জেলে, পুলিশে প্রশিক্ষণের নির্দেশ
ছাত্রনেতাকে বেড়ি পরানোয় হাইকোর্টে জরিমানা রাজ্যের
শিলিগুড়ির এসএফআই নেতা সন্তোষ সাহানির পায়ে বেড়ি লাগিয়ে হাসপাতালে রাখার ঘটনায় রাজ্য সরকারের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করল কলকাতা হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার রায়ে জানিয়েছে, পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা অমানবিক এবং অসাংবিধানিক। জরিমানার টাকা এক মাসের মধ্যে সন্তোষের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। রাজ্য সরকারকে হাইকোর্টের পরামর্শ, সরকার চাইলে দোষী পুলিশকর্মীদের বেতন থেকে টাকা কেটে নিয়ে ওই জরিমানা মেটাতে পারে।
১০ এপ্রিল শিলিগুড়িতে সিপিএম এবং তৃণমূলের মিছিলে সংঘর্ষ হয়। গ্রেফতার হন সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য-সহ ৫৪ জন। অশোকবাবু এবং অন্য কয়েক জন জামিন পেলেও ৪৬ জনকে জেলে রাখা হয়। তাঁদের মধ্যে সন্তোষও ছিলেন। তাঁকে পাঠানো হয় শিলিগুড়ি জেলে। ১৪ এপ্রিল রাতে অসুস্থ বোধ করায় পরের দিন তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৬ এপ্রিল দেখা যায়, সন্তোষকে হাসাপাতালের শয্যার সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার পরেই এক আইনজীবী এই বিষয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সন্তোষ সাহানি। —ফাইল চিত্র
ওই আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলা চলে। বিচারপতিরা আগের দিনের শুনানিতেই রাজ্যকে তীব্র তিরস্কার করেন। মানবাধিকার রক্ষায় সরকার তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তাঁরা। সে-দিন ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের কথাও উঠেছিল। বিচারপতি বাগচী জানান, ১০ হাজার নয়, অন্তত ১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে। এ দিন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই অর্থই ধার্য করে ডিভিশন বেঞ্চ। তারা বলেছে, বেড়ি পরিয়ে রাখাটা শুধু অমানবিক নয়, অসাংবিধানিকও। এটা সংবিধানের ২১ ধারার অবমাননা এবং মানুষের অধিকার-বিরোধী।
সন্তোষের পায়ে কেন বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল, রাজ্য সরকার আদালতে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিল, হাসপাতালের ওয়ার্ডে সাংবাদিকেরা ভিড় করেছিলেন। বন্দির পালানোর আশঙ্কা ছিল। ওই ছাত্রনেতা যাতে সাংবাদিকের ভিড়ে পালিয়ে যেতে না-পারেন, তা নিশ্চিত করতেই ওই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে বলেন, আদালতের নির্দেশ ছাড়া কোনও জঙ্গিরও হাতে হাতকড়া বা পায়ে বেড়ি লাগানো যায় না। অথচ এ ক্ষেত্রে এক জন অসুস্থ ছাত্রনেতার পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন নজির প্রায় নেই।
বিচারপতিরা জানান, আলফা জঙ্গিদেরও হাতকড়া বা বেড়ি পরানো যাবে না বলে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও সন্তোষের ক্ষেত্রে পুলিশ এমন অমানবিক আচরণ করায় হাইকোর্টের রায়ে তার নিন্দা করা হয়েছে। তারা বলেছে, সন্তোষের পায়ে বেড়ি পড়িয়ে বন্দির ন্যূনতম মানবিক অধিকারেও হস্তক্ষেপ করেছে পুলিশ।
বন্দিদের সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট যে-নির্দেশিকা ঠিক করে দিয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র তা যাতে মেনে চলা হয়, সেই জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং কারাসচিবকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলেছে হাইকোর্ট। তাদের নির্দেশ:
• বন্দিদের সঙ্গে ঠিক কেমন আচরণ করতে হবে এবং কী কী করা যাবে না, সর্বস্তরের পুলিশ এবং জেলের কর্মীদের তা যথাযথ ভাবে জানিয়ে দিতে হবে। এই বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ ও কারাকর্মীদের সর্বস্তরেই।
• আচরণ সংক্রান্ত নির্দেশিকা অবিলম্বে রাজ্যের সব থানা ও জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।
• ইংরেজি ও বাংলা সংবাদপত্রে ওই আচরণবিধি বিস্তারিত ভাবে জানাতে হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.