত্বকের পুষ্টির জন্য সুষম খাবার, পাকা ফল, আর পরিমাণ মতো জল খাওয়া খুব দরকার। জাঙ্ক ফুড যতটা সম্ভব কম খাবেন। এগুলি ত্বকের ক্ষতি করে
• মুখে হার্ড সাবান মাখবেন না। চুলেও মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। ঘন ঘন ব্র্যান্ড পরিবর্তন করবেন না
• বলিরেখা এড়াতে নিয়মিত সুগন্ধ বিহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। যাতে প্রিজারভেটিভ ও ল্যানোলিন থাকবে না। বলিরেখা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন
ডা. কৌশিক নন্দী, প্লাস্টিক সার্জন
• বয়স কালে পেটের চামড়া ঝুলে পড়লে, ব্রেস্ট শিথিল হয়ে গেলে প্লাস্টিক সার্জারি করে তা ঠিক করে দেওয়া যায়
• মুখের চামড়া ঝুলে পড়লে ফেস লিফ্ট করে তা ঠিক করে দেওয়া যায়
• চোখের পাতা ফুলে গেলে (ব্যাগি আইলিড) তা-ও প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে ঠিক করে দেওয়া যায়
অনিন্দিতা রায়চৌধুরী, মনোবিদ
• সমস্যা যাই-ই থাকুক, পজিটিভ মানসিকতা থেকে সরে আসবেন না
• এমন কিছু করার চেষ্টা করুন, যাতে জীবন অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে
• রাগ-দুঃখ-অভিমান এ সব থাকবেই, তার জন্য স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে আসবেন না। সময় মতো ঘুম আর খাওয়া খুব জরুরি
• স্বাভাবিক যৌনজীবন খুব দরকারি। তবে আবেগের সঙ্গে যৌনতার সংঘাত যেন না ঘটে
• আশপাশের সবার সঙ্গে যতটা সম্ভব সুন্দর সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করুন
• স্ট্রেস আসে, চলেও যায়। এটা মাথায় রেখে যতটা সম্ভব হাসিখুশি থাকুন
অর্পিতা ঘোষদেব, ডায়াটিশিয়ান
• সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন ব্যালেন্স ডায়েট খুব জরুরি। নানা রকম রঙের শাকসব্জি খেতে হবে। প্রাণীজ প্রোটিন খাবারে দরকার। নিরামিশাষীরা দুধের তৈরি যে কোনও খাবার খাবেন। রোজ টাটকা মরসুমি ফল খেতে হবে
• মোটা হওয়ার ভয়ে ফ্যাট জাতীয় খাবার না খেলে ত্বকের ঔজ্বল্য কমে ও ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। দিনে ২০-২৫ মিলিলিটার ফ্যাট অবশ্যই দরকার
• বেশি পরিমাণে জল খেতে হবে
• স্ট্রেসফুল লাইফ হলে এবং ধূমপান করলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকী ও নানা রকম লেবু জাতীয় ফল বেশি খেতে হবে
• ত্বকের জন্য সাদা তিল ও গ্রিন টি উপকারী
• নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাওয়াটা জরুরি
• রাত জেগে ভোরে ঘুমিয়ে বেলায় ওঠায় অভ্যস্ত হলে যৌবন ধরে রাখা মুশকিল। তাতে নিয়ম করে খাওয়ার ছন্দটাই ভেঙে যায়
চিন্ময় রায়, ফিটনেস বিশেষজ্ঞ
• এক্সারসাইজ করতেই হবে। অনেক ক্ষণ মর্নিং ওয়াকে ক্লান্তি আসতে পারে। তাতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য কমে যেতে পারে। সপ্তাহে দুই দিনের বেশি মর্নিং ওয়াক বা জগিং না করাই ভাল। একঘেয়েমি এড়াতে সাঁতার, সাইক্লিং, এক্সারসাইজ আর মর্নিং ওয়াক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করুন
• জয়েন্ট কমজোরি হওয়ার জন্য একটা বয়সের পর অনেকেই ব্যথায় কাবু হন। তার জন্যও বিশেষ ধরনের এক্সারসাইজ কার্যকর
সাক্ষাৎকার: রুমি গঙ্গোপাধ্যায়


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.