|
|
|
|
জয়ের ব্যবধান লক্ষাধিক |
বিপুল জয়েও কেশপুর নিয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একদা দুর্ভেদ্য দুর্গ কেশপুর নিয়ে বহু প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিপিএম। এ বার সেই সব প্রশ্ন ধেয়ে আসছে তৃণমূলের দিকে। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেশপুর থেকে ১ লক্ষ ৮ হাজার ভোটে জিতে শোরগোল ফেলেছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দরানি ডল। পালাবদলের কেশপুরে এ বার পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের তিনটি আসনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ১ লক্ষ ৩৩ হাজার!
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কি ভোটের এত ‘লিড’ থাকা সম্ভব? প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তী। পরে সামলে নিয়ে তপনবাবু বললেন, “মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা ভোট দিলে আমরা আর কী করব!” কিন্তু বিরোধীরা তো সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছে? এ বার সুর চড়ালেন প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপনবাবু, “কীসের সন্ত্রাস? কোথাও সন্ত্রাস হয়নি। সিপিএম নিজের কবর নিজেই খুঁড়েছে। এত অত্যাচার-সন্ত্রাস মানুষ ভুলে যাবেন?” সিপিএমের কেশপুর জোনাল সম্পাদক আহমেদ আলি বলছেন, “কী আর বলব!”
সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত স্তরে কেশপুরে কোনও লড়াই হয়নি। ২০০৮ সালে যে কেশপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৯টি ও পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫টি আসনের সবকটি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল সিপিএম, এ বার সেখানে সিপিএমের প্রার্থী ছিল মাত্র ৬ জন! জেলা পরিষদে ৩ জন, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ২ জন। কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতি ও ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে এসেছে। জেলা পরিষদের তিনটি আসনেও ধুয়েমুছে সাফ সিপিএম। ৬১ নম্বর আসনে তৃণমূল প্রার্থী যেখানে ৫৭,৭৫৭টি ভোট পেয়েছেন, সেখানে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন ৩,৭৯৩টি ভোট। ৬২ নম্বর আসনে তৃণমূলের ঝুলিতে ৪৮,৭৭০টি ভোট আর সিপিএমের ঝুলিতে ১০,১৭১টি ভোট। ৬৩ নম্বর আসনে তৃণমূল প্রার্থী যেখানে ৪৯ হাজার ৫৭টি ভোট পেয়েছেন, সেখানে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন ৯ হাজার ৫০টি ভোট। সব মিলিয়ে তৃণমূলের ভোট যেখানে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৮৪, সিপিএমের ভোট সেখানে মাত্র ২৩ হাজার ১৪!
এই কেশপুরেই ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ২০০৬ সালে জেতেন তিনি জেতেন ৬৬ হাজার ভোটে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের হাওয়া’তেও সিপিএমের রামেশ্বর দোলুই জেতেন ৩৪ হাজার ভোটে। অতীতের আর এক বামদুর্গ গড়বেতার ছবিটাও এক। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এখান থেকে ৬২ হাজার ভোটে জয়ী হন সুশান্ত ঘোষ। ২০১১ সালে ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে সেই গড়বেতায় জেলা পরিষদের তিনটি আসনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ৫৯,৩৯৯। অর্থাৎ কেশপুর-গড়বেতা বদলায়নি। বদলেছে শুধু শাসকের মুখ। |
|
|
|
|
|