কার্গিলের পরে পুঞ্চ, সমন্বয় নিয়ে ফের প্রশ্ন
সোমবার রাতের পুঞ্চ মনে করিয়ে দিল ১৪ বছর আগের কার্গিলকে। তার সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠল কার্গিল যুদ্ধের পরে জাতীয় নিরাপত্তা ঢেলে সাজার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, কেন আজও তা হিমঘরেই পড়ে রয়েছে।
কার্গিল যুদ্ধের পর সামগ্রিক ভাবে জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য কে সুব্রহ্মণ্যম কমিটি তৈরি করেছিল বাজপেয়ী সরকার। কমিটির অন্যতম সুপারিশ ছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করা। কিন্তু সেটা যে এখনও হয়নি, পুঞ্চের ঘটনায় তা ফের প্রমাণিত হল বলেই মনে করচেন সেনা-কর্তাদের একাংশ। এক দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, পাক সেনা ও সন্ত্রাসবাদীরা হাতে হাত মিলিয়ে হামলা চালিয়েছে। অথচ কূটনৈতিক ভারসাম্য রাখতে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিকে সংসদে বলতে হচ্ছে, হামলায় সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে পাক সেনার উর্দি পরা কয়েক জনও ছিল। এই দু’রকম বয়ানের মধ্য দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতির অভাবই প্রকট হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রাক্তন সেনা-কর্তা তথা প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে পাঁচশোরও বেশি ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর এনডিএ সরকার কে সুব্রহ্মণ্যমের অধীনে কারগিল পর্যালোচনা কমিটি তৈরি করেছিল। কমিটির রিপোর্টে চারটি দিক আলাদা করে গুরুত্ব পায় গোয়েন্দা ব্যবস্থা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা। এই চারটি দিক খতিয়ে দেখতে ২০০০ সালে তৈরি করা হয় চারটি টাস্ক ফোর্স। টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট আবার খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বর্তায় তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিগোষ্ঠীর উপরে। এনডিএ জমানা চলে গিয়েছে, ইউপিএ সরকারেরও দশ বছর কাটতে চলল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারাও মানছেন, সুব্রহ্মণ্যম কমিটির অধিকাংশ সুপারিশই কার্যকর হয়নি।
কেন? সুব্রহ্মণ্যম কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার এক দশক পরে প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব নরেশ চন্দ্রর অধীনে ১৪ সদস্যের টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছিল। গত বছর সেই টাস্ক ফোর্সের রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্টেও সুব্রহ্মণ্যম কমিটির রিপোর্ট কার্যকর না হওয়া নিয়ে খেদ প্রকাশ পেয়েছে। নরেশ চন্দ্রের টাস্ক ফোর্সও বলছে, সেনা, বায়ুসেনা এবং নৌসেনা বাহিনীর প্রধানরাই জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। যুদ্ধ বাধলে তাঁরাই তা পরিচালনা করবেন। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তা কাঠামোয় তাঁদের বিশেষ কোনও ক্ষমতা নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের শীর্ষ স্তরে তাঁদের কোনও স্থান নেই। একমাত্র নীতি তৈরির প্রক্রিয়ায় তাঁদের মতামত নেওয়া হয়। বাকি সব সিদ্ধান্ত আমলা স্তরেই নেওয়া হয়।
পাকিস্তানি হামলায় পাঁচ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতীয় সেনার
তল্লাশি অভিযান। মঙ্গলবার পুঞ্চে। ছবি: পিটিআই।
সুব্রহ্মণ্যম কমিটির সুপারিশ ছিল, সামরিক বাহিনীর তিন প্রধানের উপরে একটি ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’-এর পদ তৈরি হোক। তিনিই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরকারের যোগসূত্রের কাজ করবেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। নরেশ চন্দ্র কমিটি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আমলাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে সামঞ্জস্যের অভাব রয়েছে। আবার সামরিক বাহিনীর প্রধানদের নিজেদের মধ্যেও ঠিকমতো বোঝাপড়া নেই। সামরিক বাহিনীর সদর দফতরগুলিকে নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মধ্যেই সংযুক্ত সদর দফতর তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সামঞ্জস্যের অভাব রয়ে গিয়েছে। শুধু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রক নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গেও বাকি দু’টি মন্ত্রকের মধ্যে সামঞ্জস্য তৈরির কথা বলেছিলেন সুব্রহ্মণ্যম। নরেশ চন্দ্র কমিটিও সেই একই কথা বলে।
QR কোড। আপনার মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড করে পাশের
QR কোডটি স্ক্যান করুন, আর দেখে নিন এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত ভিডিও।
কিন্তু কোথায় সামঞ্জস্য? এক দিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলছেন, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখার মর্যাদা রক্ষা করবে। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই পুঞ্চের ঘটনা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে। সুব্রহ্মণ্যম কমিটির রিপোর্ট নিয়ে কারওরই মাথাব্যথা নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.