আপত্তি তুলে নিল বায়ুসেনা
বাগডোগরায় নৈশ উড়ানে সবুজ সঙ্কেত
বাগডোগরা বিমানবন্দরে রাতে বিমান ওঠা-নামার অনুমতি অবশেষে মিলল। এ জন্য সোমবার, ১ জুলাই থেকেই রাত দশটা পর্যন্ত বিমানবন্দর খোলা রাখা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। এত দিন যাত্রী-উড়ানের জন্য বাগডোগরা বিমানবন্দর ব্যবহার করা যেত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া সন্ধের পরে যাত্রীবাহী কোনও বিমানকে সেখানে নামা-ওঠার অনুমতি দেওয়া হচ্ছিল না, প্রয়োজনীয় যাবতীয় পরিকাঠামো মজুত থাকা সত্ত্বেও। বাগডোগরা বিমানবন্দরটি কার্যত বায়ুসেনার অধীনে। সন্ধের পরে সেখানে বিমান ওঠা-নামা করাতে তাদের বাড়তি লোকবল লাগবে। মূলত সে কারণেই বায়ুসেনা-কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আপত্তি তুলে আসছিলেন বলে বিমানবন্দর-সূত্রের খবর।
তবে এ বার সমস্যার নিরসন হয়েছে। এ দিন বায়ুসেনার তরফে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বাগডোগরা বিমানবন্দর খোলা রাখা হচ্ছে। খবরটি এ দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা থেকে যে সব বিমানসংস্থা উড়ান চালায়, আজ মঙ্গলবার বায়ুসেনার সিদ্ধান্ত তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। যদিও তাতে আজ থেকেই বাগডোগরায় নিয়মিত নৈশ উড়ান চালু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, সে জন্য বিমানসংস্থারও বাড়তি লোকবল দরকার, উড়ান-সূচি ঠিক করতেও সময় লাগবে। তা ছাড়া বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকেও বাগডোগরায় অতিরিক্ত অফিসার-কর্মী নিয়োগ করতে হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফেরও অতিরিক্ত লোকবল লাগবে। এ সব করতে এখনও কমপক্ষে এক মাস লাগবে বলে দিল্লি থেকে এক অফিসার জানিয়েছেন।
বাগডোগরায় নৈশ উড়ান চালু করতে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরে যত বার তিনি বাগডোগরা দিয়ে যাতায়াত করেছেন, তত বার খোঁজ নিয়েছেন, কেন রাতের বিমান ওঠা-নামা করানো যাচ্ছে না। জট খোলার লক্ষ্যে একাধিক বার কর্তাদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাগডোগরায় রাতের উড়ান দ্রুত চালু করতে যাবতীয় প্রচেষ্টা চালাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনকে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এক সময়ে কিছু মহলের ধারণা ছিল, বাগডোগরায় রাতে বিমান ওঠা-নামা করাতে হলে বাড়তি জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এ জন্য বিমানবন্দরের পাশে কিছুটা জমি চিহ্নিতও হয়েছিল। কিন্তু সেখানে বসবাসকারী ১৪টি পরিবার বেঁকে বসে। বহু দিন ধরে টালবাহানা চলে। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিক ও ডিএম সৌমিত্র মোহনের সঙ্গে বৈঠক করেন। জানা যায়, পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ না-করেই রাতের উড়ান চালু করা যেতে পারে। কারণ, আগে থেকেই বাগডোগরায় সেই পরিকাঠামো রয়েছে।
তার পরে রাজ্যের তরফে উদ্যোগ আরও জোরদার হয়। কথা বলা হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর: বিমান পরিবহণের জাতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ-র প্রধান অরুণ মিশ্রও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের এই আইএএস অফিসার বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে নানা সময়ে দরবার করেছেন।
এ সবেরই ফলশ্রুতি এ দিনের সবুজ সঙ্কেত। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবু এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিত দিল্লিতে নানা মন্ত্রকে যোগাযোগ করে যাবতীয় জটিলতা কাটাতে ভূমিকা নিয়েছিলেন। বাগডোগরায় রাতে দেশ-বিদেশের উড়ান চালু হলে শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় পর্যটন-সহ নানা শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটবে।” খবর শুনে পাহাড়ের জিটিএ-কর্তারাও উচ্ছ্বসিত। জিটিএ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রোশন গিরির মন্তব্য, “পাহাড়বাসীর কাছে বিরাট খুশির খবর। আমাদের বহু দিনের ইচ্ছে পূরণ হতে চলেছে।” সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “আমি বহু বার বিষয়টি নিয়ে বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। শেষ পর্যন্ত এটা হলে আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। এর পরে এখান থেকে কাঠমান্ডু ও ঢাকা উড়ান চালু হলে দারুণ ব্যাপার হবে।” উত্তরবঙ্গের বণিক সংগঠন ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)-এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস এবং স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে রাজ বসুও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বাধা কেটেছে। এ বার কবে বাগডোগরায় রাতের উড়ান চালু হয়, সকলে তারই প্রতীক্ষায়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.