প্রসব করালেন স্বামী, প্রাণসংশয় বধূর
হাসপাতালের ডাক্তারদের উপরে ভরসা ছিল না। তাই স্ত্রীর প্রসব করানোর দায়িত্ব নিজেই নিয়ে ফেলেছিলেন স্বামী। এই পরিস্থিতিতে যা হওয়ার তা-ই ঘটেছে। প্রাণসংশয় হয়ে দাঁড়ায় গোঘাটের ভাদুর এলাকার ইটভাটা শ্রমিক সম্বরী সরেনের। শ্রমিক কলোনিতে টানা চার দিন ধরে তাঁর রক্তক্ষরণ হয়। অবশেষে, শনিবার রাতে স্বামী বাবলু সরেনের আপত্তি সত্ত্বেও আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন ইটভাটা মালিক শেখ সরিফুল ইসলাম। কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন সম্বরী।
হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় জানান, অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। যা কখনওই উচিত নয়। টানা রক্তক্ষরণের জেরে ওই প্রসূতির হিমোগ্লোবিন ২ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। অসম্ভব প্রাণশক্তি না হলে এই অবস্থায় বেঁচে থাকারই কথা নয়। আপাতত দু’বোতল রক্ত দিয়ে কিছুটা চাঙ্গা করা গিয়েছে তাঁকে। নাড়ি কাটা বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায় যে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল, তারও চিকিৎসা শুরু হয়েছে। প্রসূতির সদ্যোজাত কন্যাসন্তান অবশ্য সুস্থ আছে। তাকে মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিউতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্মাল্যবাবু।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, গ্রামবাংলায় এ ধরনের প্রবণতা বিরল নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় মহিলারাই এই কাজ করে থাকেন। কিন্তু তাতে প্রাণসংশয় হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই উচিত। যার কোনও বিকল্প থাকতে পারে না।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্বরী ও বাবলুর আদি বাড়ি ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে। গোঘাটের বিভিন্ন ইটভাটায় তাঁরা বছরের অর্ধেক সময়ে কাজ করেন। বাকি সময়ে দেশের বাড়ি ফিরে যান।
১০ ডিসেম্বর রাতে শ্রমিক কলোনিতে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সম্বরী। বাবলু ভাঙ্গা বাংলায় জানালেন, এখানকার ডাক্তারদের উপরে তাঁর বিশেষ ভরসা নেই। পেট কেটে সন্তান প্রসব করানো হলে স্ত্রী পরে আর কাজ করতে পারবেন না। সে কারণেই সন্তান প্রসব তিনি নিজেই করবেন বলে মনস্থির করেন। এ নিয়ে বাবলুর নাকি কিছুটা শখও ছিল। কারণ, তাঁর মা দাইয়ের কাজ জানতেন।
স্ত্রীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েও বাবলুর বিশেষ তাপ-উত্তাপ নেই। ভাঙা বাংলায় বললেন, “একটু বেশি টানা-হেঁচড়া হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হল।” স্বামীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই স্ত্রীরও। চিকিৎসকেরা জানতে পেরেছেন, বাবলু প্রসূতির নাড়ি কেটেছেন ব্যবহার করা একটি ব্লেড দিয়ে। প্রসূতির গর্ভদ্বার এবং নবজাতের শরীর পরিস্কার করেছেন বাতিল গামছা দিয়ে। প্রসূতিকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময়ে নবজাতকের জন্য দুধ আনা হয়েছিল ভাল করে না ধোওয়া ছোট একটি তেলের শিশিতে!
সংশ্লিষ্ট ইটভাটার মালিক সরিফুল ইসলাম বলেন, “প্রতি সপ্তাহে একজন হাতুড়ে ডাক্তারকে এনে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়। গত ১০ তারিখ রাতে ওই প্রসূতির সন্তান প্রসবের কথা পর দিন জানতে পারি। ওই ডাক্তার দেখেও যান। কিন্তু ভাষার বাধাতেই পরিস্থিতি এত জটিল হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে জোরজবরদস্তি মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখন সে সুস্থ হয়ে উঠছে জানতে পেরে ভাল লাগছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.