রিষড়া সেবাসদন
সাত মাস বেতন না পেয়ে অবস্থান
সাত মাস ধরে বেতন না পেয়ে একে একে হাসপাতাল ছেড়েছেন চিকিৎসকেরা। অন্তর্বিভাগ বন্ধ হয়েছে। বহির্বিভাগেও তালা পড়েছে। পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় শেষমেশ সোমবার থেকে অবস্থান শুরু করলেন রিষড়া সেবাসদন হাসপাতালের কর্মীরা। অবিলম্বে বকেয়া বেতন মেটানো এবং হাসপাতাল চালুর দাবি তুলেছেন তাঁরা।
জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “হাসপাতালটির জন্য সরকারি ভাবে যে কমিটি গড়া হয়েছে, তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। ওখানে কর্মী সংখ্যা কত, তাঁদের বেতন কাঠামো নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। ওই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া খুবই জরুরি ঠিকই। দ্রুত হাসপাতাল যাতে খোলা যায়, সেই চেষ্টাই হচ্ছে।”
এক সময় বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর শেষ ঠাঁই ছিল রিষড়ার ওই হাসপাতাল। আলাদা একটা ওয়ার্ড ছিল তাঁদের নামে। তাঁদের থাকা-খাওয়া এবং চিকিৎসার জন্য সরকার টাকা পাঠাত। হাসপাতালের দেবযানী দাশগুপ্ত, রুবি চক্রবর্তী, আরতি দাসেরা সেই সময় ‘সেনানি দাদু’দের সেবা করতেন। সেই ওয়ার্ড এখন খাঁ-খাঁ করছে। যন্ত্রপাতিতে ধুলো জমছে।

অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল কর্মীরা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সোমবার থেকে নিজেরাই সংগ্রাম করতে রাস্তায় নেমেছেন আরতি, দেবযানীরা। হাসপাতালে ঢোকার মুখে বসে পড়েছেন তাঁরা জনা ৫০। নিজেদের অবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নাভেজা গলায় এ দিন আরতি বলেন, “প্রথম দিকে কত স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিজের হাতে সেবা করেছি। আজ হাসপাতাল বন্ধ। বড় বড় বাবুরা কত আশ্বাস দিলেন! কিন্তু এখন আমাদের খাওয়ার পয়সাটুকু নেই।” হাসপাতালের আর এক মহিলা কর্মী বলেন, “রাজনীতির জন্যই হাসপাতালটার এই হাল হল। আমাদের এখন খাবারটুকুও জুটছে না।”
দেড়শো শয্যার ওই হাসপাতালে নার্স, আয়া-সহ স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে শতাধিক কর্মী আছেন। কয়েক মাস আগে হাসপাতালের সব বিভাগ বন্ধ হয়ে গেলেও চালু রয়েছে শুধু চোখের বহির্বিভাগ। অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত নভেম্বর মাসে হাসপাতালের অনুদান বন্ধ করে দেয় রাজ্য সরকার। কর্মচারী এবং চিকিৎসকদের বেতন বাকি পড়ে। পরিস্থিতির চাপে পদত্যাগ করেন হাসপাতালের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা সিপিএমের রিষড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক দিলীপ সরকার-সহ অন্য সদস্যরা। সরকারের বিভিন্ন দফতরে হাসপাতাল বাঁচানোর আবেদন জানান কর্মচারীরা। তাঁরা চেয়েছিলেন পুরপ্রধানের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কমিটি গড়ে হাসপাতাল চালানোর বন্দোবস্ত হোক। পুরপ্রধানও ওই দায়িত্ব নিয়ে আগ্রহী বলে রাজ্যকে জানান। সরকার অবশ্য কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। মহকুমাশাসক অনুদানের টাকা চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই টাকা এখনও আসেনি।
কয়েক মাস আগে অবশ্য রাজ্য সরকারের তরফে হাসপাতালটির জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদারকি (অ্যাড হক) কমিটি গড়া হয়। চেয়ারম্যান হন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত। সহ-সভাপতি চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। কিন্তু কর্মীদের অভিযোগ, কমিটি গড়াই সার। কাজের কাজ এখনও কিছুই হয়নি। সুদীপ্তবাবু ছাড়া কমিটির কেউ এখনও হাসপাতালে আসেননি। আর তিনি এসে কোনও দিশা দেখাতে পারেননি। হাসপাতালের বর্ষীয়ান কর্মী ভবেশ দাস বলেন, “দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের। অনেকেই বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে পারছেন না। দু’বেলা ভাত জুটছে না। উপায় না দেখে অবস্থানে বসেছি। দরকারে আরও বড় আন্দোলন করব।” কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, স্রেফ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতেই এসেছিলেন বিধায়ক। বিধায়ক বলেন, “হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক নেই। প্রশিক্ষিত নার্স নেই। কাগজপত্রও ঠিক নেই। প্রচুর টাকা বাকি। ভাল ভাবে হাসপাতাল চালানো খুব কঠিন। তবু আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।” স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি বিজরিত প্রতিষ্ঠানটি কবে চালু হবে? কবে মিলবে পরিষেবা? এই প্রশ্ন এখন সেবাসদনের বিঘে পাঁচেক জমি ছেড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে রিষড়ার আনাচে-কানাচে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.