কেতুগ্রামে কাঠগড়ায় পুলিশ
শিশুকে খালে ছুড়ে গ্রামে তাণ্ডব
গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের লাঠিপেটা, বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল কেতুগ্রাম থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বিকেলে গুরপাড়া গ্রামের এই ঘটনায় ১৪ জন জখম হন বলে এলাকাবাসীর দাবি। চার শিশু-সহ এগারো জন কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি। ‘তাণ্ডবের’ সময়ে ছ’বছরের এক শিশুকে এক পুলিশকর্মী সেচখালের জলে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। পুলিশ যদিও লাঠি চালানোর কথা মানেনি।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের বিল্লেশ্বর পঞ্চায়েতে এ বার ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিপিএম। ওই পঞ্চায়েতের গুরপাড়া আসনটিও প্রচুর ভোটে জিতেছে সিপিএম। মঙ্গলবার সকাল থেকে দলের কর্মী-সমর্থকেরা বাজি ফাটাচ্ছিলেন। তৃণমূলের অভিযোগ, বাজি ফাটানোর নামে তাদের কর্মীদের বাড়িতে চড়াও হচ্ছিল সিপিএমের লোকেরা। ‘অত্যাচারের’ হাত থেকে বাদ যায়নি এক সিভিক পুলিশকর্মীর পরিবারও। এই খবর কেতুগ্রাম থানায় পৌঁছনোর পরেই এক এসআই-এর নেতৃত্বে র্যাফ ও পুলিশ গ্রামে যায়। অভিযোগ, গ্রামে পৌঁছেই পুলিশ সিপিএম কর্মীদের উপরে লাঠি চালাতে শুরু করে। আহত ১৪ জনকে মঙ্গলবার রাতেই কেতুগ্রাম ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। ১১ জনকে সেখান থেকে বুধবার সকালে কাটোয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে আহতেরা।
সিপিএমের দাবি, আহতেরা সকলেই তাদের কর্মী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ তাড়া করায় সন্তোষ মাঝি নামে এক সিপিএম কর্মী লুকিয়ে পড়ে। বাড়ি গিয়েও সন্তোষকে না পেয়ে পুলিশ তাঁর স্ত্রী ফুলি মাঝিকে লাঠি দিয়ে মারে। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ফুলিদেবী বাড়ি লাগোয়া সেচখালে ঝাঁপ মারেন। ফুলিদেবীর অভিযোগ, “আমার মেয়ে তখন দাওয়ায় বসেছিল। এক পুলিশকর্মী তাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে সেচখালে ফেলে দেয়। এমন করবে স্বপ্নেও ভাবিনি!” তিনি জানান, কিছুক্ষণ পরে সেচখালের পাড় ধরে খানিকটা গিয়ে জল থেকে উঠে পড়েন। তার পরে পাশের গ্রামে চলে যান। তাঁর ছ’বছরের মেয়ে সুমিতা মাঝি কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকদের ধারণা, জলে অনকেক্ষণ থাকার জন্য তার সর্দি-জ্বর হয়েছে। বুধবার সকালেও ভয়ে কাঁপছে সুমিতা। সে বলে, “পুলিশ আমাকে জলে ফেলে দিয়েছিল।”
বুধবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের উপরে বেজায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ বাড়ি ঢুকে ভাঙচুর করেছে। শিশু, মহিলা থেকে অশীতিপর বৃদ্ধাকেউ রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে। দু’পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে বাড়ির বারান্দায় শুয়েছিলেন বন্দনা মাঝি। তাঁর অভিযোগ, “আমি গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করি। মঙ্গলবার বিকেলে হাঁড়ি রেখে রাস্তায় রেখে দাঁড়িয়েছি, সেই সময়ে পুলিশ এসে বেধড়ক মারতে শুরু করে। ঘরে ঢুকেও লাঠিপেটা করেছে আমাকে।” তাঁর ৯ বছরের মেয়ে প্রিয়াঙ্কাও পুলিশের লাঠির ঘা থেকে বাঁচেনি বলে অভিযোগ বন্দনাদেবীর।
সেচখাল থেকে উদ্ধার হওয়া সুমিতা মাঝি।
ওই গ্রামের চন্দনা মাঝি অভিযোগ করেন, পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে শুনে তাঁরা বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আমাদের না পেয়ে শাশুড়িকে মেরেছে পুলিশ।” জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সিপিএমের কেতুগ্রাম ২ লোকাল সদস্য তারক মাঝি। তাঁর অভিযোগ, “পুলিশ লাঠিপেটা করছে শুনে খেত জমি থেকে গ্রামে আসি। তখনই আমাকে মারধর করে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (গ্রামীণ) অভিযোগ করেছি। আহতেরা সুস্থ হলে প্রশাসনের নানা স্তর ও মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ জানাব।”
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস মণ্ডলের আবার দাবি, “আমাদের এক কর্মীর বাড়ি ও সিভিক পুলিশকর্মীর বাড়ি ঘিরে রেখেছিল সিপিএমের লোকেরা। বাড়ির চালে আগুনও ধরিয়ে দেয়। তাই পুলিশ লাঠি চালিয়ে উচ্ছৃঙ্খল সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের সরিয়ে দেয়।” পুলিশ অবশ্য সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদারের দাবি, “আমি থানায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কেতুগ্রাম থানার পুলিশ গুরপাড়া গ্রামে কোনও লাঠি চালায়নি।”

বুধবারের নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.