পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
অবাধ প্লাস্টিক
শিকেয় বিধি
নেই কোনও নজরদারি। সেই সুযোগে বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক ব্যাগ। বিভিন্ন বাজারে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাগগুলি। আইন অনুযায়ী, ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু দেদার ব্যবহারের পরে ওই ব্যাগগুলি ফেলা হচ্ছে নর্দমায়। ফলে বহু ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা। অভিযোগ উঠেছে, উত্তর শহরতলির বিরাটি, নিউ ব্যারাকপুর, হৃদয়পুর এবং বারাসতের বিভিন্ন বাজারে এ ভাবেই চলছে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে এক শ্রেণির ক্রেতার পরিবেশ-সচেতনতা নিয়েও।
বারাসত শহরের বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাথে প্রতি দিন বাজার বসে। ছ’টি পাকা ও স্থায়ী বাজার ছাড়াও রয়েছে ফল ও ফুলের বাজার।
ছোট-বড় মিলিয়ে সংখ্যাটা ত্রিশের কাছাকাছি। অভিযোগ, এই বাজারগুলির বহু ব্যবসায়ী পসরার সঙ্গে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে বসেন। ওই ব্যাগেই নিয়মিত বাজারের সব্জি থেকে ফল-ফুল সবই কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরের প্রথম দিকে কয়েক বার পুরকর্মীরা এসে তল্লাশি চালিয়ে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু গত ক’মাস ধরে কেউ তল্লাশি চালাতে আসেনি। ফলে রমরমিয়ে চলছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার।
বারাসতের পুরপ্রধান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মানুষ সচেতন হলেই নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার কমত। ৩২টি ওয়ার্ডের পুর এলাকার প্রতিটি বাজার-দোকানে নিয়মিত তল্লাশি চালানোর মতো লোকবলও নেই পুরসভার। তবুও মাঝেমধ্যেই পুরকর্মীদের তল্লাশিতে পাঠাই।”
বিরাটির স্টেশন বাজার থেকে কেনাকাটা সারছিলেন স্বপন ভৌমিক।
হাতে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভর্তি জিনিস। কিন্তু এই ব্যাগের ব্যবহার তো নিষিদ্ধ? স্বপনবাবুর উত্তর: “ব্যাগগুলি তো বাজারেই বিক্রি হয়। নিষিদ্ধ হলে তৈরি হচ্ছে কী করে? বাজারেই বা আসছে কী ভাবে?” কিন্তু বাজারে দিলেও তিনি তা কেন নিয়ে যাচ্ছেন? তাঁর যুক্তি: “অনেক দিনের অভ্যেস। চট করে কি বদলানো যায়?”
নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের একই ছবি দেখা যায় নিমতা ও যদুবাবুর বাজারেও। তল্লাশি বা ধরপাকড় এখানেও অনিয়মিত। উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের সুনীল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা মাঝেমধ্যে বাজারে তল্লাশি অভিযান চালাই। তবে পুরকর্মীর অভাবে সব সময়ে তল্লাশি চালানো সম্ভব হয় না।”
নিউ ব্যারাকপুর পুর-এলাকায় রয়েছে ১৫টি বাজার। সেখানকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করছে না বলেই এই ব্যাগের ব্যবহার আটকানো যাচ্ছে না। পুরকর্মীরা বছরে তিন-চার বার তল্লাশি করতে আসেন। নিউ ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের নির্মিকা বাগচীর কথায়: “আমরা নিয়মিত বাজারে তল্লাশি অভিযান চালাই। তবুও ব্যবসায়ীরা নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন।” বিভিন্ন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চায়নি। কী ভাবে এখনও চলছে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার? কারখানাগুলিই বা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন?
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার বলেন, “নিম্নমানের প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখতে স্থানীয় পুরসভা, পুলিশ ও পরিবেশ দফতর একটি নীতি নির্ধারণ করেছে। আমরা নজরদারি চালাই। কিন্তু এ ধরনের প্লাস্টিক তৈরির কারখানাগুলি কুটিরশিল্পের মতো বিভিন্ন বাড়ির মধ্যে চলছে। ফলে এলাকাভিত্তিক অভিযান চালানো মুশকিল। পুলিশ ও পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কী করা যায় দেখছি।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.