২৯ তারিখে বদলির নির্দেশ। ৩০-শে নতুন কাজে যোগ। আর ৩১-শে অবসর।
এই তিনটে দিন কেমন যেন ঘোরের মতো কেটে গেল বনশ্রী দাশগুপ্তের। নতুন স্কুলে মাত্র দু’দিন প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে থেকেই কর্মজীবনে অবসর নিলেন বনশ্রীদেবী। অথচ সল্টলেকের বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা বনশ্রীদেবী সোমবার (২৯ জুলাই) শিক্ষা দফতরের নির্দেশ পেয়েছিলেন যে, মঙ্গলবারই তাঁকে পুরুলিয়ার রাষ্ট্রীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিতে হবে। সেই মতো মঙ্গলবার কলকাতা থেকে পুরুলিয়ায় এসে স্কুলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। বুধবারই কর্মজীবন থেকে অবসর নিলেন। অবসর নিয়ে সহকর্মীদের ও ছাত্রীদের মিষ্টি খাইয়েছেন। ফুলের স্তবক দিয়ে তাঁকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন ওই স্কুলের শিক্ষিকারা।
এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে ওই স্কুলের পড়ুয়া ও অভিভাবক মহলে। ক্ষুব্ধ শিক্ষিকাদের একাংশও। তাঁদের সবারই বক্তব্য, প্রায় এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকার পদ শূন্য পড়ে রয়েছে পুরুলিয়া শহরের নামকরা এই স্কুলে। এর পরেও প্রধান শিক্ষিকার পদে এক জনকে নিয়োগ করা হল মাত্র দু’দিনের জন্য। স্কুল ফের সেই প্রধান শিক্ষিকাহীনই রয়ে গেল। কয়েক জন অভিভাবক এ দিন ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “যে শিক্ষিকার অবসরের মাত্র দু’দিন বাকি, তাঁকে কলকাতা থেকে পুরুলিয়ায় পাঠানো হল। পুরোটাই প্রহসন!”
নিয়ম অনুসারে, অবসরের ছ’মাস আগে কোনও সরকারি কর্মীকে
বদলি করা যায় না। কারণ, সেই সময় তাঁর পেনশন সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করা নিয়ে নানা জটিলতা থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, কেন অবসরের মুখে থাকা বনশ্রীদেবীকে পুরুলিয়ার স্কুলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল?
এর উত্তর যাঁরা দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে সদুত্তর মেলেনি। স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিব অর্ণব রায় বলেছেন, “বিষয়টি জানি। তবে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) নির্দেশে ওই বদলি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার
নেই।” পিএসসি-র চেয়ারম্যান নুরুল হকের দাবি, “আমাদের বদলির ব্যাপারে কোনও হাতই নেই! ওটা স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) করে। আমরা শুধু নিয়োগের প্যানেল
তৈরি করি।”
সরকারি সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, এই বদলির বিষয়টি কার্যকর করার কথা পিএসসি-রই। তবে, বদলির ফাইল স্কুলশিক্ষা দফতর (বিকাশ ভবন) হয়েই যাওয়ার কথা। ফলে বনশ্রীদেবীর ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি প্রতিপদে স্পষ্ট।
দু’দিনের জন্যই আসা, তা আগাম জানা থাকায় ছোট্ট একটি ব্যাগ নিয়েই পুরুলিয়ায় চলে এসেছিলেন বনশ্রীদেবী। সাত মাস ধরে পুরুলিয়ার স্কুলটির দায়িত্ব সামলেছেন যিনি, সেই সহকারী প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারীর কথায়, “এ দিন বনশ্রীদেবীকে আমরা অবসর জীবন সুস্থ ও সুন্দর কাটানোর জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছি।” আর বনশ্রীদেবী শুধু বলেছেন, “পুরুলিয়ায় এসে এই স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ হাতে পেয়েছিলাম সোমবার। এক জন সরকারি কর্মী হিসাবে নির্দেশ পালন করাটা আমার কর্তব্য।” কর্তব্য শেষ। |