নির্বাচন কমিশন রুগণ কেন, কাঠগড়ায় রাজ্য
ঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে দড়ি টানাটানি আপাতত শেষ। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য বর্তমানের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বতন সরকারকেও কাঠগড়ায় তুলছেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের জন্ম ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে। আর সেই জন্মলগ্ন থেকেই ওই সংস্থা রুগ্ণ বলে কমিশনের কর্তাদের অভিযোগ। কী রকম সেই রুগ্ণতা?
গোটা রাজ্যের পঞ্চায়েত ও পুরসভার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব যাদের কাঁধে, সেই কমিশন সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য বিভিন্ন পদ মিলিয়ে অন্তত ৭৬ জন কর্মী-অফিসার প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ৩৬টি পদ অনুমোদন করেছিল বিগত সরকার। বিস্ময়ের কথা, কখনওই অনুমোদিত সব পদে কর্মী দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি! কমিশনের কর্তারা জানান, গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক জন অবসর নেওয়ায় এখন সংস্থায় অফিসার-কর্মীর মিলিত সংখ্যা ২১। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন আধিকারিক। সেই আধিকারিকদের মধ্যে তিন জন আবার অবসরপ্রাপ্ত। কমিশনার, সচিব এবং যুগ্মসচিবের দফতরে রয়েছেন মোট চার জন আপ্ত-সহায়ক (পিএ)। চার জনই অবসরপ্রাপ্ত। কমিশনের একাধিক বিভাগের বিভিন্ন পদে থেকে কাজ সামলাচ্ছেন মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে ছ’জন কর্মী। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মী রয়েছেন ছ’জন।
আধিকারিকদের অভিযোগ, কমিশনের নিজস্ব কোনও নিয়োগ বিধিও তৈরি করা হয়নি। কর্মী-সঙ্কটের কথা গত এক দশকে বহু বার রাজ্যকে জানানো হয়েছে। মাঝেমধ্যে সরকারের তরফে যৎসামান্য কর্মী পাঠিয়ে দায় সারা হয়েছে। নিয়োগের বিষয়টি বিগত বা বর্তমান কোনও সরকারের কাছেই বিশেষ গুরুত্ব পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন কমিশনের কর্তারা।
যথেষ্ট কর্মী তো নেই-ই। নেই দরকারি নানা বিভাগও। কমিশন-কর্তাদের প্রশ্ন, যে-দফতরের কাজ নির্বাচন পরিচালনা করা, তাদের নথি সংরক্ষণের জন্য কোনও ‘রেকর্ড সেকশন’ নেই কেন? এমনকী কমিশনের নিজস্ব কোনও ইপিএবিএক্স ব্যবস্থাও নেই! কমিশনের নিজস্ব গাড়িও নেই ২০০৬ সাল থেকে। যদিও কমিশনের গাড়িচালক-পদে স্থায়ী কর্মী রয়েছেন! কমিশনের পদাধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, গোড়ার দিকে একটি গাড়ি ছিল। মেরামতি না-হওয়ায় বছর সাতেক ধরে সেটি অচল হয়ে কমিশনের গ্যারাজে পড়ে রয়েছে। তার বদলে সরকার কোনও নতুন গাড়ি দেয়নি। গাড়ি না-থাকায় কমিশনের স্থায়ী চালক এখন অন্যান্য কাজ করেন। গত সাত বছর ধরে ভাড়ায় নেওয়া গাড়ি দিয়ে কাজ চালাচ্ছে কমিশন। যার জন্য প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকাও গুনতে হচ্ছে সরকারকে।
অভাব ঘোচানোর ব্যাপারে কী ভাবছে কমিশন? সরকার কী করছে?
বর্তমান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেও সংস্থার পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে চিন্তিত। তাঁর কথায়: “সুষ্ঠু ভাবে কাজ চালানোর মতো প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত অভাব তো আছেই। কমিশনকে কাজ করতে হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে।” তিনি জানান, কমিশনের কাজের মান আরও উন্নত করতে রাজ্য পঞ্চায়েত আইনের কিছু সংশোধনের সঙ্গে সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। সংস্থার অন্য কর্তারা জানান, পঞ্চায়েত ভোটের যাবতীয় কাজকর্ম শেষ হয়ে গেলেই পরিকাঠামোর বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে সবিস্তার আলোচনা করবে কমিশন।
কমিশন স্বশাসিত সংস্থা। সেখানে কর্মী ও অর্থের ব্যবস্থা করার কথা রাজ্য সরকারেরই। লোকাভাব এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার অভিযোগের ব্যাপারে সরকার কী বলছে? রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এই অভিযোগের সত্যতা কার্যত মেনে নিয়েছে। ওই দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের বক্তব্য, চলতি বছরের গোড়ায় কর্মীর অভাবের কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল কমিশন। অনুমোদনের জন্য সেই ফাইল পাঠানো হয় অর্থ দফতরে। তারা প্রস্তাবটি অনুমোদন করেনি।
এরই মধ্যে রাজ্যের কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন অবশ্য বলেন, “কর্মী চেয়ে আমাদের কাছে প্রস্তাব এলে তার ব্যবস্থা করার চেষ্টা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.