পাহাড় সামলাতে কড়া ধমক
গুরুঙ্গের ইস্তফা গ্রহণ করে পাল্টা চাপ মমতার
কোনও অনুরোধের রাস্তায় না-হেঁটে জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করল রাজ্য সরকার। বুধবার দুপুরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ইস্তফা গ্রহণের কথা জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে দার্জিলিং পাহাড়ে আচমকা বন্ধ, আন্দোলনের নামে অশান্তির চেষ্টা রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী যখন এই ঘোষণা করছেন, তখন দার্জিলিঙের সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দফতরে জিটিএ সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন গুরুঙ্গ। তাঁদের কাছে খবর পৌঁছনোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গুরুঙ্গের লালবাতি লাগানো গাড়ি, পাইলট ও নিরাপত্তারক্ষী সরিয়ে নেয় দার্জিলিং জেলা পুলিশ। কিছুটা হকচকিয়ে যান গুরুঙ্গ-সহ মোর্চা নেতাদের অনেকেই। রাজ্যের কড়া অবস্থানের সামনে মুখরক্ষার উপায় খুঁজতে রোশন গিরির নেতৃত্বে দলের ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে দিল্লি পাঠানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় বৈঠকে।
সেই সঙ্গে, শনিবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের পাহাড় বন্ধ বহাল রাখলেও এ দিন চাপের মুখে পড়ে মোর্চা নেতৃত্ব চা ও সিঙ্কোনা বাগানকে ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

পাহাড়ে যাওয়ার পথে আটকে পড়েছেন বিদেশি পর্যটকরা। বুধবার শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
বুধবার বেলা ২টো নাগাদ রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে যোগ দিতে মুম্বইয়ে যাওয়ার আগে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিমল গুরুঙ্গ জিটিএ থেকে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্র উনি রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিলেন। যদিও রাজ্যপালের নামটা ভুল ছিল। সেখানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন লেখা। এ দিনই পদত্যাগপত্র রাজভবন থেকে আমার কাছে এসেছে। আমরা তা গ্রহণও করেছি।”
এর পরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “গুরুঙ্গ পদত্যাগ করতেই পারেন। এটা তাঁর স্বাধীনতা। কিন্তু জিটিএ আমরা ভাঙছি না। কারণ ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে সেটি তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্র, রাজ্য ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সম্মতিক্রমে জিটিএ চূড়ান্ত হয়েছিল। তার পরে ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিল। উনি সেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন।” এর পরই মোর্চা নেতৃত্বকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “রাজনীতির প্রয়োজনে বছরে চার বার পাহাড় নিয়ে খেলবেন। পর্যটকদের নেমে আসতে বলবেন। স্কুল বন্ধ করে দিতে বলবেন। এটা হয় নাকি? রাজ্য এ সব কিছুতেই মেনে নেবে না।” গুরুঙ্গ ও তাঁর সতীর্থরা সকলে সরে গেলে প্রয়োজনে পাহাড়ের বিশিষ্টজনদের নিয়ে কমিটি গড়ে পরবর্তী ভোট পর্যন্ত জিটিএ চালানোর কথাও রাজ্য ভাববে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মনোভাবের আঁচ পেয়েই এ দিন তাঁর দলের অন্য সদস্যদের জিটিএ থেকে পদত্যাগ করতে নিষেধ করেন গুরুঙ্গ। মোর্চার অন্দরের খবর, মঙ্গলবার বিকেলে গুরুঙ্গ রাজ্যপালকে ইস্তফাপত্র দেওয়ার পরে দলের অনেকের আশা ছিল, আলোচনায় বসা কিংবা ইস্তফা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ আসতে পারে কলকাতা থেকে। তাই রাজভবন ও মহাকরণের মনোভাব বোঝার নানা চেষ্টা করেন মোর্চা নেতারা। এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ দার্জিলিঙে মোর্চার সদর দফতরে বৈঠক শুরু হয়। বেলা আড়াইটে নাগাদ বৈঠক যখন শেষের পথে, তখনই মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে তাঁর কড়া অবস্থান জানিয়ে দেন।
ফলে অন্যরা ইস্তফা দিতে চাইলেও তাঁদের নিরস্ত করেন গুরুঙ্গ। একটি সূত্রের খবর, বৈঠকে এক সময় দলের তরুণ সদস্যরা জিটিএ থেকে বাকিদের ইস্তফা দিয়ে আন্দোলনে নামতে বলেন। এই কথায় রেগে গিয়ে চায়ের কাপ ছুড়ে ফেলে গুরুঙ্গ বলেন, “তোমরা আন্দোলনের জানোটা কী! আর কে এই আন্দোলন করতে উস্কানি দিচ্ছে!” দলের নেতাদের একাংশ প্রস্তাব দেন, দিল্লির দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেখানে কংগ্রেস ও বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তো বটেই, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করবেন মোর্চা প্রতিনিধিরা। সমঝোতার কোনও সূত্র মিললে সাময়িক ভাবে বন্ধ তোলার কথা ভাববে মোর্চা।
আপনার মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড করে উপরের QR Codeটি
স্ক্যান করুন। আর দেখে নিন বিমল গুরঙ্গের ইস্তফা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া।
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির বক্তব্য, “শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ হচ্ছেই। তবে চা বাগান এবং সিঙ্কোনা বাগানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা সমস্ত আন্দোলন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে করব। কাল, শুক্রবার দলের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল দিল্লিতে যাচ্ছেন। সেখানে কংগ্রেস, বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে যাব। তার পরে ফের পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।”
মোর্চা নেতৃত্বের উপরে চাপ আরও বাড়িয়ে ‘বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও সমিতি’-সহ তিনটি সংগঠন বৃহস্পতিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার শিলিগুড়ি বন্ধের হুমকি দেয় এ দিন। সোমবার থেকে ৭২ ঘণ্টা বন্ধের পর দু’দিন ছাড় দিয়ে অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ডেকেছে মোর্চা। অলিখিত ভাবে পাহাড়বাসীকে মোর্চা নেতারা বার্তা পাঠিয়েছেন, ওই দু’দিনের মধ্যে সমতল থেকে আনাজপাতি-সহ নানা রসদ সংগ্রহ করে নিতে হবে। এখন গোর্খাল্যান্ডের দাবির বিরোধিতায় তিনটি সংগঠন ওই দু’দিন শিলিগুড়ি মহকুমায় বন্ধের ডাক দিয়েছে। ফলে, শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকাতেও মোর্চার সঙ্গে স্থানীয় বন্ধ সমর্থকদের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রোশন বলেন, সমতলের এই বন্ধ পাহাড় আর সমতলের বিভেদ উস্কে দিতে পারে।
এ দিন বিকেলে দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে ৫ কোম্পানি সিআরপি মোতায়েন করা হবে। আজ, বৃহস্পতিবার ১ কোম্পানি মহিলা সিআরপি-সহ ওই জওয়ানদের দার্জিলিঙে পৌঁছনোর কথা। পাশাপাশি, যে সব স্কুল, কলেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুলিশি নিরাপত্তা চাইবে, তাদেরও তা দেওয়া হবে। এসপি জানান, কালিম্পঙের একটি ঐতিহ্যশালী আবাসিক স্কুলের পক্ষ থেকে পুলিশি নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
শিলিগুড়িতেও বন্ধ মোকাবিলায় সব রকম পদক্ষেপ করা হবে বলে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানিয়েছেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.