রিভিউ পিটিশনে নারাজ রাজ্য
শেষ ভরসা খুইয়ে হতাশ এমডি-এমএস পড়ুয়ারা
বীরভূমের গ্রামীণ হাসপাতালের ডাক্তারটি যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এমডি পড়ার সুযোগ পেলেন, গ্রামের মানুষ উৎফুল্ল হয়েছিল। কলকাতা রওনা দেওয়ার আগে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিল গ্রামবাসী। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিলেন তরুণ চিকিৎসক। একই রকম উৎসাহ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে ফরেন্সিক মেডিসিনের এমডি’তে ভর্তি হয়েছিলেন আর এক গ্রামীণ হাসপাতালের ডাক্তার। উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা অর্জনের সুবাদে বিভিন্ন জনের অভিনন্দন তাঁকে আরও প্রত্যয়ী করে তুলেছিল।
কিন্তু দু’জনেরই যাবতীয় প্রত্যয়-উৎসাহ-উদ্দীপনা এখন ভেসে গিয়েছে। কারণ, চার মাস ক্লাস করার পরে কোর্টের একটি রায় ওঁদের মতো ১৫৯ জন চিকিৎসকের উচ্চশিক্ষার প্রয়াসে আপাতত দাঁড়ি টেনে দিয়েছে। প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট তাঁদের স্নাতকোত্তরে ভর্তিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করায় তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতও তাঁদের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। ফলে কার্যত অকূল পাথারে পড়েছেন ওঁরা।
এবং ওঁদের আক্ষেপ, রাজ্য সরকার পাশে থাকলে হয়তো এই পরিণতি আটকানো যেত। যদিও সরকার তা মানতে নারাজ। বরং রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের দাবি, “আমাদের যা করার ছিল, করেছি। আদালতের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাদের কিছু বলার নেই।” ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের তরফে রাজ্যের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করা হোক। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তা-ও নাকচ করে দিয়েছেন। “সেটা সম্ভব নয়। তা হলে তো কোনও দিন বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে না! শুধু একের পর এক রিভিউ-ই হয়ে যাবে!” মন্তব্য চন্দ্রিমাদেবীর।
সব মিলিয়ে ওই অন্তত শ’দেড়েক এমডি-এমএস পড়ুয়ার সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সমস্যার সূত্রপাত অবশ্য সরকারেরই এক সিদ্ধান্তকে ঘিরে। কী রকম?
চিকিৎসকদের গ্রামমুখী করতে রাজ্য ঘোষণা করেছিল, প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে কাজ করলে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমে ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি ৩০ নম্বর মিলবে। সংশ্লিষ্ট ‘দুর্গম’ এলাকার তালিকা বেরোলে অভিযোগ ওঠে, তাতে বিস্তর অনিয়ম। প্রতিবাদে নানা মামলা হয়, তার জেরে স্নাতকোত্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া থমকে থাকে। পরে হাইকোর্টের এক নির্দেশে গত মার্চে ৬৯ জন নতুন পড়ুয়া ভর্তি হন, এবং আগে ভর্তি হওয়া ৯০ জন বিষয় পরিবর্তন করেন, যা নিয়ে ফের মামলা হয়। শেষমেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভর্তির প্রক্রিয়া ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে ২০১২-র পাঠ্যক্রমে পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েছেন গত মার্চে, অর্থাৎ আট মাস বাদে। সুতরাং ভর্তির গোটা প্রক্রিয়াটাই বেআইনি।
সেই সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন প্রশ্ন উঠছে, পুরো পরিস্থিতির মূলে যে হেতু স্বাস্থ্য দফতরের একটি বিতর্কিত নীতি, তা হলে উচ্চশিক্ষার্থী চিকিৎসকেরা খামোখা তার ফল ভুগবেন কেন? এর ব্যাখ্যা মন্ত্রীর কাছে পাওয়া যায়নি। আবার স্বাস্থ্য ভবনে যাঁরা ‘দুর্গম ও প্রত্যন্ত’ এলাকার তালিকা বানিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে
কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, সে প্রশ্নের মুখে স্বাস্থ্য-কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাই হতাশা লুকোনোর জায়গা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী ডাক্তার-পড়ুয়ারা। রোজ স্বাস্থ্য ভবনের দরজায় দরজায় ঘুরেও তাঁরা দিশা পাচ্ছেন না। এমতাবস্থায় পুরনো জায়গায় ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় দেখছেন না ওঁরা। “গ্রামে ফিরে হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে হবে। ভাবলেই এমন অবসাদ আসছে, মনে হচ্ছে চাকরি ছেড়ে দিই।” বলছেন বীরভূম থেকে আসা তরুণ ডাক্তার। বর্ধমানে পড়তে আসা চিকিৎসকের আক্ষেপ, “লোকে আমাদের করুণা করছে! আমাদের কেউ যদি এখন কোনও চরম পথ বেছে নেয়, তা হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।” উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন সফল করতে হলে এঁদের সামনে পরের বার নতুন করে স্নাতকোত্তর প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসা ছাড়া অন্য পথ নেই। প্রবেশিকা হবে জানুয়ারিতে। হাতে সময় কম, তার উপরে মানসিক চাপ সামলে কী ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যাবে, তা ওঁদের মাথায় আসছে না।
বিষয় পাল্টেছেন যাঁরা, তাঁরাও আতান্তরে। যেমন ধরা যাক সেই চিকিৎসকের কথা, যিনি কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের চক্ষু বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়েছিলেন, এবং বিষয়টি মনোমতো না-হওয়ায় সেকেন্ড কাউন্সেলিংয়ের সুযোগে বিষয় বদলে বিসি রায় শিশু হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন চাইল্ড হেল্থ-এর ক্লাস শুরু করেন। অথচ সেখানে মাস চারেক কাটতে না-কাটতে কোর্টের নির্দেশে তাঁর ভর্তি ‘অবৈধ’ হয়ে গিয়েছে।
অগত্যা ডাক্তারবাবু চার মাস শিশু-চিকিৎসার সিলেবাসে মন দেওয়ার পরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন চক্ষু চিকিৎসার অপছন্দের পাঠ্যক্রমে। তাঁর নিজস্ব হতাশা বাদ দিলেও এখানে আরও বড় বিপদের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। তাঁরা জানাচ্ছেন, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র নিয়ম অনুযায়ী, ডিগ্রিতে ৩৬ মাস ও ডিপ্লোমায় ২৪ মাস ক্লাস বাধ্যতামূলক। চার মাস অন্য বিষয় পড়ে ফের পুরনো কোর্সে ফিরলেন যাঁরা, তাঁদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাশ করে বেরোবেন, তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকে যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.