পঞ্চায়েত নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম বার পালাবদল হয়েছে বর্ধমান জেলা পরিষদে। ইতিমধ্যে ৭৩টি আসনের ৬১টি জিতে জেলা পরিষদের দখল নিতে চলেছে তৃণমূল। কিন্তু জেলা সভাধিপতি কে হবেন, এখনও স্থির করে উঠতে পারেননি দলের নেতারা। তৃণমূল সূত্রে খবর, কয়েকটি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
সভাধিপতির আসনটি এ বার তফসিলি উপজাতি সংরক্ষিত। তৃণমূলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, পছন্দের প্রার্থীকে সেই পদে বসাতে জেলার অনেক নেতাই উচ্চ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছেন। রাজ্য স্তরের নেতা ও জেলা পরিষদের জয়ী প্রার্থীদের সঙ্গে ঘনঘন আলোচনাও সারছেন তাঁরা। আর এই সব আলোচনা থেকে সম্ভাব্য সভাধিপতি হিসেবে দু’টি নামই বেশি উঠে এসেছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। দু’জনই কালনা থেকে জয়ী সদস্য। কালনা ১ ব্লকে জেলা পরিষদের ২২ নম্বর আসনে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার ভোটে জয়ী গীতারানি হাঁসদা ও কালনা ২ ব্লকের ২০ নম্বর আসন থেকে প্রায় দু’হাজার ভোটে জয়ী দেবু টুডু সভাধিপতির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে আরও কয়েক জনের নাম আলোচনায় রয়েছে বলে খবর। |
জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূলের এক সম্পাদকের কথায়, “দেবুবাবু দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় রাজনীতি করছেন। ২০০৮ সালে তিনি কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। পরে তিনি ওই সমিতির বিরোধী দলনেতা হন। ফলে, তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে।” দলের আর এক নেতার আবার বক্তব্য, “দেবু এগিয়ে ঠিকই। কিন্তু গীতারানিও লড়াইয়ে রয়েছে। তাঁর দৌড়ে থাকার প্রধান কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা। তিনি ২০০৮ সালে ভোটে হেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি ইংরেজিতে স্নাতক। তাই জেলা পরিষদের কাজ ভাল চালাতে পারবেন।”
যদিও দেবুবাবুর সমর্থক তৃণমূল নেতাদের পাল্টা যুক্তি, কাজ করার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে ভোটে লড়েছেন এমন সদস্যের সংখ্যা কম। সেই বিষয়টি দেবুবাবুর পক্ষে যাবে। তা ছাড়া নিজে তফসিলি জাতির মানুষ হলেও জেলা পরিষদের ২০ নম্বর আসন, যা অসংরক্ষিত ছিল, সেখান থেকে জিতেছেন দেবুবাবু। তাই তিনি কিছুটা হলেও ধারে-ভারে এগিয়ে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মত।
তৃণমূলের বর্ধমান জেলার অন্যতম পর্যবেক্ষক অলোক দাসের মতে, দেবুবাবু সভাধিপতির পদে বসার ব্যাপারে যথেষ্ট যোগ্য। সভাধিপতি কে হবেন, সেই প্রশ্ন করা হলে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী তথা আসানসোলের বিধায়ক মলয় ঘটক প্রথমে দেবুবাবুর নাম করেও পরে যোগ করেন, “আমি চাই, সব চেয়ে যোগ্য ব্যক্তিই ওই পদে বসুন।” জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূলের সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ আবার বলেন, “সভাধিপতির পদে কে বসবেন সে ব্যাপারে দলের রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে। এখনও এ বিষয়ে কোনও বৈঠক হয়নি।”
জেলা পরিষদের ৭৫টি আসনের মধ্যে ৫৫টি গ্রামীণ বর্ধমান ও বাকি ২০টি শিল্পাঞ্চল এলাকায় পড়ে। এর মধ্যে মেমারি ২ ব্লকের দু’টি জেলা পরিষদ আসনের ফল বেরোবে আজ, শনিবার। ফলে বেরিয়ে যাওয়া ৭৩টি আসনের মধ্যে গ্রামীণ এলাকায় ৪৪ জন ও শিল্পাঞ্চলে ১৭ জন তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, শিল্পাঞ্চল এলাকায় জয়ীদের মধ্যে দুই বা তিন জনকে কর্মাধ্যক্ষ পদ দেওয়া হবে। সভাধিপতি কালনা থেকে নির্বাচিত হলে বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ এবং কাটোয়া মহকুমার জয়ীদের মধ্যে ছ’জন কর্মাধ্যক্ষ বেছে নেওয়া হতে পারে। বর্ধমান উত্তর মহকুমা থেকে নির্বাচিত গোলাম জার্জিসকে সহ-সভাধিপতির পদে আনার ব্যাপারেও সক্রিয় হয়েছেন দলের একাংশ। মলয়বাবু অবশ্য বলেন, “শিল্পঞ্চলে ১৭ জন জিতেছেন। তাই চারটি কর্মাধ্যক্ষ পদ না পেলে সমস্যা।”
তবে জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, কাকে কোন পদ দেওয়া হবে সে নিয়ে ১৫ অগস্টের আগে রাজ্য তৃণমূলের বৈঠক হচ্ছে না। তাই কে কোন পদ পেলেন, তা জানতে এখনও সপ্তাহ দুয়েকের অপেক্ষা।
|
ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |