দক্ষিণ কলকাতা
বিজয়গড় ক্রীড়া উদ্যান
হস্তান্তরের ফাঁদে
বিজয়গড় ক্রীড়া উদ্যান সংস্কারের চেষ্টা অনেক বারই হয়েছে। কিন্তু হস্তান্তরের জটে আটকে থাকায় পুরসভা এবং রাজ্য ক্রীড়া দফতর এই উদ্যান সংস্কার করতে পারেনি। জট কাটিয়ে কী করে এই সমস্যা মেটানো যায় সেই বিষয়ে আলোচনায় বসতে চায় ক্রীড়া দফতর।
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের এই জমিটি বিজয়গড় এলাকায় খেলার মাঠ হিসেবেই পরিচিত। গত বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী এই উদ্যান সংস্কারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তার পর কাজ আর এগোয়নি। রাজ্য ক্রীড়া দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই জমিটি যত দিন পর্যন্ত উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর ক্রীড়া দফতরকে হস্তান্তর না করছে তত দিন ক্রীড়া দফতর এই উদ্যানের সংস্কার করতে পারবে না। আগে এই দুই দফতরের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হলেও পরে তা আর এগোয়নি। ফলে বিজয়গড় উদ্যানের সংস্কার অধরাই থেকে যায়।
একই ভাবে কলকাতা পুরসভাও এই মাঠ সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু মাঠ হস্তান্তরে জটের কারণেই পুরকর্তৃপক্ষ পিছিয়ে এসেছিলেন। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল সাফাই) দেবব্রত মজুমদার জানান, এই মাঠটির সংস্কারের জন্য পুরসভা কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে ক্রীড়া দফতরকে চিঠি দেবে। প্রয়োজনে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের সঙ্গেও কথা বলবেন পুরকর্তৃপক্ষ। কারণ, এলাকার বাসিন্দাদের বহু দিনের দাবি এই মাঠ সংস্কারের। এই মাঠটিকে চার দিক থেকে ঘেরা ছাড়াও মাঠের একাংশে বসার জায়গা এবং মাঠের সার্বিক সংস্কার প্রয়োজন। মাঠের একাংশ আগাছায় ভরা। কোথাও কোথাও ঘাস উঠে গিয়েছে। নিকাশিরও কিছু সমস্যা রয়েছে।
অন্য দিকে, উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর সূত্রে খবর, এই মাঠ হস্তান্তরের ব্যাপারে পুরসভা এবং ক্রীড়া দফতর কোনও চিঠি দেয়নি।
রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। এই মাঠ সংস্কারের ব্যাপারে স্থানীয় বিধায়ক, পুরকর্তৃপক্ষ এবং এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিনিধিরা যদি আমাকে জানান তা হলে ক্রীড়া দফতর উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের সঙ্গে কথা বলে মাঠ সংস্কারের জন্য যা করার প্রয়োজন তাই করবে।” মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের কথায়: “এই মাঠ সংস্কারের পরিকল্পনা পুরসভার অনেক দিনের। কিন্তু যত ক্ষণ না উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর আমাদের এই মাঠ হস্তান্তর করছে আমরা সংস্কার করতে পারব না।” এই মুহূর্তে মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনও সরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
স্থানীয় বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত বলেন, “এই মাঠটিকে স্টেডিয়াম করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে। পুরসভা এবং ক্রীড়া দফতরের সঙ্গে এই মাঠ সংস্কারের ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে কথাও হয়েছে।”
বিজয়গড়ের এই মাঠ ফুটবল খেলার জন্যই পরিচিত। সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই এই মাঠে খেলাধুলো হয়। এখানে বিজয়গড় ফুটবল লিগ শুরু হয়। ষাটের দশকে এখানেই গড়ে ওঠে বিজয়গড় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। পরে, ফুটবল-সহ অন্যান্য খেলাকে জনপ্রিয় করতে বিজয়গড় স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করা হয়। যদিও পরে, ১৯৯১-তে এখানকার প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে যাদবপুর এক্স ফুটবলার্স’ অ্যাসোসিয়েশন (জেফা) তৈরি করা হয়। এই সংগঠনই ১৯৯৩ থেকে আজ পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটবল কোচিং সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফুটবলারদের নিয়ে প্রতি বছর ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। এখানে জেফা পরিচালিত একটি ফুটবল কোচিং সেন্টারও আছে। এই মাঠেই আইএফএ পরিচালিত নার্সারি ফুটবল লিগ এবং রাজ্য স্কুল লিগ অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য টুর্নামেন্টও চলে এই মাঠে।
এই মাঠে জিমন্যাসিয়াম করার জন্য যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এই সংস্থাকে ইতিমধ্যেই দু’লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন। জেফা-র যুগ্ম সম্পাদক উৎপল গুহ বলেন, “আমরা এই মাঠের সংস্কার চাই। এটি সরকারি মাঠ। অথচ, কোনও সরকারি সংস্থা এই মাঠ রক্ষণাবেক্ষণ করে না। আমরা এই মাঠ খেলার উপযোগী করে রাখার চেষ্টা করি। মাঠ বাঁচাতে পুরসভা বা সরকারের এই উদ্যোগ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.