সম্পাদকীয়...
থাম্বেল
মানুষকে সুখে থাকিতে ভূতে কিলাইয়া থাকে ও সেই ভূতকে প্রভূত খাজনা দিয়াই তাহার কাল কাটে। টেলিভিশন যখন ছিল না, মানুষ তাহাকে ছাড়াই চমৎকার জীবনধারণ করিত। তাহার পর টিভি আসিল, তাহাকে সাষ্টাঙ্গে জীবনের ধ্রুবতারার আসন ছাড়িয়া দেওয়া হইল,আজ টিভির প্রতি অত্যধিক আকর্ষণের ফলে আমাদিগের সন্তান স্থূল, তাহার পরীক্ষা ডকে, সেই উদ্বেগ ভুলিতে থপ করিয়া সোফায় বপু রাখিয়া আমরা সিরিয়াল-গ্রাসী। প্রবাদে বলে, পিতারও পিতা বর্তমান। তাই ইতিহাসের পাতায় দুরন্ত ডিগবাজি প্রদর্শিয়া প্রবেশ করিল: মোবাইল ফোন। টিভির সর্বময় আধিপত্যকে কলা দেখাইয়া সে মানুষের আনুগত্যকে মুহূর্তে নিজ ক্রোড়ে টানিয়া লইল। আজ মোবাইল বিনা মানুষ এক মুহূর্তও স্বস্তিতে থাকে না। মোবাইল লইয়াও স্বস্তিতে থাকে কি না— তর্কের বিষয়, কারণ যন্ত্রটি মানুষকে নিশ্চিন্ত হইয়া মলত্যাগ করিতেও দেয় না। ক্ষণে ক্ষণে বাজিয়া উঠে। হয়তো সেই আত্যন্তিক ব্যস্ততাই মানুষের প্রিয়। হয়তো নিজেকে সে অবিশ্বাস্য পরিমাণ ব্যাপৃত দেখিতে চাহে ও আত্মগুরুত্বের এই নবধারাজলে দাবড়াইয়া স্নান সারিতে চাহে। মোবাইল ক্রমে আন্তর্জালকে আত্মসাৎ করিল, এখন নিশ্চিত থাবায় টিভিকেও আত্তীকরণের রিহার্সাল দিতেছে। ক্রমে মোবাইলই হইবে মনুষ্যের ব্যাংক, পোস্টাপিস, বাজার, সিনেমা হল, খেলার মাঠ ও চণ্ডীমণ্ডপ। মনে রাখিতে হইবে, যত হাস্য তত রোদন বলিয়া গিয়াছেন সম্রাট শুদ্ধোদন, তাই এই যন্ত্রটি সঙ্গে করিয়া আনিবে নূতন অসুখ, দুশ্চিন্তা, বদভ্যাস, সর্বনাশ-চাবি। মানুষ রেললাইনের উপর দিয়া ফোনব্যস্ত হইয়া হাঁটিতে হাঁটিতে ট্রেনে চাপা পড়িবে, মোবাইলে গেম খেলিতে খেলিতে অফিসে প্রেজেন্টেশনের কথা ভুলিয়া চাকুরি খোয়াইবে।
মোবাইল সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বত্র বিরাজমান। জীবনের প্রতিটি স্তরে সে নিজেকে সেঁধাইয়াছে। ইহার মাধ্যমে মেল, ফেসবুক, গান, ভিডিয়ো, খেলা, প্রেম: সকলই প্রবল ভোগ করা যায়। মুশকিল একটিই, জীবনের ভূরিভোজ উপভোগ করিতে আমাদিগের হস্তের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠটিকে অসংখ্য বার ব্যবহার করিতে হয়। বারে বারে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দিয়া বিভিন্ন সুইচ টিপিয়া বা স্পর্শ করিয়া সারা দিনব্যাপী এতগুলি কাজ সারিয়া মানুষ বুঝিতেও পারে না, কখন সে বেচারা বুড়া আঙুলটিকে অমানবিক ওভারটাইম খাটাইয়া লইয়াছে। কিন্তু শরীর সাধারণত পাটিগণিতের নিখুঁত হিসাবে অবহেলা বা পীড়নের হিসাব আদায় করিয়া লয়। তাই অদূর ভবিষ্যতে অধিকাংশ মানুষই বুড়া আঙুলের বাত বা অনুরূপ রোগের দিকে হেলিয়া পড়িবেন। এই কারণে ব্রিটেনের এক সংস্থা আবিষ্কার করিল: ‘থাম্বেল’। অর্থাৎ, বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ডাম্বেল। শুনিয়াই মনে হইতে বাধ্য, ইহা অতীব জরুরি। যে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ, মোবাইলের বশে, মস্তিষ্ক হৃদয় জননেন্দ্রিয়ের তুলনায় অধিক পরিশ্রম করিতেছে, তাহার ব্যায়ামের স্বতন্ত্র যন্ত্র ব্যতীত জীবন সতেজ থাকিবে কী করিয়া? আশা করা যায়, অবিলম্বে ঘরে ঘরে থাম্বেলের রমরমা হইবে ও সকল মানুষ বিশ্বাস করিবেন: একটি সুগঠিত ও ইস্পাতদৃঢ় বুড়া আঙুলই তো একটি মোবাইলঋদ্ধ সুখী সহাস্য জীবনের প্রবেশপত্র। মানবজাতির পুরাতন যে অভ্যাস: আকাশ হইতে একটি নূতন বস্তু আমরা পাড়িয়া আনিব, তাহার পর উহাকে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলিয়া নিজেদের নিকট জপাইয়া লইব, তাহার পর উহার সমস্যাগুলি লইয়া পীড়িত হইব, তাহারও পর উহার সমাধানকে জীবনের নূতন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ঠাওরাইব সেই ঐতিহ্য সমানে চলিয়া থাম্বেল অবধি আসিল। মানুষের রসবোধের উপর ভরসা রাখা যায়: চম্পকাঙ্গুলির উপর আরূঢ় হইলে, যন্ত্রটিকে থাম্বেলিনা বলিয়া ডাকা হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.