বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন রাজ্যপালের
রাজ্য-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাল হকিকতও তাঁর অজানা নয়। বৃহস্পতিবার তাঁর গলাতেই স্পষ্ট ধরা পড়ল রাজ্যের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়ে উদ্বেগের সুর।
এ দিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দীক্ষান্ত ভাষণে আচার্য তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন রাজ্যে শিক্ষকদের ‘মান’ নিয়েই প্রশ্ন তুলে বসেন। কোনও রাখঢাক না রেখেই তিনি বলেন, “আচার্য হিসাবে আমার অভিজ্ঞতা বলে, বর্তমানে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার এই হালের জন্য ভাল ছাত্রের থেকেও উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবই দায়ী।”
শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমাবর্তনে যে রিপোর্ট তুলে ধরা হয় তা নিয়েও যে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে, এ দিন আচার্যের কথায় সে ইঙ্গিতও মিলেছে। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপাচার্যের সাফল্যমণ্ডিত রিপোর্ট শুনে থাকি। আমার বিস্ময় হয়, সরকারের বিভিন্ন তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গবেষণার কাজ হচ্ছে তা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তা নিয়ে। এক জন উপাচার্যের রিপোর্ট সবসময়ই যে যথাযথ তা বলা যায় না।’’ তাঁর এই স্পষ্ট-বাকের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের শিক্ষক মহলে যে অস্বস্তি ছড়িয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
রাজ্যপালের ‘ভাল শিক্ষক’ প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রবীণ শিক্ষকেরা অবশ্য মনে করেন, ভাল মানের শিক্ষক কোনও কালেই খুব বেশি ছিলেন না। বেঙ্গালুরুর ন্যাশানাল সেন্টার ফর বায়োজিক্যাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “শিক্ষকের মান নেমে যাওয়া শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নয়, এটা সারা ভারতবর্ষের সমস্যা। ভাল গবেষক হলেই যেমন সবসময় ভাল শিক্ষক হওয়া যায় না, তেমনই ভাল শিক্ষক হলেও সবসময় ভাল গবেষক হওয়া যায় না।”
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষ বলেন, “এ কথাটা তো ঠিক যে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ রাজ্যে তেমন কিছু হচ্ছে না। ভাল শিক্ষক যে একেবারেই নেই, তা নয়। কিন্তু তাঁদের কাজের উদ্যোগ, পরিকাঠামো, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উৎসাহের অভাব এতটাই যে কাজ সে ভাবে হচ্ছে না।”
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান সোমক রায়চৌধুরীও একই সুরে বলেন, “এটা ঠিক যে বিজ্ঞানে কাজের ক্ষেত্রে রাজ্য ভীষণ পিছিয়ে আছে। বিজ্ঞানে যদি পাঁচ বছর অনতর পাঠ্যক্রম না বদলানো হয়, গবেষণাগারের কাজকর্মে নতুনত্ব না আনা হয়, তা হলে সেই শিক্ষাটা তামাদি হয়ে যায়। এ রাজ্যে এই সমস্যাটা ভীষণ প্রকট।” রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য রাজ্যপালের মন্তব্যকে ‘গভীর ভাবে’ ভেবে দেখার পক্ষপাতী। তিনি বলেন, “আচার্য হিসেবে উনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে খুব কাছ থেকেই দেখছেন। ফলে আচার্য যে মত দিয়েছেন তা নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বুধবার রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনের ফল প্রকাশের পরে উদ্বেগে রয়েছি আমিও। কারণ বাম সরকারের আমলে ভ্রান্ত শিক্ষানীতির জন্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।”
এ দিন বিজ্ঞান পঠনপাঠন প্রসঙ্গেও রাজ্যপালের মন্তব্য ছিল, “বিশ্বের অন্য জায়গার তুলনায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ঠ পিছিয়ে। সাধারণ ভাবে পরিকাঠামোগত কর্মীর অপ্রতুলতা এবং অর্থের অভাবের যে অভিযোগগুলো আসে তা সব সময় সঠিক নয়। এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, যে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অনেকাংশ এই সমস্যায় জড়িত মনে হয়।”
রাজ্যপাল বলেন, “গবেষণার কাজকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষকেরা ঠিকমতো পড়াচ্ছেন না, এমনটা হচ্ছে নাতো? আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গবেষণার কাজের গুণগত মান কী রকম হওয়া উচিত সেই বিষয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছি।’’ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক ‘সমন্বয়’ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে যদি শৃঙ্খলার সমন্বয় না থাকে তাহলে উন্নতির সম্ভাবনা খুবই কম। আচার্য হিসাবে আমার চোখে এ রাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই যথাযথ শৃঙ্খলার অভাব চোখে পড়েছে এবং আমি মনে করি যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠন উভয়েরই উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নতি এবং অগ্রসরের সমন্বয়ের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.